বেনাপোলে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আসা কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ

বেনাপোল প্রতিনিধি
২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:৫৩
শেয়ার :
বেনাপোলে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আসা কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ

বেনাপোল স্থলবন্দরের কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল থেকে মিথ্যা ঘোষণায় প্রায় কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা ১১ লাখ পিস ব্লেডসহ বিভিন্ন পণ্যের চালান জব্দ করেছে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। গত ২৫ দিন ধরে ভারতীয় পণ্যবোঝাই তিনটি ট্রাক টার্মিনালে আটকে ছিল।

বুধবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বেনাপোল কাস্টমস হাউসের সহকারী কমিশনার সাকিব রায়হানের নেতৃত্বে একটি তদন্ত দল বন্দরের ৪২ নম্বর শেডে আনলোড ও পরীক্ষণ শেষে এসব পণ্য জব্দ করা হয়।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ সেপ্টেম্বর মেসার্স আশিকুল ইসলাম অ্যান্ড সন্স নামের এক আমদানিকারক ভারত থেকে ৩০ হাজার ৮৩৮ কেজি ওজনের ‘স্টিল আইটেম অ্যান্ড আদার্স’ ঘোষণা দিয়ে তিনটি ট্রাকে পণ্য আনেন। ভারত থেকে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আমদানির পর বন্দর থেকে খালাসের চেষ্টা করছিল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাজেন্ট মেসার্স হুদা ইন্টারন্যাশনাল। ঘোষণায় উল্লেখিত স্টিল পণ্যের সঙ্গে পাওয়া গেছে ১০ লাখ ৮০ হাজার পিস ব্লেড ও অতিরিক্ত তিনটি প্যাকেজে ঘোষণা বহির্ভূত পণ্য। যেখানে সরকার প্রায় কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছিল।

বেনাপোল স্থলবন্দরের ৪২ নম্বর শেডের ইনচার্জ আমিনুর রহমান জানান, তাদের রেকর্ড অনুযায়ী ট্রাকগুলো ঘোষণাপত্রে ‘স্টিল আইটেম অ্যান্ড আদার্স’ হিসেবে উল্লেখ ছিল।

সরকারি গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, মূল ডকুমেন্টটি পরে পরিবর্তন করে নতুন (জাল ডকুমেন্ট) নথিতে ৯ লাখ ব্লেড দেখানো হয়। সেখানে অতিরিক্ত পাওয়া গেছে ১০ লাখ ৮০ হাজার পিস ব্লেড। কাস্টমসের নীরবতার কারণে অনিয়ম করতে সুযোগ পায় এসব ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, এনএসআইয়ের সুনির্দিষ্ট তথ্যে এমন জালিয়াতি ধরা পড়লেও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের ২৫ দিনের দীর্ঘ নীরবতা ও বিলম্বে পরীক্ষণ নিয়ে তীব্র প্রশ্ন উঠেছে। এখানে কাস্টমসের কিছু অসাধু কর্মকর্তারা ইচ্ছাকৃতভাবে ২৫ দিন ধরে আমদানিকারককে সময় দিয়েছেন পুরোনো নথি গায়েব করে নতুন নথি তৈরির জন্য। বেনাপোল বন্দরে এই ঘটনা শুধু একটি  নয়। এরকম অহরহ হয়ে থাকে। এটি কাস্টমস প্রশাসনের ভেতরের কিছু অসাধু কর্মকর্তার বহুদিনের অনিয়ম, দুর্বলতা ও দায়হীনতা যা সরকারের রাজস্ব নিরাপত্তার জন্য বড় সতর্ক সংকেত।

এদিকে গত ২৩ সেপ্টেম্বর বেনাপোল বন্দরে ভারতীয় ট্রাক চালকের ফেলে পালিয়ে যাওয়া ট্রাকটি এখনো তল্লাশি করে তার তথ্য প্রকাশ করেনি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এতে কাস্টমসের ন্যায়-নীতি নিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ী মহলে প্রশ্ন উঠেছে।

বেনাপোল বন্দরের পরিচালক শামীম হোসেন জানান, মিথ্যা ঘোষণায় আনা ভারতীয় পণ্যবোঝাই তিনটি ট্রাক জব্দ করেছে কাস্টমস। জব্দ করা এসব পণ্য বন্দরের হেফাজতে রাখতে নির্দেশ দিয়েছে কাস্টমস। অবৈধ পণ্য চালানের পাচার ঠেকাতে গত ১৬ অক্টোবর থেকে বেনাপোল বন্দরে দুই জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানান বন্দরের এই কর্মকর্তা।

আমাদের সময়/আরডি