স্তন ক্যানসার সচেতনতা মাসে আসুন, রোগটি প্রতিরোধ করি
নারীদের মধ্যে স্তন ক্যানসার সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এবং প্রতি ৮-১০ জনের মধ্যে ১ জন এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সাধারণত ২৫ বছরের কম বয়সে এ রোগের আশঙ্কা খুব কম। তবে বয়স ৩৫ বছরের বেশি হলে ঝুঁকি বেড়ে যায়। স্তন ক্যানসারের ঝুঁকিপূর্ণ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে কম বয়সে ঋতুবতী হওয়া, দেরিতে ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়া, পারিবারিক ইতিহাসে এ রোগ থাকা, ৩০ বছর পর প্রথম সন্তান জন্ম দেওয়া অথবা নিঃসন্তান থাকা, বেশি পরিমাণে চর্বিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ এবং শাকসবজি কম খাওয়া, অতিরিক্ত মদ্যপান, শিশুকে বুকের দুধ না দেওয়া এবং দীর্ঘদিন হরমোন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার। স্তনে গুটি বা চাকা দেখা দিলে, স্তন ফুলে যাওয়া, আকারে পরিবর্তন, ত্বকে গর্ত বা শুষ্কতা দেখা দিলে, বগলে গুটি অনুভূত হলে বা স্তনে ব্যথা ও অস্বাভাবিক স্রাব হলে অবশ্যই সতর্ক হওয়া উচিত। এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা নিলে ৯০ শতাংশের বেশি রোগী সুস্থ হয়ে যেতে পারে।
রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রতিমাসে নিজেই স্তন পরীক্ষা করা প্রয়োজন, যা বিছানায় শুয়ে এবং আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সহজেই করা যায়। স্তনে গুটি, ফুলে যাওয়া, আকারে বিকৃতি, ত্বকে পরিবর্তন, বোঁটা সেঁধিয়ে যাওয়া, ব্যথা কিংবা অস্বাভাবিক নিঃসরণ ইত্যাদি লক্ষণ থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসার জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ম্যামোগ্রাফি, এফএনএসি (সিরিঞ্জের মাধ্যমে টিস্যু সংগ্রহ) এবং বায়োপসি (অপারেশনের মাধ্যমে টিস্যু পরীক্ষা) করানো হয়।
স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা মূলত শল্যচিকিৎসা, রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি এবং ইমিউনোথেরাপির সমন্বয়ে পরিচালিত হয়। শল্যচিকিৎসায় স্তন বা টিউমারসহ আক্রান্ত অংশ কেটে ফেলা হয়। রেডিওথেরাপিতে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিকিরণ দিয়ে ক্যানসার কোষ ধ্বংস করা হয়। কেমোথেরাপিতে ক্যানসার নাশক ওষুধ ব্যবহার করা হয়। হরমোন থেরাপি দিয়ে হরমোন রিসেপ্টর পজিটিভ রোগীর দীর্ঘদিন চিকিৎসা দেওয়া হয়, যা টিউমার ছড়ানো রোধ করে। টার্গেটেড থেরাপি এবং ইমিউনোথেরাপি শরীরের নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একাধিক চিকিৎসা একসঙ্গে ব্যবহার করা হয়।
স্তন ক্যানসারের পাঁচ বছর বেঁচে থাকার হার রোগের ধাপ অনুযায়ী বিভিন্ন, ধাপ ১ ও ২-এ এই হার শতভাগ, ধাপ ৩-এ ৯৩ শতাংশ, ধাপ ৪-এ ৯২ শতাংশ এবং ধাপ ৫-এ ২২ শতাংশ। এই তথ্য থেকে স্পষ্ট যে, রোগটি প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে নিরাময় সম্ভব এবং আশার আলো রয়েছে। অতএব স্তন ক্যানসারের বিরুদ্ধে আতঙ্কে ভোগার চাইতে সচেতন হওয়া জরুরি। নিয়মিত পরীক্ষা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণে এই রোগকে প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। রোগের এক তৃতীয়াংশ প্রতিরোধযোগ্য, এক তৃতীয়াংশ নিরাময়যোগ্য এবং বাকি অংশে ব্যথা ও অস্বস্তি কমিয়ে জীবনমান উন্নত করা সম্ভব। সবাইকে স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে সচেতন হতে এবং নিয়মিত পরীক্ষা করাতে উৎসাহিত করা উচিত।
লেখক : রেডিয়েশন ও মেডিক্যাল অনকোলজিস্ট
আরও পড়ুন:
চোখের রক্তবর্ণ ধারণের কারণ ও প্রতিকার
অধ্যাপক ও প্রধান, অনকোলজি বিভাগ, এনাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, সাভার/ চেম্বার : আল-রাজি হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা । যোগাযোগ: ০১৭৪৫৩৪৯৪১০, ০১৭৩২৪২৯৩৯০