রাজকীয় উপাধি ত্যাগ করলেন প্রিন্স অ্যান্ড্রু

এস ইসলাম, লন্ডন থেকে
১৯ অক্টোবর ২০২৫, ২১:০৪
শেয়ার :
রাজকীয় উপাধি ত্যাগ করলেন প্রিন্স অ্যান্ড্রু

দীর্ঘ বিতর্ক ও সমালোচনার পর ব্রিটেনের রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স অ্যান্ড্রু অবশেষে তাঁর রাজকীয় উপাধি ‘ডিউক অব ইয়র্ক’সহ অন্যান্য সম্মানসূচক খেতাব ত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। ১৭ অক্টোবর শুক্রবার বাকিংহাম প্যালেস থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে তিনি জানান, রাজা তৃতীয় চার্লস এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

অ্যান্ড্রু বলেন, ‘রাজা ও পরিবারের সঙ্গে আলোচনার পর আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, আমার বিরুদ্ধে চলমান অভিযোগসমূহ রাজপরিবারের কাজের প্রতি মনোযোগে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে। তাই দেশের ও পরিবারের স্বার্থে আমি সব ধরনের উপাধি ও সম্মাননা ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

এই ঘোষণার ফলে তিনি আর ‘ডিউক অব ইয়র্ক’, ‘নাইট গ্র্যান্ড ক্রস অব দ্য রয়্যাল ভিক্টোরিয়ান অর্ডার (GCVO)’ এবং ‘রয়্যাল নাইট কম্প্যানিয়ন অব দ্য অর্ডার অব দ্য গার্টার’-এর খেতাব ব্যবহার করবেন না। তবে “প্রিন্স” উপাধিটি তিনি ধরে রাখবেন, যা জন্মসূত্রে প্রাপ্ত হওয়ায় আইনত বাতিলযোগ্য নয়।

রাজপ্রাসাদ সূত্রে জানা গেছে, রাজা চার্লস এবং প্রিন্স অব ওয়েলস উইলিয়াম—দুজনেই এ সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট। প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সাবেক স্ত্রী সারা ফার্গুসনও তাঁর “ডাচেস অব ইয়র্ক” উপাধি আর ব্যবহার করবেন না। তবে তাঁদের দুই কন্যা, প্রিন্সেস বিট্রিস ও ইউজেনির উপাধি অপরিবর্তিত থাকবে।

এই পদক্ষেপ আসে এমন এক সময়ে, যখন অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ ও প্রয়াত দোষী যৌন অপরাধী জেফ্রি এপস্টিনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বিতর্ক নতুন করে আলোচনায় এসেছে। সম্প্রতি প্রয়াত ভার্জিনিয়া জিউফ্রের স্মৃতিকথা প্রকাশের আগে গার্ডিয়ান তার কিছু অংশ প্রকাশ করে, যেখানে তিনি দাবি করেন, ‘প্রিন্স অ্যান্ড্রু মনে করতেন, আমার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করা তাঁর জন্মগত অধিকার।’

অ্যান্ড্রু সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি ২০২২ সালে জিউফ্রের সঙ্গে ১ কোটি ২০ লাখ পাউন্ডে মামলা নিষ্পত্তি করেন, তবে দায় স্বীকার করেননি।

এছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে চীনের রাজনীতি ও গুপ্তচরবৃত্তি মামলার এক প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে অ্যান্ড্রুর সম্পর্ক নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধে এই বিতর্ক দীর্ঘদিন ধরেই রাজপরিবারের ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছিল। সূত্র জানায়, রাজপরিবারের কর্মকর্তারা শেষ পর্যন্ত “একটি মোড় ঘোরা মুহূর্তে” পৌঁছে যান এবং উপাধি ত্যাগের সিদ্ধান্তকে অবশ্যম্ভাবী মনে করেন।

ইতিপূর্বে প্রিন্স অ্যান্ড্রুকে সামরিক পদ ও দাতব্য সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতার দায়িত্ব থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়, এবং তাঁকে আর ‘হিজ রয়্যাল হাইনেস (HRH)’ হিসেবে সম্বোধন করা হয় না।

এদিকে, যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে ‘রিমুভাল অব টাইটেলস বিল’ নামে একটি আইন প্রস্তাবিত হয়েছে, যার মাধ্যমে রাজা নিজ উদ্যোগে বা সংসদের সুপারিশে কোনো রাজকীয় উপাধি প্রত্যাহার করতে পারবেন। ইয়র্ক সেন্ট্রালের লেবার এমপি র্যাচেল মাসকেল বলেন, ‘প্রিন্স অ্যান্ড্রুর ঘটনাই প্রমাণ করছে যে এ ধরনের আইন এখন অত্যাবশ্যক।’

প্রিন্স অ্যান্ড্রুর পতনকে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে—যেখানে ব্যক্তিগত বিতর্কের কারণে একজন রাজপুত্র কার্যত রাজপরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেন।

আমাদের সময়/ এইচও