নতুন কার্গো হাউস ব্যবহারে বকেয়া টাকা চায় ঠিকাদার
অগ্নিকাণ্ডে কার্গো হাউস পুড়ে যাওয়ার পর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালে নবনির্মিত কার্গো হাউস ব্যবহারের উদ্যোগ নেয় বেসমারিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। নতুন হাউসের আমদানি শাখা চালুর জন্য গত রবিবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠিও দেয় সংস্থাটি। কিন্তু চিঠি পেয়ে বকেয়া অর্থ দাবি করে গতকাল পাল্টা চিঠি দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে। প্রতিদিন বিদেশ থেকে আসা কয়েকশ টন পণ্যের হেফাজত-খালাস নিয়ে বিপাকে পড়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ ও আমদানিকারকরা। অন্যদিকে থার্ড টার্মিনালের কার্গো হাউস চালু করতে হলে লাগবে দেশি-বিদেশি তিন সংস্থার সার্টিফিকেট। ফলে নতুন কার্গো হাউস চালু করা নিয়ে দেখা দিয়েছে বড় ধরনের শঙ্কা।
এদিকে আগুন লাগা কার্গো হাউস ভবনটিও ধসে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে ভবনের কিছু অংশের ছাদ ধসে পড়েছে। আবার মালামাল রাখার স্টিলের তৈরি তাকগুলোও সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়েছে। এগুলোর মান যাচাইয়ে আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য আজ মঙ্গলবার বুয়েটে পাঠাবে বেবিচক। এ ছাড়া ঘটনা তদন্তে গতকাল ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বেবিচকের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কার্গো হাউস পুড়ে যাওয়ায় আমদানি করা মালামাল হেফাজত ও খালাস নিয়ে বিপাকে পড়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এ জন্য নবনির্মিত সর্বাধুনিক থার্ড টার্মিনালের কার্গো হাউসটি ব্যবহারের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়ে সহযোগিতা চাওয়া হয়। কিন্তু চিঠি পাওয়ার পর কার্গো হাউস ব্যবহারের অনুমতি না দিয়ে গতকাল উল্টো একটি চিঠি বেবিচককে পাঠায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সেখানে পাওনা টাকা দাবি করা হয়। ফলে নবনির্মিত কার্গো হাউস ব্যবহার করে পণ্য খালাসের বিষয়টি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন আমদানি করা কয়েকশ টন পণ্যের হেফাজত নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
অন্যদিকে, গতকাল বেবিচককে পাঠানো কোরিয়ান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অ্যাভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়ামের (এডিসি) পাঠানো চিঠির একটি অনুলিপি আমাদের সময়ের হাতে এসেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসিওক কিম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, আমদানি কার্গো টার্মিনাল (আইসিটি) নির্মাণকাজ ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে সম্পন্ন হয়েছে। নিয়োগকর্তা নিজস্ব কারণে টেকওভার সার্টিফিকেট জারি করতে বিলম্ব করে। ফলে স্থাপনা ও মূল্যবান সরঞ্জাম ক্ষতির আশঙ্কা এড়াতে স্থাপনা বুঝে নেওয়ার আগ পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিজ খরচে রক্ষণাবেক্ষণ করেছে। এ সম্পর্কিত বিস্তারিত খরচ চলতি বছরের ৬ আগস্ট এক চিঠির মাধ্যমে অবহিত করা হয়েছে। খরচের অর্থ বেবিচক কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করেনি। প্রকল্প সম্পদের সুরক্ষায় ঠিকাদারের সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বেবিচক অতিরিক্ত কাজের জন্য অর্থ পরিশোধ করছে না, যা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। আমরা চুক্তির সব দায়িত্ব পালনের পরও যথাযথ পাওনা পাইনি। এরই মধ্যে গত রবিবার নতুন আমদানি কার্গো ভবন ব্যবহারের বিষয়ে বেবিচকের কাছ থেকে চিঠি এসেছে। ঠিকাদার এই মুহূর্তে কোনো নির্দিষ্ট উত্তর দিতে পারছে না। তাছাড়া ওই চিঠিতে প্রয়োজনীয় সহায়তার বিষয়ে বিস্তারিত এবং স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি।
তবে বেবিচকের এক কর্মকর্তা জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনুমতি দিলেই থার্ড টার্মিনালের কার্গো হাউস চালু করা সম্ভব হবে না। এটা সর্বাধুনিক অটোমেটিক সিস্টেম। সর্বাধুনিক এ কার্গো হাউস চালু করতে হলে দেশি-বিদেশি অন্তত তিন প্রতিষ্ঠানের অনুমতি লাগবে। এটি আন্তর্জাতিক নকশা অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের সার্টিফিকেট লাগবে, সিটি টেক্স থেকে সার্টিফিকেট লাগবে, স্ক্যানার মেশিন ও প্রশিক্ষিত কর্মী লাগবে।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগুন লাগা কার্গো হাউস ভবনের অধিকাংশ অংশ ভস্মীভূত হয়ে গেছে। ভবনের কিছু অংশ ধসে পড়েছে। এটা প্রাথমিকভাবে ব্যবহারের উপযোগী নয়। অগ্নিকাণ্ডের পর ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। সেই আলামত মঙ্গলবার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। তবে কোন প্রক্রিয়ায় এবং কীভাবে পুড়ে যাওয়া কার্গো হাউসের সংস্কার ও নির্মাণকাজ শুরু হবে সে বিষয়ে এখনও বিস্তারিত পরিকল্পনা হয়নি।
এদিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো হাউসে আগুনের ঘটনা তদন্তে এবার পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার গতকাল এক বার্তায় জানিয়েছেন, কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রধান করে গঠিত কমিটিতে বাহিনীর আরও চার কর্মকর্তা রয়েছেন।
গত শনিবার দুপুরে শাহজালালের আমদানি কার্গো হাউসে আগুনের ঘটনা ঘটে। এরপর ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট, পুলিশ, আনসার, র্যাব, এপিবিএন, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২৭ ঘণ্টা পর রবিবার রাত ৯টার কিছু পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনায় পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং শাহজালালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্বে থাকা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। অন্যদিকে দেশে পরপর কয়েকটি বড় অগ্নিকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে একটি ‘কোর কমিটি’ গঠন করেছে সরকার। স্বরাষ্ট্র সচিবকে প্রধান করে গঠিত সাত সদস্যের এ কমিটিকে ৫ নভেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।