‘আমি সেলিব্রেটি-এসব নিউজ দিয়েন না’–গ্যাস চুরি নিয়ে অনন্ত জলিল

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
২০ অক্টোবর ২০২৫, ১৭:৪৩
শেয়ার :
‘আমি সেলিব্রেটি-এসব নিউজ দিয়েন না’–গ্যাস চুরি নিয়ে অনন্ত জলিল

ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত-সমালোচিত নায়ক, প্রযোজক অন্তত জলিলের সাভারের কারখানার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি। অনন্ত জলিলের বিরুদ্ধে ‘গ্যাস বিল বকেয়া এবং গ্যাস মিটার টেম্পারিং’ করার মাধ্যমে গ্যাস চুরির অভিযোগ এনেছে সংস্থাটি।

গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও টেম্পারিং করা মিটার জব্দ করতে গিয়ে বাঁধার মুখে পড়েন সরকারি কর্মকর্তারা। একপর্যায়ে শ্রমিকদের ব্যবহার করে অভিযানকারী দলকে ঘেরাও করে অবরুদ্ধ রাখা হয়। পরে সংস্থাটির উদ্ধর্তন কর্মকর্তারা পুলিশ নিয়ে অবরুদ্ধ দলকে উদ্ধার করে।

গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসির ভিজিল্যান্স টিমের ব্যবস্থাপক আব্দুল আলীম রাসেল।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে এজেআই গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও অভিনেতা অন্তত জলিল বলেন, ‘আমি ফ্যাক্টরি চালাতে না পেরে জুয়েল নামের একজনকে ভাড়া দিয়েছিলাম। সে গ্যাস বিল বকেয়া রেখে এবং মিটার টেম্পারিং করে আমার ভাবমূর্ত্তি নষ্ট করেছে।’

এ বিষয়ে তিনি বলেন,‘আমি একজন সেলিব্রেটি। এসব নিউজ প্রকাশিত হলে আমার ইমেজ সংকট হবে।’

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আর্থিক টানেপোড়েন ও শ্রমিক অসন্তোষের কবলে পড়ে সাভারের হেমায়েতপুরে থাকা চিত্রনায়ক অনন্ত জলিলের মালিকানাধীন এজেআই গ্রুপ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। এই গ্রুপের তৈরি পোশাক কারখানা বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল হলেও টেক্সটাইল চলতো গ্যাসে।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসির সাভার আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, প্রতিষ্ঠানটিতে সর্বমোট তিনটি সংযোগ রয়েছে। এর মধ্যে দু্টি সংযোগের বিপরীতে বকেয়া বিল রয়েছে ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

তিনি বলেন, ‘আমরা বকেয়া বিল আদায় করতে গিয়ে দেখি গ্যাস চুরি হচ্ছে। মিটার টেম্পারিং করা অবৈধ, বিপজ্জনক এবং আইনত দণ্ডনীয়।’

সূত্রমতে, গত ১৫ অক্টোবর ওই টেম্পারিং করা মিটারটি খুলে আনতে গেলে সংশ্লিষ্টদের বাঁধা দেওয়া হয়। পরে রোববার (১৯ অক্টোবর) দলটি পুনরায় সেখানে অভিযান চালায়। এ সময় দুইটি মিটারেই টেম্পারিং করে গ্যাস চুরির আলামত পান ভিজিল্যান্স টিমের সদস্যরা।

সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে মিটার দুটি খুলে আনতে গেলে ঘেরাও করা হয় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসির গাজীপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভিজিল্যান্স টিমের ব্যবস্থাপক আব্দুল আলীম রাসেল ও তার সহকারীদের। ‘মব’ তৈরির মাধ্যমে শ্রমিকদের দিয়ে ঘেরাও করা হয় হেমায়েতপুর-সিঙ্গাইর সড়ক। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে।

যোগাযোগ করা হলে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসির সাভার জোনের আরএমএস ইঞ্জিনিয়ারিং, টেষ্টিং অ্যান্ড সিলিং বিভাগের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবদুল্লাহ হাসান আল মামুন।

তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা করে দেখা গেছে দুটি মিটার টেম্পারিং করে অবাধে গ্যাস চুরি করা হয়েছে। এমনভাবে মিটার ট্যাম্পারিং করা হয়েছে, যাতে পর্যাপ্ত গ্যাস ব্যবহার করলেও বিল কম আসে।’

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসির একটি সূত্র বলছে, সংস্থার অপর সংযোগটি অন্তত জলিল ও তার স্ত্রী চিত্রনায়িকা আফিয়া নুসরাত বর্ষার মালিকাধীন এবি গ্রুপের নামে। চাইনিজ একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেওয়া এই প্রতিষ্ঠানের গ্যাস বিলই একমাত্র নিয়মিত।

সূত্রমতে, বাংলাদেশ গ্যাস আইন, ২০১০ অনুযায়ী, মিটার টেম্পারিং বা অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে গ্যাস ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনের অধিনে থাকা সাভারের বিভিন্ন শিল্প কারখানায় মিটার টেম্পারিং এবং অবৈধ সংযোগের মতো দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করে।

এ বিষয়ে অন্তত জলিল বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই আমার কারখানা নাজুক অবস্থার মধ্যে রয়েছে। দীর্ঘদিন সময় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা চালিয়ে আসলেও বর্তমানে কারখানা চালানোর মতো টাকা আমার হাতে নেই। মাসে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা লাভ দেবে এমন শর্তে ৫ বছর মেয়াদে চলতি বছরের ১ মে মো. জুয়েল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে পলো কম্পোজিট নীট ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড-এর ডাইংয়ের সব সেকশন, স্টোর, ব্যাচ, ফিনিশিং, ডাইচ-কেমিক্যাল স্টোর ইজারা অর্থাৎ ভাড়া দিয়েছি।’

‘জুয়েল সিরাজগঞ্জের উল্লাপড়া থানার মাটিকোড়া গ্রামের আল মাহমুদের ছেলে। বেশ কিছুদিন তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আমাকে পাওয়া টাকা দেননি। বরং তিতাসের গ্যাস বিল বকেয়া রেখে উল্টো গ্যাস চুরির মাধ্যমে আমার ভাবমূর্ত্তি নষ্ট করছে। এতে আমার কোন দায় নেই। এই দায় তাকেই নিতে হবে।’

এই সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে অনন্ত জলিল বলেন,‘এসব নিউজ দিয়েন না। মানুষ আমাকে সেলেব্রেটি হিসেবে চেনে। এসব খবর আমার ভাবমূর্ত্তির জন্যে ক্ষতিকর’।

তিনি আরও বলেন,‘আমি ওই প্রতারকের (জুয়েল ইসলাম) বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় মামলা দিয়েছি’।

এ প্রসঙ্গে তিতাস গ্যাসের সাভার আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ‘অনন্ত জলিল আমাদের গ্রাহক। তিনি নিজেই আমাদের কার্যালয়ে এসে বিভিন্ন কাগজপত্র দিয়ে গেছেন। ব্যাখ্যা দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন এতে তার কোনো দায় নেই। তিনি কাকে কোন উদ্দেশে বা কত লাভে কারখানা ভাড়া কিংবা ইজারা দেবেন সেটি আমাদের দেখার বিষয় নয়। তার কারখানায় আমরা মিটার টেম্পারিং পেয়েছি। আমরা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি।’

‘বিষয়টি উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। নিয়মানুযায়ী ‘চোরাই’ গ্যাসের মূল্য বাবদ জরিমানা ও বকেয়া বিল প্রদান সাপেক্ষে কারখানার সংযোগ চালু করা হবে। এর অন্যথায় কোনো ‘ব্যাখ্যা’ কাজে আসবে না।’

আমাদের সময়/আরডি