ফিট থাকতে ডায়েট
বর্তমানে ব্যস্ত জীবনে ‘ফিট থাকা’ শুধু সৌন্দর্যের বিষয় নয়, এটি এখন মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার অপরিহার্য অংশ। অনেকেই মনে করেন, ফিট থাকা মানেই ক্ষুধা পেলেও না খাওয়া বা ক্যালরি কম গ্রহণ। কিন্তু আসল রহস্য হলো স্মার্ট ডায়েট- যে ডায়েটে শরীর পাবে প্রয়োজনীয় পুষ্টি, আর মন থাকবে চনমনে ও কর্মক্ষম। পুষ্টিবিদ ইসরাত জাহানের পরামর্শ নিয়ে লিখেছেন রিয়ানা ইসলাম রিম্পা
‘ডায়েট’ শব্দটি শুনলেই অনেকের চোখে ভেসে ওঠে শুধু সিদ্ধ খাবার, সালাদ আর এক গ্লাস পানি। সত্যিকার ডায়েট মানে কিন্তু তা নয়, বরং ডায়েট মানে হচ্ছে সব ধরনের খাবারের মধ্যে একটি সুষম ব্যবস্থার সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা। বয়স, ওজন এবং শারীরিক পরিশ্রমের ধরন অনুযায়ী ডায়েট চার্ট তৈরি করা উচিত। আমাদের শরীর প্রতিদিন প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, ভিটামিন ও মিনারেল চায় নির্দিষ্ট অনুপাতে। একটির অভাব যেমন ক্ষতিকর, তেমনি অন্যটির আধিক্যও সমস্যা সৃষ্টি করে। তাই খাদ্যতালিকায় থাকতে হবে বৈচিত্র্য ও পরিমিতি।
সকালের খাবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
দিনের শুরুতেই শরীরকে শক্তি দিতে হয়। অনেকেই সময়ের অভাবে সকালের খাবার বাদ দেনÑ যা শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া কমিয়ে দেয়। তাই সকালে খান এক বাটি ওটস বা লাল চালের ভাত, সঙ্গে একটি ডিম, কিছু ফল ও হালকা চা। এতে শরীর পাবে এনার্জি, আর মস্তিষ্ক কাজ করবে সতেজভাবে। সকালের নাশকতায় প্রোটিন ও ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার রাখুন, যেমন- সবজি ও পরোটা বা পালং শাকের সঙ্গে ডিম। দুপুরের খাবারে ভাত বা রুটির সঙ্গে সবজি এবং মাছ বা মুরগি যোগ করুন। রাতের খাবারে হালকা ও পুষ্টিকর খাবার রাখুন; যেমন- সবজির সঙ্গে পনির বা মুরগি।
প্রোটিনের গুরুত্ব
প্রোটিন হচ্ছে আমাদের দেহের গঠন উপাদান। এটি শুধু পেশি শক্ত রাখে না, বরং ত্বক, চুল ও নখের যত্নও নেয়। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখুন মাছ, ডিম, দুধ, ডাল, চিকেন। যারা ভেজিটেরিয়ান, তারা মুগডাল, ছোলা, বাদাম বা সয়াবিন থেকে প্রোটিন নিতে পারেন। ডিম, মুরগির মাংস, মাছ, ডাল, পনির প্রোটিনের ভালো উৎস। এ ছাড়াও স্বাস্থ্যকর চর্বি পেতে অ্যাভোকাডো, জলপাই তেল, বাদাম খেতে পারেন।
ফল ও সবজির রঙিন জগৎ
প্রতিদিন অন্তত পাঁচ ধরনের ফল ও সবজি খাওয়া উচিত। লাল, সবুজ, কমলা, হলুদÑ প্রতিটি রঙের ফল ও সবজিতে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন। শাকসবজি (যেমন- পালং শাক, ব্রকলি, ফুলকপি), ফলমূল, ওটস, গোটা শস্য, বাদাম। এগুলো শরীরকে রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে, ত্বক উজ্জ্বল রাখে এবং বার্ধক্যকে দূরে সরিয়ে দেয়।
পরিমিত কার্বোহাইড্রেট
অনেকে ওজন কমানোর আশায় ভাত, রুটি পুরোপুরি বাদ দেন। কিন্তু এটি ভুল। শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি আসে কার্বোহাইড্রেট থেকে। শুধু পরিমাণ কমিয়ে এবং প্রক্রিয়াজাত নয়, বরং স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট, যেমনÑ ব্রাউন রাইস, ওটস, মিলেট বা লাল আটার রুটি খাওয়াই ভালো।
পানি হচ্ছে সেরা ফিটনেস সঙ্গী
আরও পড়ুন:
চোখের রক্তবর্ণ ধারণের কারণ ও প্রতিকার
ডায়েটের পাশাপাশি ওজন অনুযায়ী পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি শরীর থেকে টক্সিন বের করে ত্বক রাখে হাইড্রেটেড। অনেক সময় ক্ষুধা লাগার মতো মনে হলেও আসলে শরীর পানি চায়। তাই অল্প অল্প করে সারাদিন পানি পান করা অভ্যাস করুন।
জাংক ফুড ও চিনি কমান
ফাস্ট ফুড, সফট ড্রিংক বা অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার শরীরের সবচেয়ে বড় শত্রু। এগুলো শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমায়, ত্বক নিস্তেজ করে এবং ইনসুলিনের ভারসাম্য নষ্ট করে। অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত খাবার, লাল মাংস বা প্রক্রিয়াজাত মাংসও ক্ষতিকর। মাঝে মাঝে সামান্য খাওয়া যেতে পারে, তবে অভ্যাসে পরিণত করা বিপজ্জনক।
নিয়মিত ও সচেতনতা
ফিট থাকতে ডায়েটের পাশাপাশি দরকার নিয়মিত ঘুম ও হালকা ব্যায়াম। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা যোগব্যায়াম শরীরের রক্তসঞ্চালন ভালো রাখে। ডায়েট মানে শুধু খাবার নয়, বরং পুরো জীবনযাত্রার একটি ভারসাম্যপূর্ণ রূপ।
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
শেষ কথা
ফিট থাকা মানে নিজেকে ভালো রাখা। নিজের শরীরকে ভালোবাসুন, তার প্রয়োজন বুঝুন এবং ধীরে ধীরে জীবনযাত্রায় আনুন স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন। মনে রাখবেন, নিখুঁত ডায়েট কোনো জাদু নয়Ñ এটি একটি জীবনধারা, যা আপনাকে দেবে দীর্ঘ, সুস্থ ও উজ্জ্বল জীবন।