আইসিজেতে মামলা চালিয়ে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা

আমাদের সময় ডেস্ক
১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:০৪
শেয়ার :
আইসিজেতে মামলা চালিয়ে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা

ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি হলেও আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা মামলার ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না- জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা। গত মঙ্গলবার কেপটাউনের পার্লামেন্টে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান। গাজায় জাতিগত নিধনের অভিযোগে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলাটি করে দক্ষিণ আফ্রিকা। এদিকে যুদ্ধবিরতরি পরও ইসরাইলি সৈন্যদের গুলিতে গাজাবাসীর নিহতের ঘটনা, হামাস ও স্থানীয় বিদ্রোহীদের সংঘর্ষ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের হামাসকে হুমকিÑ ইত্যাদির প্রেক্ষিতে গাজা যুদ্ধবিরতি কতটা টেকসই হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ থামানোর লক্ষ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চলছে। তবে তা সত্ত্বেও দক্ষিণ আফ্রিকা ২০২৩ সালে শুরু করা মামলাটি চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় সংকল্পে অটল রয়েছে।

পার্লামেন্টে দেওয়া বক্তব্যে রামাফোসা বলেন, ‘েেয শান্তিচুক্তি হয়েছে, সেটিকে আমরা স্বাগত জানাই। এটা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে চলমান মামলার ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।’ দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে মামলাটি করে। দেশটির অভিযোগÑ গাজায় জাতিগত নিধন চালাচ্ছে ইসরায়েল।

২০২৪ সালের অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার ৫০০ পৃষ্ঠার একটি

বিস্তারিত আবেদন দাখিল করে। ইসরায়েলের পাল্টা যুক্তি জমা দেওয়ার শেষ সময় ২০২৬ সালের ১২ জানুয়ারি। ২০২৭ সালে মৌখিক শুনানি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২৭ সালের শেষ দিকে বা ২০২৮ সালের শুরুতে চূড়ান্ত রায় প্রকাশ করা হতে পারে।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালত তিনটি অস্থায়ী নির্দেশ জারি করেছে। এর আওতায় ইসরায়েলকে জাতিগত নিধন বন্ধ ও গাজায় মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর সুযোগ দিতে বলা হয়েছে। তবে ইসরায়েল অনেকাংশেই এই নির্দেশগুলো মানতে ব্যর্থ হয়েছে।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলেছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

মামলা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে রামাফোসা যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা নিয়ে জাতিসংঘের স্পেশাল র?্যাপোর্টিয়ার ফ্রান্সেসকা আলবানিজ সামাজিক মাধ্যম এক্সে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেনÑ ‘ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধা, ক্ষতিপূরণ এবং পুনরাবৃত্তি রোধের নিশ্চয়তা ছাড়া কোনো শান্তিই টেকসই নয়।’

স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো স্যানশেজ ইসরায়েলের কঠোর সমালোচক হিসেবে পরিচিত। তিনিও একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। স্প্যানিশ রেডিওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির মানে ইসরায়েলের দায়মুক্তি হতে পারে না। এখানে দায়মুক্তির সুযোগ নেই।’ স্যানশেজ মনে করেন, জাতিগত নিধনের ঘটনায় মূল দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ কিছু মানবাধিকার সংস্থা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় জাতিগত নিধন চালানোর অভিযোগ করেছে। গত মাসে জাতিসংঘ সমর্থিত একটি তদন্ত কমিশন বলেছেÑ গাজায় ইসরায়েল জাতিগত নিধন চালিয়েছে। তবে গাজায় জাতিগত নিধন চালানোর অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েল।

স্পেন, আয়ারল্যান্ড, তুরস্ক ও কলম্বিয়াসহ কিছু দেশ এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক আদালতের মামলায় দক্ষিণ আফ্রিকাকে সমর্থন দিয়েছে বা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।

দক্ষিণ আফ্রিকা দ্য হেগ গ্রুপ নামের একটি জোটে সহ-সভাপতিত্ব করছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে গঠিত এই জোটটি আইনি, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে ইসরায়েলকে জবাবদিহির আওতায় আনার চেষ্টা করছে।

প্রকৃতপক্ষে গাজায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে যুদ্ধবিরতি ও শান্তি পরিকল্পনায় গণহত্যায় জড়িত ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও তাঁর কর্মকর্তাদের বিচারের বিষয়ে তেমন কিছু বলা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনায় হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ, ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তির ইস্যুতে জোর দেওয়া হলেও উপেক্ষিত রয়ে গেছে গাজায় গণহত্যার বিচারের বিষয়টি। এটি দক্ষিণ আফ্রিকাকে মামলা চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতি চলার মধ্যেও সেখানে ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে ফিলিস্তিনিদের নিহতের খবর পাওয়া গেছে। ইসরাইলি কর্মকর্তারা নানা অজুহাত ও হুমকি দিচ্ছেন। ট্রাম্পও হামাসকে নিরস্ত্রীকরণে হুমকি দিচ্ছেন। হামাস ও স্থানীয় বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষ, এমনকি বিদ্রোহীদের প্রকাশ্যে হত্যার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। হামাস অস্ত্র সমর্পণ ও গাজার শাসনভার ত্যাগ নাও করতে পারেÑ এমনও খবর চাউর হচ্ছে।

এমন অবস্থায় গাজার যুদ্ধবিরতি কতদিন স্থায়ী হবে বা সেখানে আদৌ কার্যকর কোনো শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে কি না এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কোনো বড় উদ্যোগ নেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। সূত্র : আল-জাজিরা, বিবিসি, আরব নিউজ