প্রসব-পরবর্তী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার গুরুত্ব
প্রসব একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া হলেও এটি একজন নারীর দেহে ও মনে গভীর পরিবর্তন আনে। সন্তান জন্মদানের এই অভিজ্ঞতা একজন নারীর জীবনে একদিকে যেমন অপার আনন্দ ও মাতৃত্বের পূর্ণতা নিয়ে আসে, অন্যদিকে তেমনি তার শরীরের ওপর ফেলে বিভিন্ন মাত্রার শারীরিক ও মানসিক চাপ। সন্তান জন্মের পর নারীরা প্রায়ই নানা ধরনের শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হন। এর মধ্যে কোমর ও পিঠব্যথা, পেলভিক ফ্লোর দুর্বলতা, প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা, বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় অস্বস্তি, পেটের সেলাইয়ের জায়গায় টান লাগা কিংবা ব্যথা অনুভব হওয়া, শরীরের ফিটনেস হারিয়ে যাওয়া প্রভৃতি সমস্যা উল্লেখযোগ্য।
অনেক সময় মানসিক অবসাদ, ঘুমের ব্যাঘাত, ক্লান্তি ও একাকীত্বও দেখা দেয়। এই সব সমস্যাকে উপেক্ষা করলে তা পরবর্তী সময়ে আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে। তাই প্রসব-পরবর্তী এই সময়কে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে এবং সঠিক ও বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে একজন মায়ের সুস্থতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা একটি গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর পন্থা হিসেবে বিবেচিত হয়। ফিজিওথেরাপি শুধু ব্যথা লাঘব করে না, বরং শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনতেও সহায়তা করে। মায়ের মানসিক চাপ হ্রাস, সঠিকভাবে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারা, ঘুমের মান উন্নয়ন, পেশি শক্তি ও দেহের ভারসাম্য পুনরুদ্ধার এবং প্রতিদিনের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে আসা- এসব দিক বিবেচনায় ফিজিওথেরাপি অপরিহার্য একটি সেবা হিসেবে গণ্য হতে পারে।
প্রসব-পরবর্তী সময় ফিজিওথেরাপি যেসব ব্যায়াম উপকারী তা হচ্ছে, পেলভিক ফ্লোর রিহ্যাবিলিটেশন বা কেগেল এক্সারসাইজ, যা প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং প্রসবজনিত পেলভিক মাংসপেশির দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে; হালকা যোগব্যায়াম ও শ্বাসপ্রশ্বাস ব্যায়াম, যা মানসিক প্রশান্তি আনে ও শরীরকে সতেজ করে তোলে; কোর মাংসপেশির রিহ্যাবিলিটেশন, যা পেট ও পিঠের পেশিগুলো শক্তিশালী করে; নিয়মিত হাঁটাহাঁটি, যা ধীরে ধীরে শরীরকে সক্রিয় করে এবং রক্তসঞ্চালন বাড়ায়; আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি বা ইলেক্ট্রোথেরাপির মতো আধুনিক ফিজিওথেরাপি মোডালিটিজ ব্যথা উপশমে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
নরমাল ডেলিভারির পর প্রথম ছয় সপ্তাহে যেসব ব্যায়াম গ্রহণযোগ্য তা হলো- ডিপ ব্রিদিং বা গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম, যা ফুসফুসের কার্যকারিতা ও মানসিক স্বস্তি বাড়ায়; অ্যাঙ্কেল পাম্প, যা পায়ের রক্তসঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে; কেগেল এক্সারসাইজ, যা পেলভিক ফ্লোরের পেশি দৃঢ? করে এবং হালকা হাঁটা, যা ধীরে ধীরে শরীরের সচলতা ফিরিয়ে আনে। ছয় থেকে বারো সপ্তাহ পর্যন্ত সময়ে পেলভিক টিল্ট এক্সারসাইজ, ক্যাট-কাউ স্ট্রেচ, ব্রিজিং এক্সারসাইজ এবং হালকা যোগব্যায়াম বা স্ট্রেচিং করানো যেতে পারে। তিন থেকে ছয় মাস পরবর্তী সময়ে, যদি মা সুস্থ থাকেন এবং কোনো জটিলতা না থাকে, তাহলে অ্যাবডোমিনাল স্ট্রেন্থেনিং, ওয়াল স্কোয়াট, হিপ ও ব্যাক স্ট্রেন্থেনিং, হালকা কার্ডিও ব্যায়াম (যেমন- হাঁটা বা স্টেশনারি সাইক্লিং) এবং মানসিক প্রশান্তির জন্য রিল্যাক্সেশন এক্সারসাইজ চালু রাখা যেতে পারে।
সিজারিয়ান বা সি-সেকশন ডেলিভারির পর ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা কিছুটা আলাদা ও সতর্কতাপূর্ণ পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়। তবে এ সময়ে অবশ্যই কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা মেনে চলতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কোনো ধরনের ব্যায়াম শুরুর আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
আরও পড়ুন:
চোখের রক্তবর্ণ ধারণের কারণ ও প্রতিকার
লেখক : ফিজিওথেরাপিস্ট
চেম্বার : আলোক মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার, মিরপুর-৬, ঢাকা
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
হটলাইন : ১০৬৭২, ০৯৬১০১০০৯৯৯