ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবে নতুন জটিলতার শঙ্কা দেখছে বাসদ

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৩ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৫৩
শেয়ার :
ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবে নতুন জটিলতার শঙ্কা দেখছে বাসদ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪ক এর মতো স্পর্শকাতর বিষয়ের বিলুপ্তির প্রস্তাব নতুন করে জটিলতা ও বিতর্কের অবতারনা করবে বলে মনে করছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। পাশাপাশি সংবিধানের রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি বাদ দেওয়ার প্রস্তাব থেকেও কমিশনকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে দলটি। 

রোববার বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজকে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছেন। ওই চিঠির অনুলিপি সংবাদমাধ্যমেও পাঠানো হয়েছে।

এর আগে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪ক বিলুপ্তির বিষয়ে ইমেইল ও হোয়াটসঅ্যাপে বাসদের মতামত চেয়ে ৯ অক্টোবর একটি চিঠি পাঠিয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। 

চিঠিতে বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘দীর্ঘ আলোচনার পর জুলাই সনদের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আটটি প্রস্তাবিত সুপারিশে রাজনৈতিক দলসমূহ অধিকাংশ সুপারিশে সর্বসম্মত একমত হয়েছে। বেশ কিছু বিষয়ে দলসমূহের নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে। বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়েও দলসমূহের মধ্যে ঐকমত্য হয়নি।’ 

তিনি বলেন, ‘আমরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম যে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের স্বাক্ষরে কমিশন বৃহস্পতিবার দলগুলোকে যে চিঠি দিয়েছে, তাতে বলা হয়, “সংবিধানের ‘অনুচ্ছেদ এক’ বিলুপ্তির প্রস্তাব জুলাই সমলে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনা করছে।” অথচ গত ১৭ সেপ্টেম্বর ২৫ ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলসমূহের সভায় কমিশনের তরফে বলা হয়েছিল, জাতীয় সনদে আর কোনো পরিবর্তন গ্রহণ করা হবে না। সে অনুযায়ী কোনো দল জাতীয় সনদের চূড়ান্ত খসড়া নিয়ে কোনো আলোচনা না করলেও খোদ কমিশনের পক্ষ থেকেই নতুন বিষয়ে দলগুলোর মতামত চাইছে।এটা ঐকমত্য কমিশনের পূর্বেকার সিদ্ধান্তের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’

বাসদ বলছে, ‘আমরা কমিশনকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীর একটি রিট মামলায় উচ্চ আদালত এ সংক্রান্ত এক রায়ে বলেছেন, রাজনৈতিক বিষয় আগামীতে নির্বাচিত জাতীয় সংসদে নির্ধারিত হবে। আমাদের দলও তা সঠিক বলে মনে করি। সংবিধানের এক অনুচ্ছেদ নিয়ে ইতিপূর্বে কোনো সভায় আলোচনা হয়নি, অথচ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে মতামত চাওয়া হয়েছে।’

দলটি আরও বলেছে, ‘আমরা মনে করি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪ক এর মতো স্পর্শকাতর বিষয়ের বিলুপ্তির প্রস্তাব নতুন করে জটিলতা ও বিতর্কের অবতারনা করবে। আমরা কমিশনকে এই প্রস্তাব থেকে সরে আসার জন্য অনুরোধ করছি।’

বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘আমরা বিদ্যমান সংবিধানের রাষ্ট্রীয় ৪ মূলনীতি বাদ দেওয়ার প্রস্তাব থেকেও কমিশনের বিরত থাকা বাঞ্ছনীয় মনে করি। আমরা জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করতে চাই। তার জন্য উপরোক্ত বিষয়সমূহের বাপারে কমিশনের যথাযথ পজেটিভ পদক্ষেপ আশা করি। অন্যথায় আমাদের দলসহ অনেক দলের পক্ষে সনদে স্বাক্ষর করা হয়তো অসম্ভব হয়ে পড়বে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার চেতনা বাণিজ্য করে দেশকে বাইনারি পলিটিক্সের মধ্যে ঢুকিয়ে বিভেদ বিভক্তি সৃষ্টি করে দেশকে নৈরাজ্যকর অবস্থায় নিয়ে গিয়েছিল। তা থেকে মুক্তির জন্যই ছাত্র শ্রমিক জনতা ২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত করেছে। ফলে রাষ্ট্রীয় ৪ মূলনীতি বাদ দেওয়াকে ‘৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপপ্রয়াস বলে দেশবাসী ভাবতে পারে। যা দেশকে নতুন করে বিভাজনের রাজনীতির ভয়ংকর পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে আমাদের আশঙ্কা।’ 

তা ছাড়া দেশের মানুষ বিগত ফ্যাসিস্ট শাসনামলের দুর্নীতির বিচারের অগ্রগতি নিয়ে যেমন আশাবাদী হতে পারছে না, তেমনি বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের কতিপয় উপদেষ্টা ও সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সম্পর্কেও নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে তা নিয়েও জনগণ খুবই উদ্বিগ্ন, বলছে বাসদ। 

ফলে নতুন বিতর্ক তৈরি না করে নোট অব ডিসেন্ট দেওয়া সুপারিশ বাদ দিয়ে যেসব বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল সর্বসম্মতভাবে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো নিয়ে জুলাই সনদ প্রণয়ন ও সকলের স্বাক্ষরের ব্যবস্থা করুন। পাশাপাশি বিগত সরকার ও বর্তমান সময়ের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের দৃঢ় ও কার্যকর পদক্ষেপ দেশবাসী দেখতে চায় বলে চিঠিতে জানিয়েছেন বজলুর রশীদ ফিরোজ।