চলনবিলের সিধুলাই ভাসমান স্কুল পেল ইউনেস্কো পুরস্কার

পাবনা প্রতিনিধি
২৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৪০
শেয়ার :
চলনবিলের সিধুলাই ভাসমান স্কুল পেল ইউনেস্কো পুরস্কার

মর্যাদাপূর্ণ ‘ইউনেসকো কনফুসিয়াস সাক্ষরতা পুরস্কার ২০২৫’ পেল চলনবিলের সৌরচালিত সিধুলাই ভাসমান স্কুল। গত ২৭ সেপ্টেম্বর চীনে ২০তম পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে স্কুলের পক্ষে ট্রফি ও সনদ গ্রহণ করেন সিধুলাই ভাসমান স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রকৌশলী মোহাম্মদ রেজোয়ান। শিক্ষায় নতুন উদ্ভাবন ও জীবনব্যাপী শিক্ষার প্রসারে এটি বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ সম্মান, যা চীনা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দেওয়া হয়। শুক্রবার রাতে সিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থার পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

সূত্র জানায়, বিশ্বজুড়ে শত শত মনোনয়নের মধ্যে ইউনেসকো তিনটি উদ্যোগকে বিজয়ী হিসেবে নির্বাচন করেছে। যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের সিধুলাই ভাসমান স্কুল, আয়ারল্যান্ডের লার্ন উইথ নালা ই-লার্নিং এবং মরক্কোর সেকেন্ড চান্স স্কুল অ্যান্ড ইনক্লুসিভ এডুকেশন প্রোগ্রাম।

বাংলাদেশের রেজোয়ান তার প্রতিষ্ঠান সিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থার পক্ষে ট্রফি ও সনদ গ্রহণ করেন। ছোটবেলায় তিনি চলনবিল এলাকায় বড় হয়েছেন, যেখানে প্রতিবছর বন্যায় স্কুল বন্ধ হয়ে যেত। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই ২০০২ সালে তিনি উদ্ভাবন করেন এক অনন্য সমাধান স্থানীয় নৌকাকে স্কুলে রূপান্তর, যা বিশ্বের সর্বপ্রথম ভাসমান স্কুল হিসাবে পরিচিত। আজও এসব সৌরচালিত নৌকা স্কুল, লাইব্রেরি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে, যা বর্ষায় পানিবেষ্টিত গ্রামগুলোতেও বছরজুড়ে শিক্ষা চালিয়ে যেতে সাহায্য করছে। প্রত্যন্ত চলনবিলের সুবিশাল জলরাশি থেকে জন্ম নেওয়া এক স্থানীয় উদ্ভাবন আজ সাক্ষরতা, ডিজাইন ও টেকসই ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনায় প্রেরণা জোগাচ্ছে।

ইউনেসকো এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেছে, বন্যাপ্রবণ অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্থানীয়ভাবে তৈরি উদ্ভাবনী উপায়ে সাক্ষরতা শিক্ষা পৌঁছে দেওয়াই এই ভাসমান স্কুলের সাফল্য। সিধুলাইয়ের ভাসমান স্কুলের মডেল এখন বাংলাদেশের বিভিন্ন এনজিও অনুসরণ করছে এবং এটি এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার অনেক দেশকে একই ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়নে অনুপ্রাণিত করেছে। বাংলাদেশ সরকার রেজোয়ানের ভাসমান স্কুলকে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা ২০৫০-এ অন্তর্ভুক্ত করেছে।

চাটমোহর উপজেলার বরদানগর ভাসমান স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির সাদিয়া খাতুন, ইব্রাহিম হোসেনসহ শিক্ষার্থীরা এই পুরস্কার পাওয়ায় খুশি এবং তারা আরও ভালো করে পড়ালেখা করে স্কুলের সুনাম বজায় রাখবে বলে অনুভূতি ব্যক্ত করে।

বরদানগর ভাসমান স্কুলের শিক্ষিকা রওশন আরা পারভীন বলেন, আমাদের এই ভাসমান স্কুল ‘ইউনেসকো কনফুসিয়াস সাক্ষরতা পুরস্কার ২০২৫’ পাওয়ায় আমরা আনন্দিত এবং গর্বিত। আগামীতে পড়ালেখা মান আরও ভালো করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। এ জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।

সিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থা প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজমুল হুদা জানান, ‘বর্তমানে চলনবিল এলাকায় ২৬টি নৌকাতে এই ভাসমান স্কুলের পাঠদান করা হয়ে থাকে। প্রতিটি নৌকাতে ৩টি করে শ্রেণি রয়েছে। একটি নৌকার ৩০ জন করে শিক্ষার্থী ক্লাস করে থাকে।

সিধুলাই ভাসমান স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রকৌশলী মোহাম্মদ রেজোয়ান বলেন, শিক্ষা শুধু পড়ালেখা নয়, এটি শান্তি, সমতা ও সহনশীলতা গড়ে তোলে। আমি আশা করি, সাক্ষরতা ও জ্ঞানের শক্তি দিয়ে আমাদের তরুণরা এমন এক ভবিষ্যৎ তৈরি করবে, যেখানে কোনো দুর্যোগই কোনো শিশুর শিক্ষাকে থামাতে পারবে না।