এফডিসি কি পারবে ঘুরে দাঁড়াতে
গত এক দশকে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার ঋণজালে আটকে পড়া বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনকে নতুন করে আর অনুদান না দিয়ে বিকল্প উপায়ে সচল রাখার উপায় খুঁজছে বর্তমান সরকার। এর মধ্যে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর কথা বলে চলতি ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সরকারের কাছে ১১৮ কোটি টাকার অনুদান বা থোক বরাদ্দের আবেদন করেছে এ লোকসানি করপোরেশন। ৯ সেপ্টেম্বর তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক সভায় এফডিসির জায়গা সম্পদের বিকল্প ব্যবহার এবং সেখানে কর্মরতদের একাংশকে গোল্ডেন হ্যান্ডশেক দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সভায় উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি জানান, এফডিসিকে লাভজনক করতে করপোরেশন ভেঙে দিয়ে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ পদ্ধতিতে পরিচালনার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেক্ষেত্রে এ খাতের সফল উদ্যোক্তাদের সম্পৃক্ত করা হবে।
কিন্তু বিষয়টি মোটেও সুফল বয়ে আনবে না বলে মনে করছেন অনেকে। প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির সাবেক নেতা খোরশেদ আলম খসরু বলেন, ‘আগেও বহুবার পাবলিক-প্রাইভেট পাটনারশিপ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার ফলাফল আমরা পাইনি। বিগত দিনে এফডিসিতে উন্নত করতে অনেকগুলো প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছিল। বিএফডিসি কমপ্লেক্সসহ বেশ কিছু প্রজেক্ট চালুও হয়েছিল। সেগুলোর আসলে কোনো ভবিষ্যৎ নেই। আমরা মনে করি, যে উদ্দেশ্যে এতসব প্রজেক্ট নেওয়া হচ্ছে- এগুলো আসলে আশানুরূপ কোনো ফল দিতে পারবে না।’ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি শাহীন সুমন বলেন, ‘এফডিসি নিয়ে যে কোনো বিরূপ সিদ্ধান্ত আসলে আমরা গঠনমূলকভাবে পদক্ষেপ নেব। শুনেছি এফডিসির জায়গা বিক্রি করে দায় মেটানোর চিন্তা হচ্ছে। এখানে চলচ্চিত্রের অনেক ইতিহাস ও ঐতিহ্য আছে। যে কেউ এসে যা মন চায়, তা সিদ্ধান্ত দিতে পারবে না। কেউ চাইলেই জায়গা বিক্রি করে দেবে, এমন খামখেয়ালি সিদ্ধান্ত তো হতে পারে না। আমরা তো চুপ করে বসে থাকব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা এফডিসিকে পাবলিক পাইভেট পার্টনারশিপে নিয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করে, তারা ফায়দা লোটার চিন্তা থেকে এসব করছে।’
আরও পড়ুন:
ওটিটি প্ল্যাটফরম আমার জন্য বেশ লাকি
৯ তারিখের সভা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সেখানে এফডিসিকে লাভজনক বা সম্পদের বিকল্প ব্যবহার বলতে তারা কী বোঝাচ্ছে? এসব করে তো আমাদের একটা জায়গা নিয়ে গেছে। ৩, ৪ নম্বর বিশাল ফ্লোর ভেঙে সেখানে বড় মার্কেট তৈরি করবে বলছে। এই মার্কেটে কে আসবে মার্কেট করতে? এফডিসির গেটের সামনে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ফ্লাইওভার নিয়ে গেছে। গেটটা পর্যন্ত দেখা যায় না। মার্কেট হলে ১০ টাকারও কোনো ভেল্যু নেই। চলচ্চিত্রের কোনো লাভ হবে না। মার্কেটের ভাড়ার টাকাও আসবে না। এসব প্রজেক্ট লুটপাটের একটা ক্ষেত্র।’
সভায় ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেক’ নিয়েও আলোচনা হয়। মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এফডিসিতে কর্মরতদের বড় একটি অংশ আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছেন না। ফলে তাদের দিয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়েছে। সেই বিবেচনায় যারা এককালীন সুবিধা নিয়ে চলে যেতে ইচ্ছুক, তাদের বাদ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে এখানে কাউকে জোর করে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হবে না। সেখানে তাদের বলা হবে যে, আপনি চাকরি ছাড়লে এমন সুবিধা পেতে পারেন। সেক্ষেত্রে ব্যক্তিই তার করণীয় ঠিক করবে। এ নিয়ে একটি কমিটিও গঠন করা হবে।’ এফডিসির তথ্য অনুযায়ী, ৯০ জন কর্মচারীকে অবসরোত্তর সুবিধা দিতে ২০ কোটি টাকা প্রয়োজন। আর অবসরে চলে যাওয়া ৫৪ জনের অবসরোত্তর পাওনাদি পরিশোধে প্রয়োজন ১৩ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:
ফের জুটি হলেন মম-শ্যামল
এফডিসির এমডি মাসুমা রহমান তানি। তিনি বলেন, ‘আমাদের যা আছে, এগুলো ঠিকঠাক করে দিক, রেনোভেট করে দিক, ইকুইপমেন্টগুলো আধুনিক করে দিক। আর বিএফডিসি কমপ্লেক্সের কাজ যত দ্রুত শেষ করা যায়। তাহলে এতদিন ধরে এফডিসি যে লস দিয়ে চলছে, ভর্তুকি দিচ্ছে, ঋণ দিচ্ছে সরকার, এই ঋণটাসহ আমরা তাদের প্রফিট দিতে পারতাম। কেবল ই-টিকেটিং ব্যবস্থা চালু আর শুটিং স্পটগুলো সঠিক মূল্যে ভাড়া দিতে পারলেই যে আর্থিক সমস্যা, তা অনেকটা কেটে যাবেÑ এ বিষয়টা আমি গত আগস্ট মাসের পরিসংখ্যান দিয়েও দেখিয়েছি।’
আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, অন্যদিকে এফডিসিতে একবেলা শুটিংয়ের যে খরচা- তার চেতে কম টাকায় বাইরে কাজ করার সুযোগ থাকায় এফডিসি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন পরিচালক-প্রযোজকরা। এ পরিস্থিতিতে চলতি বছর সেবা মূল্য কমিয়েছে এফডিসি। এফডিসিতে চলছে রায়হান রাফীর ‘আন্ধার’ সিনেমার শুটিং। রাফী বলেন, ‘এফডিসির অবস্থা আগে থেকে কিছুটা ভালো। শুটিং করতে হলে যে নিয়মের বেড়াজাল ছিল, সেটা কমিয়ে আনা হয়েছে। এখনকার পরিচালক (এমডি) চেষ্টা করছেন আমাদের সঠিক সেবা নিশ্চিত করতে। এত বছরের অব্যবস্থাপনা তো খুব দ্রুত কেটে যাবে না, সময় লাগবে।’
আরও পড়ুন:
মারা গেলেন পরীমনির নানা