সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হতে পারে আজ

বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ফের বৈঠক ঐকমত্য কমিশনের ।। বাস্তবায়নে সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোটের পরামর্শ

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৩৪
শেয়ার :
সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হতে পারে আজ

জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া প্রস্তাব ইতোমধ্যে জমা দিয়েছে বিশেষজ্ঞ প্যানেল। প্রস্তাবে আদেশের নাম ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান) আদেশ’ হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সংবিধান বিশেষজ্ঞদের এই খসড়া প্রস্তাব নিয়ে তাদের সঙ্গে গতকাল বুধবার আবারও সভা করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তবে কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। আলোচনায় জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, গণভোটের বিষয় ও সনদের বিভিন্ন প্রস্তাবের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর দেওয়া ‘নোট অব ডিসেন্ট’ গুরুত্ব পেয়েছে। জানা গেছে, কমিশন সাংবিধানিক আদেশের ওপর গণভোট ও আগামী সংসদের দ্বৈত ভূমিকা প্রস্তাব দেওয়ার কথা ভাবছে।

এ বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা চলছে। ইতোমধ্যে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে একাধিক খসড়া প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে আলোচনা শেষে প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হবে। আজকালের মধ্যে তা সুপারিশ আকারে সরকারের কাছে পাঠানো হবে। তবে এসব বিষয়ে সরকারই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে তিনি জানান।

জানা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা এবং বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক প্রতিনিধিদের মতামতের ভিত্তিতে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ইতোমধ্যে ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোটের মধ্যে ২৫টি দল জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছে। তবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ঐকমত্যের সংলাপে অংশ নিলেও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের

আইনি ভিত্তি ‘স্পষ্ট’ না হওয়ায় স্বাক্ষর অনুষ্ঠান বর্জন করে। এ ছাড়া ইতিহাস ‘সঠিকভাবে না আসা’ এবং সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তন নিয়ে আপত্তির কারণে বামধারার চারটি দল সনদে স্বাক্ষর করেনি। তবে তাদের স্বাক্ষর করানোর বিষয়ে কমিশন পক্ষ থেকে যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত করতে বিশেষজ্ঞ মতামত গ্রহণসহ অন্যান্য কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

কমিশন সূত্র জানায়, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে গত সপ্তাহে কমিশনের সঙ্গে বিশেষজ্ঞ প্যানেলের আলোচনা হয়। এ সংক্রান্ত খসড়া প্রস্তাব দেওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞ প্যানেলকে অনুরোধ জানানো হয়। বিশেষজ্ঞ প্যানেলের দেওয়া খসড়া প্রস্তাব নিয়ে গতকাল কমিশনের বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। খসড়া প্রস্তাবে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির প্রশ্নে সাংবিধানিক আদেশ জারির কথা বলা হয়েছে। এর ভিত্তিতে গণভোটের প্রস্তাব করা হয়েছে। খসড়ায় কীভাবে, ওই আদেশ জারি হবে এবং আদেশের ওপর কীভাবে গণভোট হবে, তাও উল্লেখ করা হয়েছে। এসব বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে দুয়েক দিনের মধ্যে সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দিতে চায় ঐকমত্য কমিশন।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান) আদেশ’ নামে সাংবিধানিক আদেশ জারির প্রস্তাব করা হয়েছে। আদেশটি সংবিধান ও অন্যান্য আইনের পরিপূরক হবে। এ আদেশের ভিত্তি হবে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান। গণ-অভ্যুত্থানের ক্ষমতা বলে বিশেষ পরিস্থিতিতে এ আদেশ জারি করা হবে। আদেশের পরিশিষ্টে থাকবে জুলাই জাতীয় সনদ। ওই আদেশের পর গণভোট হবে। তবে সংবিধানিক আদেশ কে জারি করবেন, তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি। একইভাবে নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি ও ভিন্নমত) থাকা প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন আদেশে কীভাবে অন্তর্ভুক্ত হবে, তা চূড়ান্ত হয়নি।

জানা গেছে, গণভোটে ভোটারদের জন্য একটিই প্রশ্ন রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে ‘আপনি জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ সমর্থন করেন কিনা?’Ñ এমন প্রশ্ন রাখা যেতে পারে। তবে ঐকমত্য হওয়া বিষয়গুলো নিয়ে একটি প্রশ্ন ও নোট অব ডিসেন্ট থাকা প্রস্তাবগুলো নিয়ে আরেকটি প্রশ্ন রাখার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গণভোটে জনগণের অনুমোদন পেলে, এই আদেশে উল্লিখিত বিধান অনুযায়ী, আগামী সংসদে সংস্কার কার্যকর করতে হবে। এ জন্য আগামী সংসদের দ্বৈত ভূমিকা রাখার প্রস্তাব করা হবে। জুলাই সনদ অনুযায়ী সংবিধান সংস্কার বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত সংসদ একই সঙ্গে ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। তবে গণভোট কখন হবে, সে বিষয়ে জাতীয় নির্বাচনের আগে ও জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে, দুই ধরনের প্রস্তাব থাকবে। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে সরকার।

এদিকে কমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় ও পদ্ধতি সম্পর্কিত সুপারিশ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পুনরায় সভা করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনস্থ কমিশন কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। সভায় বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এমএ মতিন ও ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক। এ ছাড়া ভার্চুয়ালি অংশ নেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক ও সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ড. শরিফ ভূইয়া।

সভায় জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিভিন্ন সুপারিশ নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে প্রাপ্ত পরামর্শ নিয়েও দীর্ঘ আলোচনা হয়। এসব বিষয়ে কমিশন সদস্য আজ বৃহস্পতিবার সকালে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করবে। এরপর বেলা ২টায় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আবার আলোচনায় বসবে কমিশন।

এদিকে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি চূড়ান্ত হলে সনদে স্বাক্ষর করতে পারে এনসিপি। এনসিপি নেতাদের সঙ্গে সেই আলোচনা হয়েছে কমিশন সদস্যদের। স্বাক্ষরিত সনদ ও বাস্তবায়ন সুপারিশ সরকারের কাছে পাঠানোর আগেই এনসিপির স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার জানান, সনদ স্বাক্ষরের বিষয়ে কমিশনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এনসিপির পক্ষ থেকে সনদের আইনি ভিত্তিসহ তিন দফা দাবি জানানো হয়েছে। কমিশন ওই তিনটি শর্ত পূরণ করলে আমরা অবশ্যই স্বাক্ষর করব।