মাথাব্যথা হওয়ার যত কারণ এবং ব্যথা থেকে মুক্তির উপায় জেনে নিন

ডা. এমএস জহিরুল হক চৌধুরী
১৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:১৫
শেয়ার :
মাথাব্যথা হওয়ার যত কারণ এবং ব্যথা থেকে মুক্তির উপায় জেনে নিন

কখনও কখনও মাথাব্যথা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। কখনও এ ব্যথা চলতে থাকে দিনের পর দিন। মাথাব্যথা দুধরনের হয়। একটি প্রাইমারি হেডেক। মাইগ্রেন, টেনশন টাইপ হেডেক, ক্লাস্টার হেডেক ইত্যাদি এ পর্যায়ে পড়ে। আরেকটি সেকেন্ডারি হেডেক। সাইনোসাইটিস, মাসটয়ডাইটিস, গ্লুুকোমা, স্ট্রোক, মাথায় আঘাত পাওয়া, মস্তিষ্কের টিউমার ইত্যাদির ব্যথা হলো সেকেন্ডারি। মাথাব্যথার ধরন বা কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হয়। এ জন্য প্রথমে প্রয়োজন রোগ নির্ণয় করা।

মাইগ্রেন থেকে মুক্তির উপায় : প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে হবে, ঘুম হতে হবে পরিমিত। অতিরিক্ত বা কম আলোয় কাজ করা যাবে না। কড়া রোদ বা তীব্র ঠাণ্ডা পরিহার করতে হবে। উচ্চশব্দ ও কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে বেশিক্ষণ থাকা যাবে না। বেশিক্ষণ কম্পিউটারের মনিটর ও টিভির সামনেও বসে থাকা যাবে না। মাইগ্রেন শুরু হলে বেশি বেশি পানি পান (বমি হয়ে থাকলে), বিশ্রাম করা, ঠাণ্ডা কাপড় মাথায় জড়িয়ে রাখবেন।

যা খাবেন : ঢেঁকিছাঁটা চালের ভাত, আলু ও বার্লি মাইগ্রেন প্রতিরোধক। খেজুর ও ডুমুর ব্যথা উপশম করে। সবুজ, হলুদ ও কমলা রঙের শাকসবজি নিয়মিত খেলে উপকার হয়। ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি মাইগ্রেন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তিল, আটা ও বিটে প্রচুর ক্যালসিয়াম রয়েছে। আদার টুকরো বা রস দিনে দুবার জিঞ্জার পাউডার পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন।

যা এড়িয়ে চলবেন : চা, কফি ও কোমল পানীয়, চকোলেট, আইসক্রিম, দই, ডেইরি প্রোডাক্ট (দুধ, মাখন), টমেটো ও সাইট্রাস জাতীয় ফল খাবেন না। রুটি, পাস্তা, ব্রেড, আপেল, কলা, চিনাবাদামও খাবেন না।

খেয়াল রাখবেন : ব্যক্তিভেদে ভিন্ন ভিন্ন খাবারে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই কোন খাবার ও কোন পারিপার্শ্বিক ঘটনায় ব্যথা বাড়ছে বা কমছে, তা নোট করে রাখা ভালো। এক সপ্তাহ নোট করলে নিজেই সমাধান পাবেন।

সাইনোসাইটিসে মাথাব্যথা : ঘন ঘন সর্দি-কাশির কারণে এ ধরনের মাথাব্যথা হয়। তখন গরম পানির ভাপ নিতে পারেন। নাক পরিষ্কার করতে হবে খুব ভালোভাবে। ঘরের চিকিৎসায় কাজ না হলে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক এবং অ্যান্টিহিস্টামিন-জাতীয় ওষুধ খেতে হতে পারে। যাদের ধুলাবালিতে অ্যালার্জি আছে, তারা ধুলা থেকে দূরে থাকবেন। যখনই কেউ সর্দি-সমস্যায় আক্রান্ত হন, নাক সঠিকভাবে পরিষ্কার করবেন। সাইনোসাইটিসের ব্যথার সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসের তেমন সম্পর্ক নেই। আলো বা শব্দের কারণে এ ব্যথা বাড়ার কোনো কারণ নেই।

চক্ষুজনিত মাথাব্যথা : মাথাব্যথা সাধারণত চোখে, কপালের দুদিকে বা মাথার পেছনে হয়। এ ব্যথায় চোখের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

হরমোনজনিত মাথাব্যথা : মেয়েদের ঋতুচক্রের সময় হরমোনের ওঠানামার কারণে মাথাব্যথা হতে পারে। জন্মনিয়ন্ত্রণ ওষুধ খেলেও ব্যথা হয়।

পরামর্শ : মাথাব্যথা দূর করতে পানি পান করুন।  সঠিক সময়ে পুষ্টিকর খাবার খাবেন। পর্যাপ্ত ঘুমাবেন। কাজের ফাঁকে চোখ বন্ধ করে কিছু সময় বিশ্রাম করুন। মাথাব্যথা হলে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করলে আরাম পাবেন। আর হাসুন। হালকা মাথাব্যথা উপশমে হাসি বেশ উপকারী। শ্বাস নিন প্রাণভরে। মানসিক চাপ বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে হলে খোলা কোনো জায়গা থেকে হেঁটে আসতে পারেন।

লেখক : অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল

চেম্বার : পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিমিটেড, শ্যামলী, ঢাকা

হটলাইন : ০১৮৮৬১৮০৬৫৯; ০১৯২৭০৭৮৭৬৬