জুলাই সনদ স্বাক্ষরে কেটে গেছে নির্বাচনী শঙ্কা
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে এক ধরনের প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছিল জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ ইস্যু। রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা ছিলÑ জুলাই সনদে স্বাক্ষর না হলে ঝুলে যেতে পারে জাতীয় নির্বাচন। আর যথাসময়ে নির্বাচন না হলে রাজনৈতিক সংকটের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংকটও দেখা দিতে পারে। এসব আলোচনার মধ্যেই গত ১৭ অক্টোবর জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছে ৩০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৫টি দল। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচন আয়োজনের পথে সবরকম শঙ্কা কেটে গেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এখন নির্বাচন আয়োজনের দিকেই হাঁটছে সরকার। নির্বাচন কমিশনও সনদ স্বাক্ষরের পর আরও বেশি তৎপর হয়েছে।
জুলাই সনদে বিএনপি, জামায়াতসহ ২৫টি রাজনৈতিক দল স্বাক্ষর করেছে। কিন্তু জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গতকাল পর্যন্ত সনদে স্বাক্ষর করেনি। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া স্বাক্ষর না করার পক্ষে অনড় এনসিপি। এতে করে উদ্বেগ পুরোপুরি কাটেনি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা দলগুলোর নতুন কর্মসূচির ঘোষণা। গতকাল রবিবার যৌথ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিন দিনের যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনসহ সমমনা ৮টি রাজনৈতিক দল। তারা জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি এবং আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যে গণভোটসহ পাঁচ দফা দাবিতে মাঠে নামছে। তদুপরি দেশের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক স্থাপনায় হঠাৎ করে অগ্নিকাণ্ডের জেরে নতুন করে বিতর্কের ডালপালা মেলতে শুরু করেছে। কেউ কেউ এখনও আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে কিনা, এ নিয়ে সন্দিহান।
যদিও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য ও কর্মসূচি দাবি আদায়ের কৌশল মাত্র। আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তেমন জটিলতা দেখছেন না তারা। তাদের ধারণা, এনসিপিও শেষ পর্যন্ত জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে। এনসিপির বর্তমান অবস্থান তাদের রাজনৈতিক ভুল। এ ভুলের জন্য নবগঠিত দলটির চড়া মাশুল দিতে হবে।
এদিকে, বর্তমানে রাজনীতির মাঠের প্রধান দল বিএনপি, জামায়াতসহ অধিকাংশ দলই ভোটের আমেজে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। বিশেষ করে বিএনপি স্পষ্টতই বলছে, নির্বাচন নিয়ে তারা কোনো জটিলতা দেখছে না।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না, এমন কোনো সন্দেহের কারণ নেই। কারণ সরকারপ্রধানের যে অঙ্গীকার, সরকারের যে অঙ্গীকার, নির্বাচন কমিশন যেভাবে তৈরি হচ্ছে, তাতে করে আমরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে, নির্বাচন অবশ্যই কাক্সিক্ষত সময়ে অনুষ্ঠিত হবে।
এতদিন নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়েছে, ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। জুলাই সনদ স্বাক্ষরের পর গত শনিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করা হবে।
এনসিপির সনদে স্বাক্ষর না করা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মতপার্থক্য প্রসঙ্গে অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ আমাদের সময়কে বলেন, এই মুহূর্তে সরকারের হাতে নির্বাচনের বিকল্প নেই। অধ্যাপক ইউনূস জীবনের শেষদিন পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টা থাকবেন, সেটা হয়তো তিনি করবেন না। এনসিপি জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করায় জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সামনে জটিলতা দেখা দেবে কিনাÑ এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এনসিপি নামে বড় দল, মাঠের বাস্তবতা তেমন না। শেষ পর্যন্ত হয়তো তারাও স্বাক্ষর করবে। তবে তাদের দাবিটা অযৌক্তিক না। কারণ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ভালো না। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের আগে যে অঙ্গীকার করে, ক্ষমতায় গেলে তা ভুলে যায়। সে জন্য আইনি ভিত্তি থাকাটা দরকার ছিল। তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি যা-ই হোক, দেশের রাজনীতি এখন নির্বাচনমুখী। দলগুলো শেষ পর্যন্ত অবস্থান বদলে ভোটের দিকেই হাঁটবে।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, আমরা যে খুব এলোমেলো অবস্থার মধ্যে রয়েছি, তেমন মনে হয় না। রাজনীতি এখন নির্বাচনের দিকেই যাচ্ছে। জুলাই সনদ স্বাক্ষর ইস্যুতে এই অধ্যাপক বলেন, ৩০টি দলের মধ্যে ২৫টি দল যদি স্বাক্ষর করে থাকে, সেটা যথেষ্ট। এনসিপি স্বাক্ষর করেনি এটা তাদের রাজনৈতিক ভুল। এটার জন্য তাদের মূল্য দিতে হবে। জুলাই সনদ নিয়ে কথা বলার অধিকার এনসিপি হারিয়ে ফেলেছে। এ সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে তারা দুর্বল করে ফেলেছে। কাজেই তাদের এই ভুলের জন্য মূল্য দিতে হবে।
অধিকাংশ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও রাজনীতিবিদের মতে, দেশকে স্থিতিশীল করতে হলে নির্বাচনের পথেই হাঁটতে হবে। নির্বাচনের বিকল্প নেই। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া চলতি সপ্তাহের মধ্যে সমাধান হবে বলে আশাবাদী তারা। বলছেন, নির্বাচন নিয়ে সব শঙ্কা দূর হয়ে গেছে। গণতান্ত্রিক পথে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে দেশ।