স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যায়নি এনসিপি ও বাম ৪টি দল
জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যাননি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বামধারার চারটি রাজনৈতিক দলের নেতারা। দলগুলো হলো-বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ।
এনসিপির মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন বিকেল বলেন, এনসিপির কেউ জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যাননি। না যাওয়ার কারণ আগেই সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। এর একদিন আগে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও রাজনৈতিক লিয়াজোঁ প্রধান আরিফুল ইসলাম আদীব স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিলÑ এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে
আইনি ভিত্তি অর্জন হবে না। এটা কেবল আনুষ্ঠানিকতা। আমরা বহুবার আইনি ভিত্তির কথা বলেছি। তাই আইনি ভিত্তির আগে এ ধরনের
আনুষ্ঠানিকতা ‘জুলাই ঘোষণাপত্রের’ মতো আরেকটি একপাক্ষিক দলিলে রূপান্তরিত হবে। তবে ঐকমত্য কমিশন যেহেতু সময় বাড়িয়েছে, আমরা ঐকমত্য কমিশনের পরবর্তী প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে আমাদের অবস্থান তুলে ধরবে। দাবি পূরণ হলে পরে স্বাক্ষর করবে এনসিপি।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর ইস্কাটনে এনসিপির শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল জাতীয় ঐকমত্যের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে একটি কাগজে সই করছে।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
জুলাই জাতীয় সনদের স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগে সংশোধিত খসড়া না পেলে সনদে সই করবে না বলে গতকাল জানিয়েছিল বামধারার চারটি দল। এ বিষয়ে সিপিবির সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির বলেন, সিপিবিসহ চার বাম দলের নেতাদের কেউ জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যাননি। তিনি বলেন, আমরা বৃহস্পতিবার আমাদের অবস্থান জানিয়েছি।
গত বৃহস্পতিবার বাম জোট সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানিয়েছিলÑ জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগে সংশোধিত খসড়া না পেলে সনদে সই করবে না বাম গণতান্ত্রিক জোটভুক্ত চারটি দল। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেছিলেন, প্রধান উপদেষ্টা ঐকমত্য কমিশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, সব দল যেসব বিষয়ে একমত হবে শুধু সেগুলোই ঐকমত্য হিসেবে বিবেচিত হবে। আমরাও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে একমত পোষণ করেছিলাম এবং ঐকমত্য কমিশনের সব সভায় উপস্থিত থেকে আমাদের মতামত ব্যক্ত করেছি। কিন্তু জুলাই সনদের যে চূড়ান্ত কপি গত ১৪ অক্টোবর আমাদের কাছে পাঠিয়েছে, সেখানে দেখলাম সর্বসম্মত বিষয় ছাড়াও নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) দেওয়া প্রস্তাবগুলো সনদে যুক্ত করেছে। আমাদের দেওয়া নোট অব ডিসেন্টগুলোর কারণও যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ হয়নি।
তিনি বলেন, সংবিধানে বিদ্যমান চার মূলনীতি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ এবং ১৫০ (২) অনুচ্ছেদের ক্রান্তিকালীন বিধানের তফসিল পরিবর্তনে সম্মতি প্রদান ও আদালতে প্রশ্ন করা যাবে না এমন বিষয়ে অঙ্গীকার করতে হয়Ñ এমন কোনো সনদে ভিন্নমত দিয়ে আমরা স্বাক্ষর করতে পারি না।
গত ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়ে দুই পর্বের আলোচনায় ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়। এগুলো নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ গতকাল জানিয়েছেন, কোনো দল চাইলে পরেও সনদে সই করতে পারবে।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
বিকাল চারটায় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা ছিল। তার আগে বেলা ১টার দিকে ‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয় দিয়ে একদল লোক অনুষ্ঠানস্থলে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা করে তাদের সরিয়ে দেয়।
এর পর পুলিশ ও ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ মধ্যে সংঘর্ষ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।