কোনো প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি মুক্ত না হলে তার দায় নিতে হবে প্রধানকে: দুদক কমিশনার
কোনো প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি মুক্ত না হলে তার দায় প্রতিষ্ঠান প্রধানকে নিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী। আজ সোমবার ঝালকাঠি জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত দুদকের ১৮৬তম গণশুনানিতে তিনি এ হুঁশিয়ার দেন।
তিনি বলেন, ‘আমি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী ছিলাম। ৩৩ বছর বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। আজ দুর্নীতি অক্টোপাসের মতো সমাজকে ঘিরে রেখেছে।’
মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে প্রথমেই নিজেকে অন্যের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করতে হবে। যখন কেউ অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, তখন তার শক্তি কমে যায় এবং মন্দ দূর করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।’
কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে দুদক কমিশনার বলেন, ‘আপনারা সম্মানিত ব্যক্তি, আপনাদের অর্জিত জ্ঞানের অপব্যবহার যেন না হয়। এই জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে আপনারা প্রতিষ্ঠানকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলুন। সন্তানদের প্রতিদিন নিয়মিতভাবে শুদ্ধাচার ও শিষ্টাচার শেখান। এতে তারা ভালো-মন্দের পার্থক্য বুঝবে, ভালো গ্রহণ করবে ও মন্দ বর্জন করবে। পরিবার থেকেই দুর্নীতিবিরোধী চেতনা গড়ে তুলতে হবে।’
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের আমাদের মতই কিছু মানুষ আছে, যারা সহজে শর্টকাট ব্যবস্থায় কিছু কাজ করে অনেক অর্থ আয় করতে চান। আমরা তাদেরকে দালাল বলি। তারা বিনা লাইসেন্সে, বিনা পুঁজিতে এই পথ বেছে নেয়। তাদের বড় একটি অংশ দেখা যায় সরকারি হাসপাতালে। সরকারি হাসপাতালে সরকার আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করে, কিন্তু দক্ষ টেকনিশিয়ান নেই, এই অজুহাতে সেই মেশিন নষ্ট পড়ে থাকে বলে বাইরের প্যাথলজিতে পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হয়। অথচ সরকারি হাসপাতালে এই সেবা বিনামূল্যে পাওয়ার কথা। এখন কিছু দালালচক্র রোগীদের বিভ্রান্ত করছে -‘এই রিপোর্ট ভালো হয়নি, অন্য ল্যাবে যান’। এসব দালালই সমাজের জন্য অভিশাপ।’
কমিশনার জানান, একবার তিনি নিজেও হাসপাতালে গিয়ে এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন। তিনি আরও যোগ করেন, এই দালালচক্র নির্মূলে ব্যর্থ হলে দায়ভার নিতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধানকেই। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিমুক্ত না হতে পারে, তার দায় প্রতিষ্ঠান প্রধানের।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারুণ্যের একতা, গড়বে আগামীর শুদ্ধতা' - দুদকের এই স্লোগানে জেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে সেবা প্রাপ্তিতে হয়রানির শিকার ও সেবা বঞ্চিত সাধারণ মানুষ সরাসরি তাদের অভিযোগ তুলে ধরেন। জেলার মোট ২৯টি সরকারি দপ্তরের বিরুদ্ধে শতাধিক অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে দুদকের তফসিলভুক্ত ৭৪টি অভিযোগের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিছু অভিযোগ দুদক সরাসরি অনুসন্ধান করবে এবং কিছু অভিযোগের তাৎক্ষণিক সমাধানও দেওয়া হবে। সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া এ গণশুনানি চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
গণশুনানিতে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। তারা সরাসরি দুদকের কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ উপস্থাপন করেন, যেখানে জেলা শিক্ষা অফিস, ভূমি অফিস, পাসপোর্ট অফিস, জেলা সদর হাসপাতাল, ওজোপাডিকো, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, পৌরসভা, এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ বিভিন্ন দপ্তরের হয়রানির চিত্র উঠে আসে।
দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সরকারি পরিষেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সততা, নিষ্ঠা, জবাবদিহিতা ও মূল্যবোধ বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করাই এ গণশুনানির মূল উদ্দেশ্য।
এ গণশুনানিতে মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন, বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক মোজাহার আলী সরদার এবং ঝালকাঠির পুলিশ সুপার উজ্জ্বল কুমার রায়।
গণশুনানির আয়োজন করে দুদকের ঝালকাঠি পিরোজপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়। সপ্তাহব্যাপী মাইকিং, পোস্টার, লিফলেট বিতরণ, অভিযোগ সংগ্রহ, বুথ স্থাপন ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটিকে ঘিরে ব্যাপক সাড়া পড়ে ঝালকাঠিজুড়ে।