সাত কফিনে শোকে ভারী সন্দ্বীপের বাতাস

চট্টগ্রাম ব্যুরো
২০ অক্টোবর ২০২৫, ০০:৪৪
শেয়ার :
সাত কফিনে শোকে ভারী সন্দ্বীপের বাতাস

সচ্ছল জীবনের রঙিন স্বপ্ন নিয়ে ওমান পাড়ি দিয়েছিলেন চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের সাত যুবক। পরিবার-পরিজনের মুখে হাসি ফোটানোর প্রত্যাশা নিয়ে তাঁরা বেছে নিয়েছিলেন এক দরিয়াপারের জীবন থেকে মরুর দেশের আরেক দরিয়াপারের কঠিন জীবন। কিন্তু স্বপ্নপূরণের আগেই তাঁরা ফিরলেন কফিনবন্দি হয়ে। হাড়ভাঙা পরিশ্রম শেষে একমুঠো সুখ নয়, ফিরলেন সজনদের বুকভাঙা আহাজারি আর চোখের জলে ভেসে। ওমানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সন্দ্বীপের সাত প্রবাসীর প্রতিটি পরিবারেই চলছে এই হাহাকার।

গতকাল রবিবার হতভাগ্য এই সাত প্রবাসীর মরদেহ চট্টগ্রামে আনা হয়। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় সন্দ্বীপে। চোখের সামনে একসঙ্গে সাতটি কফিন, স্বজনদের আর্তনাদে কেঁপে উঠেছিল সন্দ্বীপের বাতাস। সেখানে নিহতদের স্বজনদের আহাজারি ছুঁয়ে গেছে প্রতিবেশী, আশপাশের গ্রামের বাসিন্দাদের হৃদয়। অশ্রুসিক্ত হয়েছেন নৌপথের মাঝিমাল্লা, পথচারীরাও।

গত ৮ অক্টোবর ওমানের দুখুম এলাকায় সাগরে মাছ ধরার কাজ শেষ করে বাসায় ফেরার পথে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় আটজন বাংলাদেশি নিহত হন। তাঁদের মধ্যে সাতজনের বাড়ি চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে। নিহতরা হলেনÑ আমিন সওদাগর, মো. সাহাবুদ্দিন, মো. বাবলু, মো. রকি, মো. আরজু, মো. জুয়েল ও মোশারফ হোসেন রনি। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনের বাড়ি সারিকাইত ইউনিয়নে, একজন মাইটভাঙ্গা ইউনিয়নে এবং অন্যজন সন্দ্বীপ পৌরসভার বাসিন্দা।

দুর্ঘটনার ১০ দিন পর শনিবার রাতে নিহতদের মরদেহ চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। গতকাল সকালে সাতজনের কফিন নিয়ে যাওয়া হয় সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরা ঘাটে। সেখান থেকে স্পিডবোটে করে শেষবারের মতো তাঁরা পাড়ি জমান সেই সাগরপথ সন্দ্বীপে, যেখান দিয়ে একদিন স্বপ্ন হাতে পাড়ি জমিয়েছিলেন বিদেশে।

সকাল সাড়ে ৯টায় পূর্ব সন্দ্বীপ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয় একসঙ্গে সাতজনের জানাজা। কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন ওই জানাজায়। কান্না আর শোকের ছায়া নেমে আসে পুরো এলাকায়। পরে মরদেহগুলো নিজ নিজ গ্রামে দাফন করা হয়।

সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মং চিনু মারমা জানান, সকালে মরদেহ নিয়ে সন্দ্বীপে পৌঁছান স্বজনরা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুর্ঘটনায় নিহত হওয়া সাত প্রবাসীর মধ্যে ছয়জনই অসচ্ছল। ভাঙা টিনের বাড়িই তাঁদের সম্বল। তেমনি একজন মো. সাহাবুদ্দিন। তাঁর পরিবারে মা-বাবা, স্ত্রী ও চার মাস বয়সী একটি সন্তান রয়েছে। দাফন শেষে নিহত প্রবাসী সাহাবুদ্দিনের পিতা মো. সিদ্দিক বলেন, আমার জীবন তো ফুরাই যাইব, কিন্তু আমার সাহাবুদ্দিনের চার মাস বয়সী মেয়েটার কী হইব। ছেলে হারানোর শোকের মধ্যে ছোট্ট এই নাতনির ভবিষ্যতের কথা ভাবতে গেলেই কলিজায় মোচড় দিয়ে ওঠে।

নিহত ব্যক্তিদের জানাজায় অংশ নিতে আসা মুছাপুর ইউনিয়নের আবদুল হাই বলেন, নিহত ব্যক্তিরা আমার স্বজন নয়। কিন্তু তাঁরা আমাদের সন্তান। সাতটা কফিনে সাতটি ছেলের লাশÑ এমন যেন আর না হয়। এমন দৃশ্য সহ্য করা যায় না।