‘আমাকে ধনী ছেলেদের বিয়ে করতে হবে না, আমিই ধনী’

কুদরত উল্লাহ
২৬ অক্টোবর ২০২৫, ২২:২৩
শেয়ার :
‘আমাকে ধনী ছেলেদের বিয়ে করতে হবে না, আমিই ধনী’
ছবি : সংগৃহীত।

চীনের জনপ্রিয় প্রভাবশালী মডেল, অভিনেত্রী ও গায়িকা হিসেবে ফ্যান বিংবিং-এর শোবিজ জগতে অনেক পরিচিত নাম। নিপুণ অভিনয়ের মাধ্যমে পেয়েছেন তারকাখ্যাতি। ‘আয়রন ম্যান’ ও ‘এক্স ম্যান’ ফ্র্যাঞ্চাইজির তারকাকে ২০১৫ সালে টাইম ম্যাগাজিন ‘জনপ্রিয় অভিনেত্রী’র তকমা দেন।

টুইটার ও চীনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ওয়েইবোতে তার ফলোয়ার ৬ কোটি ৫০ লাখেরও বেশি। লালগালিচা, মুভি প্রিমিয়ার ও ফ্যাশন শোতে সরব উপস্থিতির জন্য তাকে ‘ফ্যাশন আইকন’ ও ‘মহারানি’ বলা হয়ে থাকে।

সম্প্রতি মালয়েশিয়ার ‘ভিজিট মালয়েশিয়া ২০২৪’ প্রচারণার অংশ হিসেবে কাজ করেছেন এবং সেখানে 'পর্যটন দূত' হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। এছাড়া, তিনি ‘গ্রিন নাইট’ নামে একটি হংকংয়ের চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।

ফ্যান বিংবিং চীনের উচ্চ বেতনভুক্ত এবং প্রভাবশালী অভিনেত্রী এবং গায়িকাদের একজন। তিনি প্রথমে তাইওয়ানে নির্মিত টেলিভিশন ধারাবাহিক 'মাই ফেয়ার প্রিন্সেস'-এ অভিনয় করে সাফল্য অর্জন করেন। পরে তিনি চীনের মূল ভূখণ্ডে হুয়াই ব্রাদার্সের সাথে কাজ শুরু করেন এবং তাদের সাথে বেশ কয়েকটি চীনা টেলিভিশন ধারাবাহিকে অভিনয় করেন।

২০০৩ সালে চীনের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ‘সেল ফোন’-এর মাধ্যমে চীনের স্টাইল আইকন হিসাবে পরিচিতি পান তিনি। তবে বিশ্বব্যাপী তার পরিচিতি আসে ২০১৪ সালে ‘এক্স-মেন’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পর।

তিনি নিয়মিত চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করার পর, ফ্যান বিংবিং স্টুডিওর ব্যানারে নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা চালু করেন। তিনি তার বাবা-মা দ্বারা পরিচালিত আর্টস স্কুলে অধ্যক্ষের পদও গ্রহণ করেন এবং টেলিভিশন ধারাবাহিক প্রযোজনাকারী একটি ওয়েব মুভি গ্রুপের টিম লিডার হন। তিনি ‘চ্যালেঞ্জার্স অ্যালায়েন্স’ রিয়েলিটি শোতে অংশগ্রহণ করেছেন এবং কয়েকটি বৈচিত্র্যময় অনুষ্ঠানে জুরি হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন।

তার প্রথম স্টুডিও অ্যালবাম ‘জাস্ট বেগান’ চীনে সুপারহিট হয়েছিল। তিনি ‘চীনের ৫০ জন সুন্দরী’-এর তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং ‘ফোর্বস চাইনিজ সেলিব্রিটি তালিকা'-তে শীর্ষে ছিলেন। তিনি 'হার্ট আলি' শীর্ষক প্রকল্পের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, যা জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত তিব্বতি শিশুদের সাহায্য করে। তিনি তার উপার্জন থেকে দাতব্য প্রতিষ্ঠানে বিপুল পরিমাণ অর্থ দান করেছেন।

তার সৌন্দর্য অনস্বীকার্য। রূপের প্রধান আকর্ষন হাসি ভরা মুখ ও টানা টানা চোখ। কিন্তু এমন আরও অনেক অভিনেত্রী আছেন চীনে, তাদেরকে ছাড়িয়ে গিয়েছেন তিনি।

ফ্যান বিংবিং কেবল বিখ্যাত ও সফল হয়েছেন ‘মাই ফেয়ার প্রিন্সেস’-এ তার অ্যালবাম দিয়ে আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে। তবে গায়িকা থেকেও তিনি একজন নায়িকা এবং সম্মানিত ব্যক্তিত্ব হিসেবেও বিবেচিত হয়ে থাকেন চীনে।

যখন লোকেরা জিজ্ঞাসা করে যে তিনি কি অন্যান্য অনেক অভিনেত্রীর মতো ধনী ব্যবসায়ীদের বিয়ে করতে যাচ্ছেন, তখন তিনি বলেন, ‘আমাকে ধনী ছেলেদের বিয়ে করতে হবে না, আমিই ধনী)। তার স্পষ্টবাদী ব্যক্তিত্ব মানুষকে মোহিত করে, তিনি আমাদের মনে করিয়ে দেন যে তিনি একজন কঠোর মহিলা।

তিনি কাজকে ভালোবাসেন প্রচুর। ‘দ্য এমপ্রেস অফ চায়না’ সিনেমা শুটিংয়ের সময় তার ঠাণ্ডা লেগে যায় এবং তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। কিন্তু তিনি বিশ্রাম নিতে অস্বীকৃতি জানান, দাবি করেন যে এটি অন্যদের জন্য খারাপ হবে, তাই তিনি শুধুমাত্র ডাক্তারের কাছে স্যালাইন ড্রিপ চেয়েছিলেন। তবুও শুটিং বাদ দেননি।

জানা যায়, ফ্যান হিংবিং প্রতিদিন দুটি ভিন্ন কাজ করেন, দিনের বেলায় তিনি একটি শুটিং এলাকায় যান এবং রাতে অন্য একটিতে। এভাবেই তিনি সময় ভাগ করে নিতেন।

তিনি কান চলচ্চিত্র উৎসবে ড্রাগন রোব (সম্রাটের প্রাচীন পোশাক) পড়ার সাহসও করেন তিনি। চলচ্চিত্র উৎসবে এমন পোশার পড়ার সাহস খুব বেশি সেলিব্রিটির হয় না। তবে তার আছে। সে বছর তিনি ব্যাপক আলোচনায় চলে আসেন তার পোশাকের কারণে।

চীনের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের একজন হওয়ার পরও তার একটি কোমল হৃদয় রয়েছে। তার মানব সেবার কাজ নিরবচ্ছিন্নভাবে পালন করে যাচ্ছেন। তার মন কতটা নরম তা বোঝায় যায় একটি ঘটনা জেনে। ‘চ্যালেঞ্জার অ্যালায়েন্স’ সিনেমার শুটিং চলাকালীন সময়ে, তিনি একটি ছোট ছেলেকে উদ্ধার করেন।

যে কি না গাড়ির ধাক্কায় আহত হয়ে রাস্তার পড়েছিল। অভিনেত্রী গাড়ি থামিয়ে নিজে হাসপাতালে নিয়ে যান। তখনকার সময়ে এই বিষয়টি ব্যাপক আলোচনায় চলে আসে। অগণিত দর্শকদের মন জয় করে ফেলেন মুহূর্তেই।

এই অভিনেত্রীর আরও একটি গুণের মধ্যে রয়েছেন, তাকে নিয়ে যদি আপনি সারাদিন কথা বলতে চান, সে শুনবে এবং আপনাকে সময় দেবে। তবে মাঝে কিছুটা সময় বিরতি নিয়েছিলেন তিনি। দর্শকের ভালোবাসায় আবারও নিত্য নতুন গল্পে দেখা মিলবে তার।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৮-১৯৯৯ সালে টিভি পোশাক নাটক সিরিজ "মাই ফেয়ার প্রিন্সেস" দিয়ে পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ায় খ্যাতি অর্জন করেন।

সূত্র: গার্ডিয়ান, রয়টার্স, চায়না ডেইলি

আমাদের সময়/কেইউ