চুয়াডাঙ্গায় বিষাক্ত মদ পানে ৬ জনের মৃত্যু
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ এলাকায় বিষাক্ত মদ পানে গত দুদিনে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আরও তিনজন বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) জামাল আল নাসের আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ডিঙ্গেদহ বাজার এলাকায় কয়েকজন মিলে অ্যালকোহল পান করেন। এরপর একে একে অসুস্থ হয়ে বিভিন্ন সময়ে ছয়জন মারা গেছেন।
গতকাল রোববার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনের মৃত্যুর পর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে বলে জানান জামাল আল নাসের আলী। তিনি বলেন,‘আমরা প্রত্যেকের বাড়িতে যাচ্ছি এবং ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত করছি।এর মধ্যে চারজনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। তাদের পরিবারের সদস্যরা গোপন রেখেছেন বিষয়টি।’
নিহতরা হলেন- চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নফরকান্তি গ্রামের পূর্বপাড়ার ভ্যানচালক খেদের আলী (৪০), খেজুরা হাসপাতালপাড়ার মাছ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সেলিম (৪০), পিরোজখালি স্কুলপাড়ার ভ্যানচালক মোহাম্মদ লালটু ওরফে রিপু (৩০), শংকরচন্দ্র মাঝেরপাড়ার শ্রমিক মোহাম্মদ শহীদ (৪৫), ডিঙ্গেদহ টাওয়ারপাড়ার মিল শ্রমিক মোহাম্মদ সামির (৫৫) এবং ডিঙ্গেদহ এশিয়া বিস্কুট ফ্যাক্টরি পাড়ার শ্রমিক সরদার মোহাম্মদ লালটু (৫২)।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাতে ডিঙ্গেদহ বাজারে বেশ কয়েকজন মিলে মদ পান করেন। এরপর একে একে সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েন। শনিবার প্রথমে খেদের আলী ও সেলিমের মৃত্যু হয়। পরদিন রোববার দিনভর মারা যান বাকি চারজন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ডিঙ্গেদহ বাজারে গোপনে দেশি মদ বিক্রি হয়ে আসছে। প্রশাসনের উদাসীনতার কারণেই এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করছেন তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা বলেন, ডিঙ্গেদহসহ আশপাশের এলাকায় অনেকদিন ধরেই গোপনে মদ বিক্রি হয়। কেউ কিছু বললে হুমকি দেয়।এখন ছয়জনের প্রাণ গেল, তবু যদি প্রশাসন সজাগ হয়।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আলিম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা ভুট্টার গাড়ির লোডের কাজ করি। আমাদের সর্দার স্পিরিট পান করান। আমি অল্প পরিমাণে খেয়েছিলাম। কয়েকদিন পর আমরা সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ি।’
জানতে চাইলে শংকরচন্দ্র ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য দুলু মিয়া বলেন, ‘ডিঙ্গেদহ বাজারে এক জায়গায় কয়েকজন একসঙ্গে মদ পান করেন। আমার ওয়ার্ডের দুজন মারা গেছেন, আরও কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে বলে শুনেছি।’
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আফরিনা ইসলাম বলেন, ‘রোববার বিকেলে লান্টু মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে জরুরি বিভাগে আনা হয়।পরিবারের সদস্যরা জানান, তিনি দুদিন আগে অ্যালকোহল পান করেছিলেন। আমি প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে ওয়ার্ডে পাঠাই। সন্ধ্যা ৭টা ৩২ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।’
পুলিশ জানিয়েছে, গত দুদিনে মোট ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। মৃত্যুর কারণ ও অ্যালকোহলের উৎস অনুসন্ধানে তদন্ত চলছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) খালেদুর রহমান বলেন, ‘মদ পানে ছয়জনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্মকতাসহ আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে, তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।’