নারীর বেশে আফগানিস্তানের পাহাড় থেকে পাকিস্তানে পালান বিন লাদেন
২০০১ সালে টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার পর আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেনকে ধরতে আফগানিস্তানের তোরা বোরা পাহাড়ে অভিযান চালায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী। তবে সেসময় মার্কিন বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে নারীর ছদ্মবেশে আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানে পালিয়ে যান বিন লাদেন। সম্প্রতি ভারতের সংবাদমাধ্যম এএনআইকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এমন দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) সাবেক কর্মকর্তা জন কিরিয়াকু।
১৫ বছর সিআইএতে কাজ করা ও পাকিস্তানে সিআইএ’র সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের প্রধান হিসেবে কাজ করা কিরিয়াকু জানিয়েছেন, তারা জানতেন না যে (যুক্তরাষ্ট্রের) সেন্ট্রাল কমান্ডের কমান্ডারের দোভাষী মূলত একজন ‘আল-কায়েদা সদস্য’ যিনি মার্কিন সেনাবাহিনীতে অনুপ্রবেশ করেছিলেন।
কিরিয়াকু বলেন, ‘প্রথমত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেই সময় সক্রিয় হওয়ার বদলে প্রতিক্রিয়াশীল ছিল। আপনার মনে আছে, আফগানিস্তানে বোমা হামলা শুরু করার আগে আমরা এক মাসেরও বেশি সময় অপেক্ষা করেছিলাম। আমরা চিন্তাভাবনা করে কাজ করেছি। আমরা চেষ্টা করছিলাম যাতে আবেগ আমাদের বিচারবুদ্ধিকে ম্লান না করে এবং আমরা এক মাস অপেক্ষা করেছিলাম যতক্ষণ না আমরা এই অঞ্চলে যথাযথভাবে প্রস্তুতি না নিতে পারি। তারপরে আমরা আল-কায়েদার ঘাঁটিগুলোতে আক্রমণ শুরু করি। সেগুলো আবার বেশিরভাগই দক্ষিণ এবং পূর্ব আফগানিস্তানের পশতু অঞ্চলে। আমরা ২০০১ সালের অক্টোবরে বিশ্বাস করেছিলাম যে ওসামা বিন লাদেন এবং আল-কায়েদার নেতারা তোরা বোরা পাহাড়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।’
আরও পড়ুন:
রোগীর পেটে জীবন্ত মাছি!
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা জানতাম না যে সেন্ট্রাল কমান্ডের কমান্ডারের অনুবাদক আসলে একজন আল-কায়েদা কর্মী ছিলেন এবং যে মার্কিন সেনাবাহিনীতে অনুপ্রবেশ করেছিল। আমরা জানতাম যে আমরা বিন লাদেনকে কোণঠাসা করে ফেলেছি। আমরা তাকে পাহাড় থেকে নেমে আসতে বলেছিলাম। তিনি অনুবাদকের মাধ্যমে বললেন, আপনারা কি আমাদের ভোর পর্যন্ত সময় দিতে পারেন? আমরা নারী ও শিশুদের সরিয়ে নিতে চাই এবং তারপর আমরা নেমে এসে আত্মসমর্পণ করব। অনুবাদক জেনারেল ফ্রাঙ্কসকে (কমান্ডার) এই আহ্বান অনুমোদন করতে রাজি করান। শেষ পর্যন্ত যা ঘটেছিল তা হলো- বিন লাদেন একজন নারীর পোশাক পরে অন্ধকারের মধ্যে একটি পিকআপ ট্রাকের পেছনে পাকিস্তানে পালিয়ে যান।’
তিনি বলেন, ‘ভোরে যখন সূর্যোদয় হয়, তখন তোরা বোরায় আত্মসমর্পণ করার মতো কেউ ছিল না। তারা সবাই পালিয়ে গিয়েছিল এবং তাই আমাদের লড়াই পাকিস্তানে স্থানান্তর করতে হয়েছিল।’
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
পরবর্তীতে আমেরিকা ২০১১ সালের মে মাসে উত্তর পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ শহরে ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে বের করে। ওই বছরের ২ মে মার্কিন বিশেষ বাহিনী বিন লাদেনের সেফ হাউসে অভিযানের সময় তাকে হত্যা করে।