ত্বক পুড়ে গেলে আপনি যা করবেন এবং সতর্ক হবেন
দুর্ঘটনায় ত্বক পুড়ে যাওয়ার ঘটনা আমাদের চারপাশে প্রায়ই ঘটে থাকে। অসতর্কতা বা অসাবধানতাবশত অনেক সময় অগ্নিকাণ্ড ঘটে। সম্প্রতি বাংলাদেশে ঘটে গেল বেশ কয়েকটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। তাই এ বিষয়ে আমাদের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
ত্বক পুড়ে গেলে ক্ষত সৃষ্টি হয়, খুব যন্ত্রণা হয়। পোড়ার ধরন নির্ভর করে তাপের উৎস, সংস্পর্শের সময়কাল, ব্যক্তির চামড়ার সহনশীলতার ওপর। পোড়াকে সাধারণত চারটি ধাপে ভাগ করা হয়। প্রথম মাত্রার পোড়ায় ক্ষত হয় হালকা। ত্বকের উপরিভাগেই সীমাবদ্ধ থাকে। এতে আক্রান্ত স্থানে লালচে ভাব দেখা দেয়, সামান্য ফোলে, তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। কখনও কখনও ত্বকে শুষ্কভাব দেখা দেয়। এ ধরনের পোড়া সঠিক চিকিৎসা ও পরিচর্যায় অল্পদিনেই ভালো হয়ে যায়, স্থায়ী দাগ থাকে না।
দ্বিতীয় মাত্রার পোড়া তুলনামূলকভাবে তীব্র হয়। ত্বকের উপরিভাগ ছাড়াও নিচের স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আক্রান্ত স্থানে ফোস্কা পড়ে, তীব্র ব্যথা হয়। ফোস্কার ভেতর তরল জমে। ফেটে গেলে ত্বক খোলা হয়ে যায়। সেখানে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ে। পোড়া স্থানের রঙ লালচে, বাদামি বা কখনও কালচে হয়ে যেতে পারে। ত্বকের স্থায়ী ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অনেক ক্ষেত্রে স্কিন গ্রাফটিং করতে হয় অর্থাৎ শরীরের অন্য কোনো অংশ থেকে চামড়া নিয়ে আক্রান্ত স্থানে প্রতিস্থাপন করতে হয়।
তৃতীয় মাত্রার পোড়া গুরুতর ধরনের বার্ন ইনজুরি। এতে ত্বকের সব স্তর পুড়ে যায় এবং তা চর্বি, পেশি, হাড় পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এ ধরনের পোড়ায় ব্যথা কম অনুভূত হয়। কারণ ত্বকের স্নায়ু পুড়ে গিয়ে সংবেদনশীলতা হারিয়ে ফেলে। পোড়া অংশটি দেখতে লাগে সাদা, বাদামি, মোম বা কয়লার মতো। জায়গাটি শক্ত, উঁচু হয়ে যেতে পারে। এ ধরনের পোড়ায় সাধারণ চিকিৎসা কার্যকর হয় না; রোগীকে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। চতুর্থ মাত্রার পোড়া খুব বিপজ্জনক। এতে চামড়া ছাড়াও নিচের পেশি, হাড় ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ অবস্থায় রোগীর প্রাণনাশের আশঙ্কা থাকে এবং অবিলম্বে ইনটেনসিভ কেয়ার প্রয়োজন হয়।
চিকিৎসা : প্রথম মাত্রার পোড়ায় আক্রান্ত স্থানে অন্তত ১০ মিনিট ধরে ঠাণ্ডা পানি দিন অথবা কলের পানির নিচে রাখতে পারেন। এতে ত্বকের তাপমাত্রা কমে গিয়ে কোষের ক্ষয় কিছুটা কমানো যায়। ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল জাতীয় ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। আক্রান্ত স্থানে অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রিম, যেমন- সিলভার সালফাডাইজিন বা অ্যালোভেরা জেল লাগানো যেতে পারে। ক্ষতস্থানে ধুলাবালি বা সংক্রমণ ঠেকাতে পরিষ্কার ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢেকে রাখা ভালো। দ্বিতীয় মাত্রার পোড়ায় ক্ষতস্থানে ঠাণ্ডা পানি প্রয়োগের পাশাপাশি অ্যান্টিবায়োটিক মলম ও সঠিক ড্রেসিং অত্যন্ত জরুরি।
তবে ফোস্কা কখনই ফাটানো যাবে না। কারণ এতে সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়। ব্যথা ও ফোলাভাব কমাতে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ খেতে হবে। যদি ক্ষত গভীর ও বিস্তৃত হয়, তবে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া উচিত। তৃতীয় বা ততোধিক মাত্রার পোড়ায় প্রাথমিক চিকিৎসার পর রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব বার্ন ইউনিটে পাঠানো উচিত। ত্বক পুড়ে যাওয়া যতই সাধারণ মনে হোক না কেন, এটি একটি জটিল ও সংবেদনশীল চিকিৎসা ক্ষেত্র। তাই এমন দুর্ঘটনায় অবহেলা না করে যত দ্রুত সম্ভব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং প্রয়োজনে রোগীকে বার্ন ইউনিটে নিয়ে যাওয়া জরুরি।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, চর্ম, যৌন ও হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট বিভাগ
আরও পড়ুন:
চোখের রক্তবর্ণ ধারণের কারণ ও প্রতিকার
শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা
চেম্বার : ডা. জাহেদ হেয়ার এন্ড স্কিনিক, সাবামুন টাওয়ার, পান্থপথ মোড়, ঢাকা। হটলাইন : ০১৭১৫০৫০৯৪৯; ০১৭০৭০১১২০০