বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে রপ্তানি বেড়েছে পাবদা মাছের

বেনাপোল প্রতিনিধি
১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:১২
শেয়ার :
বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে রপ্তানি বেড়েছে পাবদা মাছের

দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর যশোরের বেনাপোল দিয়ে ভারতে পাবদা মাছের রপ্তানি বেড়েছে। তবে এর বিপরীতে দেশটি থেকে কার্প ও সামুদ্রিক মাছের আমদানি কমেছে। তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন ভারতে চাহিদা বাড়ায় পাবদা মাছের রপ্তানি বেড়েছে।

স্থানীয় মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে , সবশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে মোট এক কোটি ৩৭ লাখ ৪২ হাজার ৬৯০ কেজি মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। এর রপ্তানি মূল্য ছিল তিন কোটি ৮৩ লাখ ৪৮ হাজার ৯৭৫ মার্কিন ডলার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়েছে পাবদা মাছ, যা মোট রপ্তানির ৮৮ শতাংশ। সার্বিক মাছ রপ্তানিতে ইলিশের অংশ ছিল প্রায় চার শতাংশ। এই চার শতাংশ শুধু দুর্গাপূজার উপহার হিসেবে গেছে।

এর আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৮২ লাখ ৯২ হাজার ৫৫০ কেজি মাছ, যার মূল্য দুই কোটি ৫৪ লাখ ৬৫ হাজার ৬৭৫ ডলার। সেবারও রপ্তানির বড় অংশ ছিল পাবদা মাছ।

অন্যদিকে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারত থেকে মাছ আমদানি হয়েছে এক কোটি ৭১ লাখ ১৮ হাজার ৭০২ কেজি। এর আমদানি মূল্য ৭৬ লাখ ৬৩ হাজার ৬৯০ ডলার। আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল প্রায় দ্বিগুণের বেশি মাছ, যা পরিমাণে তিন কোটি ৫৪ লাখ ৬ হাজার ৮৮২ কেজি। ওই মাছের আমদানি মূল্য ছিল এক কোটি ৭৩ লাখ ৪১ হাজার ৩৫০ ডলার। মাছের রপ্তানি বাড়লেও উৎপাদন খরচ নিয়ে মাছচাষিরা চাপের মুখে রয়েছেন।

বেনাপোলের সততা ফিশ কোম্পানির মালিক খোকন জানান, তিনি ৪০ একর জলাশয়ে বিভিন্ন ধরনের মাছ চাষ করেন। এর মধ্যে পাবদা, তেলাপিয়া ও রুই জাতের মাছই বেশি।

তিনি বলেন, ‘মাছের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। মাছের খাদ্য, বিদ্যুৎ ও শ্রমের খরচ বেড়েছে। এখন দুই কেজি আকারের রুই মাছ উৎপাদন করতে কেজিতে খরচ পড়ে ২৭০-২৮০ টাকা। ফলে মুনাফা নেমে এসেছে ১০ শতাংশে, যা আগে ৩০ শতাংশের মতো ছিল। বেশি বিনিয়োগে কম মুনাফা হওয়ায় চিন্তায় আছি। আমি সরাসরি মাছ রপ্তানি করি। আমার নিজের ঘের থেকে পাবদা মাছই বেশি রপ্তানি করি ভারতে।’

মাছচাষি ও মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, যশোরের শার্শা, ঝিকরগাছা, মনিরামপুরসহ বিভিন্ন উপজেলায় পাবদা মাছের উৎপাদন বেড়েছে। এর কারণ হলো প্রতিবেশী দেশ ভারতে এই মাছের চাহিদা বাড়ছে। সে কারণে চাষিরা রুই, কাতলা ও পাঙাশের চাষ কিছুটা কমিয়ে পাবদা চাষে ঝুঁকছেন।

ভারতে মাছ রপ্তানিকারক উপজেলার বাগআঁচড়ার জনতা ফিশের স্বত্বাধিকারী আব্দুল কুদ্দুস জানান, তিনি সব ধরনের মাছ রপ্তানি করেন। তবে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় পাবদা। বছরে শতকোটি টাকার বেশি পাবদা মাছ রপ্তানি করেন।

তিনি আরও জানান, ‘কেজিতে ১৫-১৬টা হয়, এমন পাবদার চাহিদা বেশি ভারতে। রপ্তানির পাশাপাশি রুই, কাতলা ও সামুদ্রিক মাছ ভারত থেকে আমদানি করি। তবে আগের চেয়ে আমদানি কিছুটা কম।’

বেনাপোল বন্দরের কোয়ারেন্টাইন কর্মকর্তা সজীব সাহা বলেন, ‘ভারতে বাংলাদেশি পাবদা মাছের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দেশের বিভিন্ন উপজেলায় এর উৎপাদন বেড়েছে। এর মধ্যে যশোর অঞ্চল মাছ উৎপাদনে এগিয়ে। তাই স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখানকার মাছ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়।’


আমাদের সময়/আরডি