ব্যবসায়ী জুয়েল ইসলামের বিরুদ্ধে অনন্ত জলিলের মামলা
ব্যবসায়ী জুয়েল ইসলামের বিরুদ্ধে অনন্ত জলিল মামলা করেছেন। জুয়েল সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার মাটিকোড়া গ্রামের বাসিন্দা। সাভার মডেল থানায় এ মামলা দায়ের করা হয়।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুয়েল মিয়া জানান, মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) মামলাটির তদন্তের ভার উপপরিদর্শক (এসআই) আমির হোসেনকে দেওয়া হয়েছে। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন, তবে আসামি এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হননি।
ঘটনার সূত্রপাত অনন্ত জলিলের এজেআই গ্রুপের সাভারের কারখানা থেকে। আর্থিক টানা পোড়েনের কারণে নিজের কারখানা চালাতে না পেরে অনন্ত জলিল তার গ্রুপ ‘পলো কম্পোজিট নীট ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড’-এর ডাইংয়ের সব সেকশন জুয়েল ইসলামকে ভাড়া দিয়েছিলেন। চুক্তি অনুযায়ী পাঁচ বছর মেয়াদে প্রতি মাসে ভাড়া বাবদ অনন্ত জলিলকে এক কোটি ২০ লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল। চলতি বছরের ১ মে থেকে কার্যকর এই চুক্তির ভিত্তিতে জুয়েল ইসলাম যেন ‘সুঁই হয়ে ঢুকে বেরিয়ে গেছেন ফাল’ হয়ে।
অভিযোগ উঠেছে, জুয়েল ইসলাম দেড় কোটি টাকার ওপরে গ্যাস বিল বকেয়া রেখেছেন। উপরন্তু, তিনি তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির দেওয়া দুটি মিটার টেম্পারিং করে গ্যাস চুরি করেছেন।
গ্যাস চুরির দায় মাথায় নিয়ে এখন নিজেই ইমেজ সংকটে পড়েছেন অনন্ত জলিল। তিতাস গ্যাস কোম্পানি তার সাভারের কারখানার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও টেম্পারিং করা মিটার জব্দ করতে গিয়ে সরকারি কর্মকর্তারা শ্রমিকদের কাছে অবরুদ্ধ হন এবং পরে পুলিশের সহায়তায় উদ্ধার হন।
এদিকে অনন্ত জলিলের পক্ষে এজেআই গ্রুপের মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ ওয়াসিমুল আলম (৫০) বাদী হয়ে জুয়েল ইসলামের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গ, প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করাসহ ভয়ভীতি ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহারে দাবি করা হয়, জুয়েল ইসলাম গ্যাস চুরি করে শুধু অনন্ত জলিলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেননি, পাশাপাশি আত্মসাৎ করেছেন পোলো কম্পোজিট নীট ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের ৮ কোটি ২৭ লাখ ৩৩ হাজার ৫৩০ টাকা।
যোগাযোগ করা হলে অনন্ত জলিল বলেন, ‘জুয়েল ইসলাম আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। পাঁচ মাসের গ্যাস বিল বাকি রেখেছে দেড় কোটি টাকার ওপরে। গত ১৩ অক্টোবর তাকে মোবাইলে ফোন করলে সে সাফ জানিয়ে দেয়, আর ব্যবসা পরিচালনা করবেন না এবং ভাড়ার টাকা চাইলে তা দিতে অস্বীকার করেন ও পারলে আদায় করে নেওয়ার হুমকি দেন। এমনকি কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের বেতন-ভাতাও ঠিকমতো পরিশোধ করেননি তিনি।’
নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে ঢাকাই ছবির এ নায়ক বলেন, ‘আমার হাতে এই মুহূর্তে টাকা নেই। ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য জুয়েলকে বিশ্বাস করে মস্ত বড় প্রতারিত হয়েছি। এখন জুয়েলকে কোথাও খুঁজেও পাচ্ছি না।’
এ ব্যাপারে জুয়েল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে, ‘খোঁজ-দ্য সার্চ’ করে আসামিকে পুলিশ কবে নাগাদ খুঁজে পাবে—এমন প্রশ্নের উত্তরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাভার মডেল থানার একজন কর্মকর্তা হাস্যরসের সঙ্গে বলেন, ‘আমরা তো এতদিন শুনে এসেছি, অসম্ভবকে সম্ভব করাই অনন্ত জলিলের কাজ। তাহলে কি এসব কেবলই কথার কথা!’
আমাদের সময়/আরআর