মুরগির খামারে কাজ করেই গড়ে তুলেছেন পাঠাগার

ডাবলু কুমার ঘোষ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
১৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:০২
শেয়ার :
মুরগির খামারে কাজ করেই গড়ে তুলেছেন পাঠাগার

বাবার মুরগির খামারে দিনভর কাজ করেন কলেজছাত্র মো. নাহিদ-উজ-জামান। মুরগিকে খেতে দেওয়া থেকে বিষ্টা পরিষ্কারের যাবতীয় কাজ করেন নিজেই। মুরগি লালন-পালনের পর তা বিক্রি করে সেই উপার্জনের পুরোটা দিয়ে গড়ে তুলেছেন ‘শান্তি নিবিড়’ নামের একটি পাঠাগার। ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠিত পাঠাগারটি এখন পরিপূর্ণ প্রথম থেকে স্নাতক শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ে। এ ছাড়া রয়েছে গল্প, উপন্যাস, কবিতা, ছড়া, ধর্মগ্রন্থ, বিখ্যাত মনীষিদের জীবনীসহ ছয় হাজার বই। 

‘শান্তি নিবিড়’ পাঠাগারের নিয়মিত পাঠক মো. তাহমিদ বলেন, মুরগির খামারে শ্রম দিয়ে উপার্জিত টাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ইসরাইল মোড়ে একক প্রচেষ্টায় পাঠাগার গড়ে তুলে প্রশংসা কুড়িয়েছেন কলেজছাত্র নাহিদ। যেখানে শিক্ষার্থীরা বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত যে কোনো পাঠ্যবই, গাইড ও নোটবুক ছাড়াও অন্যান্য বই সেখানে বসে পড়ার পাশাপাশি; বাসায় নিয়ে গিয়ে পড়তে পারেন। পড়া শেষে আবার ফেরত দিয়ে যায় শিক্ষার্থীরা। এভাবেই দৈনিক অর্ধশতাধিক স্থানীয় শিক্ষার্থীরা শান্তি নিবিড় পাঠাগারে বই পড়ে ও বাসায় নিয়ে যায়। 



অন্য পাঠক মো. সিহাব বলেন, পরীক্ষায় ভালো ফলকারীদের উৎসাহিত করতে শান্তি নিবিড় পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা মো. নাহিদুজ্জামানের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় বিশেষ পুরস্কার। 

মোসা. ফাতিমা খাতুন বলেন, এলাকায় পাঠাগার প্রতিষ্ঠার পর থেকে স্থানীয় গরিব এবং অসহায় শিক্ষার্থীদের নোট বা গাইড বই কিনতে হয় না। এমন উদ্যোগে আমরা খুব খুশি।

স্থানীয় এলাকাবাসী ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, শুধু তাই নয়, পাঠাগারের পাশাপাশি বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির জন্য এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয় নাহিদ। সড়কের বিভিন্ন স্থানে বৃক্ষরোপণ ছাড়াও অসহায় দরিদ্র শিক্ষার্থী ও রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে পাশে থাকেন। 

একই এলাকার বাসিন্দা মো. মর্তুজা আলী বলেন, নাহিদ-উজ-জামান নিম্নআয়ের মানুষের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থাও করেন । তার এমন উদ্যোগে গর্বিত এলাকাবাসী।

শিবগঞ্জ উপজেলার শান্তি নিবিড় পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা মো. নাহিদ-উজ-জামান বলেন, কোনো কিছুর বিনিময়ে নয়, শুধু মানসিক শান্তি পেতে ও শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতেই এমন কাজ করছেন। তিনি আজীবন এমন সমাজসেবা করে যাবেন। 

শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজাহার আলী বলেন, নিজে একজন কলেজছাত্র হয়ে মুরগির খামারে কাজ করে উপার্জিত অর্থে পাঠাগার স্থাপন, বিনামূল্যে বই বিতরণ, বৃক্ষরোপণ এবং সামাজিক কার্যক্রমের কারণে স্থানীয় প্রশাসন বিভিন্ন সময়ে পুরস্কৃত করেছে নাহিদকে। এ ছাড়া অসহায় দরিদ্রকে সহযোগিতা ও বৃক্ষরোপণের কাজে পাশে থাকার আশ্বাস প্রশাসনের। 




নাহিদ কানসাট সোলেমান মিয়া ডিগ্রি কলেজে ডিগ্রি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। সে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সড়ক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কয়েক হাজার গাছ রোপণ এবং সাত শতাধিক শিক্ষার্থীর ফরম পূরণ ও অসহায় দরিদ্র ও অসুস্থ মানুষকে আর্থিক সহযোগিতা করেছেন।