নেতানিয়াহুর সামনে ৬ বিপদ

আল জাজিরার বিশ্লেষণ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৫২
শেয়ার :
নেতানিয়াহুর সামনে ৬ বিপদ

দুই বছরের ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজা প্রায় সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ও ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। তার পরও কিছু পর্যবেক্ষক মনে করছেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জন্য গাজায় শান্তিচুক্তি যেন কিছু আগেই হয়েছে। এ যুদ্ধবিরতিকে নেতানিয়াহু বিজয় হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করলেও সাবেক ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতসহ অনেকেই মনে করছেন- এটি ছিল সাজানো নাটক। হোয়াইট হাউসের চাপে নেতানিয়াহু মানতে রাজি হয়েছেন। কেননা গাজা যুদ্ধে আর্র্থিক ও কূটনীতিক ভার বইতে রাজি ছিল না ওয়াশিংটন। এ পরিস্থিতিতে নেতানিয়াহু যদি নতুন কোনো যুদ্ধ শুরু করতে না পারেন, তা হলে আগামী বছরে নির্বাচনের আগে ও পরে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন?

১. বিশ্বে একঘরে নেতানিয়াহু : গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বর্তমানে বিশ্ব রাজনীতিতে ইসরায়েল যতটা নিঃসঙ্গ, অতীতে কখনও এমনটা ছিল না। এই একঘরে পরিস্থিতির মূল নায়ক নেতানিয়াহু। গাজা যুদ্ধে ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। জীবন ধারণের সব পরিষেবা প্রত্যাহার করে গাজাবাসীকে তিল তিল করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছেন তিনি। এতে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। যদিও ইসরায়েলের জন্য এমন একঘরে পরিস্থিতি নতুন কিছু নয়। কিন্তু বর্তমানে ইসরায়েলের বাসিন্দারাও এটি মানতে রাজি নয়।

২. ভাঙনের মুখে নেতানিয়াহুর জোট : জোট সরকারে ভাঙন ঠেকাতে নেতানিয়াহু নানা পদক্ষেপ নিচ্ছেন। যুদ্ধের সময়, এমনকি এর আগে বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা নিয়ে বিতর্কে চরম দক্ষিণপন্থিদের ওপর নির্ভর করেছেন নেতানিয়াহু। অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ ও জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গভির- দুজনই যুদ্ধবিরতির বিরোধিতা করলেও এখনও নেতানিয়াহুর জোটে আছেন। এই দুইজন বেরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় একটি আইন করতে যাচ্ছেন নেতানিয়াহু।

৩. দোষী সাব্যস্ত হতে পারেন : আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ও আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) নেতানিয়াহু এবং ইসরায়েলকে গাজায় যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করতে পারেন। ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে আইসিসি যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এ ছাড়া আইসিজেও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া জাতিহত্যার মামলা শুনছেন। যদি আদালত ইসরায়েলকে দোষী সাব্যস্ত করেন, তবে অনেকেই সে জন্য সরাসরি নেতানিয়াহুকেই দায়ী করবেন।

৪. ট্রাম্পের সঙ্গে দূরত্ব : নেতানিয়াহু থেকে দূরে যেতে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রই ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় আর্থিক, সামরিক ও কূটনৈতিক ভরসা। ওয়াশিংটনের সমর্থন ছাড়া ইসরায়েল আর নেতানিয়াহু মারাত্মক বিপদে পড়বেন। গাজা যুদ্ধে নানা সময় নেতানিয়াহুর ওপর ট্রাম্পের বিরক্তির খবর শিরোনাম হয়েছে। গত মে মাসেও ট্রাম্প নেতানিয়াহুর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

৫. নিরাপত্তা ব্যর্থতা নিয়ে কি তদন্ত হবে : ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের ভেতরে ঢুকে প্রায় ১২শ জনকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে। এ ঘটনার তদন্তে বেরিয়ে এসেছে ইসরায়েলের সেনা ও গোয়েন্দা সংস্থার দুর্বলতা সমন্বয়হীনতা। পৃথক তদন্তের পর সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান দুজনই পদত্যাগ করেন। নেতানিয়াহু নিজ সরকারের ভূমিকা নিয়ে তদন্তে বাধা দিয়ে বলেছিলেন, যুদ্ধ চলাকালে এটি সম্ভব নয়। এখন তো যুদ্ধ শেষ হয়েছে, এখন সেই পথ খুলবে।

৬. জেলে যাওয়ার আশঙ্কা : নেতানিয়াহুর জেলে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। ট্রাম্প নিজেই গাজার যুদ্ধ ও নেতানিয়াহুর দুর্নীতি মামলার যোগসূত্রের ইঙ্গিত দিয়েছেন। এদিকে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে তিনটি দুর্নীতি মামলা চলছে। যুদ্ধকালেও নানা বিলম্ব সত্ত্বেও মামলাগুলোর কার্যক্রম থেমে থাকেনি। দোষী সাব্যস্ত হলে নেতানিয়াহুর ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।