চোখের জল ফেলে সাঁইজির ধাম ছাড়ছেন সাধু-ভক্তরা
পুণ্য সেবার মধ্য দিয়ে কুষ্টিয়ায় শেষ হলো তিনদিনের ফকির লালন সাঁইয়ের ১৩৫তম তিরোধান বা লালন স্মরণোউৎসব। রোববার (১৯ অক্টোবর) দুপুর থেকে সাধু-ভক্তরা লালন চত্বর ছেড়ে ফিরে যাচ্ছেন নিজ নিজ বাড়িতে। আস্তে আস্তে ফাঁকা হচ্ছে আশ্রম।
বিদায়লগ্নে অনেক সাধু ও লালন ভক্তরা চোখের জল ফেলে আসন ছাড়েন। তারা আবার আগামী ১ কার্তিক ফকির লালন সাঁইয়ের ধামে আসবেন এ প্রত্যাশা করেন।
তিনদিনব্যাপী উৎসবের শেষ দিনে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকার। মুখ্য আলোচক ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর বিভাগের অধ্যাপক মো. খালেদুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি মো. রেজাউল হক, বিজিবি ৪৭ সেক্টরের কর্নেল আহসান হাবীব এবং কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন লালন একাডেমির সভাপতি ও কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মাদ আরেফিন ।
এবারের উৎসব ঘিরে লালন মাজার, উন্মুক্ত মঞ্চ ও মেলার স্টলগুলো সাজানো হয়েছিল নান্দনিকভাবে। মেলায় ১২০টি স্টল স্থাপন করা হয়েছে, যেগুলো তত্ত্বাবধান করছে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট টিম। উন্মুক্ত মঞ্চে আঁকায় আনা হয়েছে বৈচিত্র্য; নির্মাণ করা হয়েছিল ওয়াচ টাওয়ারসহ বাড়তি নিরাপত্তাবলয়।
প্রতিবছরের মতো এবারও দেশি-বিদেশি পর্যটক, ভক্ত-অনুরাগী ও সাধু-বাউলদের মিলনে লালন আখড়া চত্বরে সৃষ্টি হয় এক মহা মিলন উৎসব।
শেষ দিনে প্রধান আলোচক হিসেবে লালন দর্শনের আলোকে বক্তব্য দেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সরোয়ার মুর্শেদ। এ ছাড়া আমন্ত্রিত অতিথিদের আলোচনা শেষে লালন একাডেমি ও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত খ্যাতনামা শিল্পীদেরপরিবেশনায় রাতভর লালন সঙ্গীত অনুষ্ঠিত হয়।
তিনদিন ধরে এক তারা, দোতারা বাদ্যযন্ত্র নিয়ে সাধুরা গানের মধ্য দিয়ে লালনকে স্মরণ করেন। ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’, ‘মায়েরে ভজলে হয় বাপেরই পরিচয়’, ‘মিলন হবে কত দিনে’ ‘রাত পোহালে পাখি বলে, দে রে খাই দে রে খাই’ লালন সঙ্গীতের লালনের আধ্যাত্মিক গানে মুখরিত ছিল আখড়াবাড়ি। দিন রাত চলে সাধু ভক্তদের লালন সংগীত। লালনের আধ্যাত্মিক গানের মধ্যেই খুঁজে পেয়েছে লালনের দর্শন।
আমাদের সময়/আরডি