পদোন্নতি চান ‘বৈষম্যের শিকার’ ২৫ ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্তরা

ঢাকার অদূরে ঢাকেবি স্থাপনের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৩৯
শেয়ার :
পদোন্নতি চান ‘বৈষম্যের শিকার’ ২৫ ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্তরা

দেশে যে ২৬টি বিসিএস ক্যাডার রয়েছে, তার মধ্যে প্রশাসন ছাড়া বাকি ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্তরা পদোন্নতি ও সুবিধা দেওয়ার দাবি তুলেছেন। সেই সঙ্গে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ নিয়ে অধ্যাদেশ জারির দাবি জানানো হয়েছে। গতকাল শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরেন ‘বৈষম্যবিরোধী অবসরপ্রাপ্ত ২৫ ক্যাডার সমন্বয় পরিষদ’-এর সমন্বয়ক আহমেদ আলী চৌধুরী ইকবাল।

প্রশাসন ক্যাডার ব্যতীত ২৫ ক্যাডারের বৈষম্যের শিকার অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি ও সুবিধা প্রদান, আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশসমূহ নিয়ে অধ্যাদেশ জারি করা এবং ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ৭ কলেজের স্বকীয়তা বজায় রেখে শিক্ষার মানোন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনামলে বৈষম্যের শিকার কর্মকর্তাদের বঞ্চনা লাঘবের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ প্রক্রিয়ায় প্রশাসন ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত ও প্রয়াত মিলে প্রায় ৭৭৮ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অথচ বাকি ২৫টি ক্যাডারের বঞ্চিত অবসরপ্রাপ্ত মাত্র ৭২ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়। যাচাই-বাছাইয়ের নামে প্রকৃতপক্ষে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা কোনো কারণ ছাড়াই বাদ পড়ে যান। অধিকন্তু অবসরপ্রাপ্ত ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তার ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির আদেশেও বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। এ সময় তারা ২৫ ক্যাডারের বঞ্চিত সব কর্মকর্তার আবেদনগুলো পুনর্বিবেচনা এবং প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতো ভূতাপেক্ষ বেতনভাতাসহ সব আর্থিক সুবিধা প্রদানের জোর দাবি জানান।

আহমেদ আলী চৌধুরী ইকবাল বলেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশকে আড়াল করে, অত্যন্ত কম গুরুত্বপূর্ণ ও অযৌক্তিক কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে জুলাই সনদকে দুর্বল করা হয়েছে। এর একটি হলোÑ সিভিল সার্ভিসে নিয়োগের জন্য তিনটি পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন। সরকারি কর্মকমিশন (সাধারণ); সরকারি কর্ম কমিশন (শিক্ষা) ও সরকারি কর্ম কমিশন (স্বাস্থ্য) এবং অপরটি হলোÑ হিসাব বিভাগ থেকে নিরীক্ষা বিভাগ আলাদাকরণ। যদি হিসাব বিভাগকে নিরীক্ষা বিভাগ থেকে পৃথক করা হয়, তবে প্রি-অডিট কার্যক্রম বিলুপ্ত হবে, যা আর্থিক জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, একটি মেধাভিত্তিক সিভিল সার্ভিস গঠনে উপসচিব পদে কোটা বাতিল করে সব ক্যাডার থেকে পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছে অনেকেই। কিন্তু জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন উপসচিব পর্যায়ের মোট পদের প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ এবং অবশিষ্ট ২৫ ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ পদ রাখার সুপারিশ করেছে, যা জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে সাংঘার্ষিক। জুলাই সনদেও এ বিষয়ের কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

২৫ ক্যাডার সমন্বয় পরিষদের সমন্বয়ক আরও বলেন, ঢাকা মহানগরীর ঐতিহ্যবাহী সাতটি কলেজ নিয়ে শিক্ষা খাতে নতুন সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মতভেদ তৈরি হয়েছে। দেশসেরা কলেজগুলো বন্ধ করে অনুমাননির্ভর বা পরীক্ষামূলক কোর্স পরিচালনা সঠিক নয়। তাই শিক্ষা বিষয়ে বিশেষজ্ঞগণের সুপারিশের আলোকে এবং অংশীজনদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ৫টি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থী, ৭ কলেজের অধিকাংশ নারী শিক্ষার্থী, শিক্ষক সমাজ, তিতুমীর কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় আন্দোলন গ্রুপ, ৭ কলেজ অ্যালামনাই, সচেতন অভিভাবক শ্রেণি, ইডেন এবং বদরুন্নেসার নারী শিক্ষার্থীদের সম্মানিত অভিভাবক, শিক্ষাবিদসহ সমাজের সব অংশীজনের মতামতের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র গুটিকয়েক শিক্ষার্থীর ঢাকেবি প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে কোনো অবস্থায়ই সমর্থন করা যায় না। আশা করি কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপই নেবে।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, কমিটি তাদের কার্যপরিধির বাইরে গিয়ে স্কুলিং পদ্ধতির এক হাইব্রিড টাইপের মডেলের খসড়া অধ্যাদেশ উপস্থাপন করেছে, যা তাদের এখতিয়ারবহির্ভূত।

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার যা চায় : প্রস্তাবিত খসড়া অধ্যাদেশ বাতিল করে সাত কলেজের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে ঢাকার অদূরে সুবিধাজনক স্থানে ঢাকেবি স্থাপন করে সাত কলেজকে তার অধিভুক্ত করা এবং কলেজগুলোর শিক্ষার মান উন্নত করা।