ফরিদপুরে আ.লীগের দোসরদের গ্রেপ্তারে প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ‎

ফরিদপুর প্রতিনিধি
২২ অক্টোবর ২০২৫, ২২:১২
শেয়ার :
ফরিদপুরে আ.লীগের দোসরদের গ্রেপ্তারে প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ‎

‎ফরিদপুরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসরদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিলো ছাত্র-জনতা। ‎বুধবার (২২ অক্টোবর) বেলা ১১টায় ফরিদপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ছাত্র-জনতার আয়োজনে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় তারা এই আল্টিমেটাম দেন। 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ২০২৪-এর জুলাই আন্দোলনের ছাত্রনেতা সোহেল রানা। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি ফরিদপুরে প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য এবং সাবেক সংসদ সদস্য জনাব এ কে আজাদ। তার প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে আবারও সেই পুরনো দোসর ও পেটুয়ারা সক্রিয় হয়ে উঠেছে-যারা অতীতে ছাত্র-জনতার রক্ত ঝরিয়েছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই বিপ্লব পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় তিনি আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে মিটিং এবং জনসংযোগ করে আসছিলেন। এ বিষয়ে বারবার তাকে সতর্ক করা হয়েছিল এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছিল। যা ইতিমধ্যে আপনারা সবাই অবগত। এইতো কয়েকদিন আগেই তিনি প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের পদধারী নেতাদের সঙ্গে নিয়ে তার নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেন। যা জুলাই বিপ্লবের চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।’

ছাত্রনেতা সোহেল রানা বলেন, ‘আরও একটি বিষয় লক্ষ্য করেছি আমরা। উনি নিজের পক্ষে সাফাই গাইতে প্রেসে বললেন যে, তিনি আওয়ামী লীগ করেন না, অথচ তিনি যখন বিভিন্ন গণমাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দেন তার পাশেই বিগত দিনের আওয়ামী লীগের পেটুয়া বাহিনীর সক্রিয় সদস্যদের লক্ষ্য করা যায়।’

‎তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এসব কর্মকাণ্ড প্রশাসনের চোখের সামনেই ঘটছে। অথচ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এ কে আজাদের এই কর্মকাণ্ড শুধুমাত্র রাজনৈতিক শিষ্টাচারের পরিপন্থী নয়, এটি গণতন্ত্রবিরোধী শক্তিকে পুনর্বাসনের এক সুস্পষ্ট প্রচেষ্টা। ‎আমরা জানতে চাই- ফরিদপুরের মাটিতে আবারও কি সেই স্বৈরাচারী ও দমননীতির রাজনীতি ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চলছে?’

‎এই ছাত্রনেতা বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি এ কে আজাদদের অবৈধ ও অসংবিধানিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জনগণ আর কোনোভাবেই আওয়ামী লীগ নামের সন্ত্রাসীদের পুনরুত্থান মেনে নেবে না। যদি আজকের পর থেকেও এই সব কর্মকাণ্ড চলতে থাকে, তাহলে কোনো বিশৃঙ্খলা ঘটলে এর দায় প্রশাসন এবং এ কে আজাদকেই নিতে হবে।’

‎প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আর প্রশাসনকে স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই, বিশেষ করে কোতয়ালী থানা পুলিশ, আপনাদের জনগণ সম্মান করে দ্বিতীয়বার কাজে ফিরিয়ে এনেছে। আপনারা যদি জনগণের সেই কাঙ্ক্ষিত আশা পূরণ করতে না পারেন, জুলাই আন্দোলনে যারা আহত হয়েছে (কেউ হাত, কেউ চোখ, কেউ আবার তার আপনজনকেই চিরতরে হারিয়েছেন) যেই পেটুয়া বাহিনীদ্বারা, সেই বাহিনীর সক্রিয় সদস্যরা যদি এখনো আমাদের সামনে ঘুরে বেড়ায়। তাহলে সালিশ, আর প্রতিদিন থানায় মাছের বাজার বসানোর জন্য আপনাদের চেয়ারে বসানো হয় নাই। যদি পারেন সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগের পেটুয়া বাহিনী ওদের এরেস্ট (গ্রেপ্তার) করেন, আর যদি সেটা করতে লজ্জা পান। তাহলে চেয়ার ছেড়ে চলে যান। আর তা না হলে সম্মান নিয়ে ঘরে ফিরতে পারবেন না। ছাত্র-জনতার জীবন এবং রক্তের ওপরে দাঁড়িয়ে বেইমানি আমরা যতক্ষণ বেচে আছি ততক্ষণ করতে দিব না ইনশাআল্লাহ।’

লিখিত বক্তব্য শেষে তিনি প্রশাসনকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসরদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন।  

‎ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি মুরাদ শেখের সঞ্চালনায় এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ২০২৪-এর জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সক্রিয় সদস্য মেহেদী হাসান, সাইফ খান, ফারহান নাইব ও তামজিদ সিওনসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।

আমাদের সময়/আরডি