চেনেন নাকি এই নোবেলজয়ী নারীকে
মারিয়া কোরিনা মাচাদো
এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন মারিয়া কোরিনা মাচাদো। গণতন্ত্রের আলো জ্বেলে নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতে নিলেন ভেনেজুয়েলার
এই লৌহমানবী। এমন এক সময়ে এই পুরস্কার জিতলেন, যখন তিনি প্রাণভয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। তবে পালিয়ে অন্য কোনো দেশে গিয়ে নয়,
বরং ভেনেজুয়েলাতেই রয়েছেন তিনি। ইন্টারনেট থেকে তথ্য নিয়ে আরও বিস্তারিত জানাচ্ছন আজহারুল ইসলাম অভি
জন্ম
মারিয়া কোরিনা মাচাদো ১৯৬৭ সালের ৭ অক্টোবর ভেনেজুয়েলার কারাকাসে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তোরোর তৃতীয় মার্কুইসয়ের বংশধর। মনোবিজ্ঞানী কোরিনা প্যারিসকা এবং ইস্পাত ব্যবসায়ী হেনরিক মাচাদো জুলোয়াগার চার কন্যার মধ্যে জ্যেষ্ঠ কন্যা মারিয়া কোরিনা মাচাদো।
পড়াশোনা
মাচাদো আন্দ্রেস বেলো ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিল্প প্রকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি এবং কারাকাসের ইনস্টিটিউটো দে এস্তুডিওস সুপেরিওরেস দে অ্যাডমিনিস্ট্রাসিওন (আইইএসএ, বিজনেস স্কুল) থেকে অর্থসংস্থানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি ২০০৯ সালে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার্ল্ড ফেলোজ প্রোগ্রামের অংশও ছিলেন।
অ্যাথেনিয়া ফাউন্ডেশন
১৯৯২ সালে মাচাদো ফানদাসিওন আতেনেয়া (অ্যাথেনিয়া ফাউন্ডেশন) প্রতিষ্ঠা করেন, যেটি মূলত একটি বেসরকারি দান সংস্থা। এই সংস্থার প্রধান কাজ কারাকাসের পথশিশু, এতিম ও অপরাধী তরুণদের দেখাশোনা করা। তিনি অপরটুনিটাস ফাউন্ডেশন-এর চেয়ারপারসন হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ভালেনসিয়ায় অটো শিল্পে কাজ করার পর তিনি ১৯৯৩ সালে কারাকাসে চলে আসেন। সুমাতে-তে তার ভূমিকার কারণে, মাচাদো ফাউন্ডেশনটি যাতে রাজনীতিকরণ না হয় সে জন্য এটি ত্যাগ করেন।
রাজনৈতিক পথচলা
২০১০ সালে মাচাদো রেকর্ডসংখ্যক ভোট পেয়ে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে তৎকালীন প্রশাসন তাকে পদচ্যুত করে। এর আগ পর্যন্ত তিনি পদে ছিলেন। পরে তিনি ভেন্টে ভেনেজুয়েলার জাতীয় সমন্বয়ক হন। ২০১২ সালে ভেনেজুয়েলায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘ভেন্টে ভেনেজুয়েলা’ নামের উদার এই রাজনৈতিক দল। এই দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মারিয়া মাচাদো। বর্তমানে তিনি দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ভেন্টে ভেনেজুয়েলার সমন্বয়ক হওয়ার ৫ বছর পর মাচাদো সয় ভেনেজুয়েলা অ্যালায়েন্স গড়তে সহায়তা করেন, যার লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত দলগুলো থেকে গণতন্ত্রপন্থি শক্তিকে একত্রিত করা।
ট্রাম্পকে উৎসর্গ
এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ৩৩৮টি মনোনয়ন জমা পড়েছিল। তার মধ্যে ৯৪টি সংগঠনের সম্মাননার জন্য মনোনয়ন জমা পড়ে। সেই তালিকায় ছিল আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প সেটি জেতেননি। ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেত্রী মারিয়াকেই এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কার দিচ্ছে নোবেল কমিটি। কেন ট্রাম্পকে শান্তি পুরস্কার দেওয়া হলো না, তা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। তবে মজার ব্যাপার হলো, এত সব প্রশ্নের মাঝে ট্রাম্পকে তার নোবেল শান্তি পুরস্কার উৎসর্গ করেছেন মারিয়া। তার কথায়, ‘গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা অর্জনের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার জনগণকে আমাদের প্রয়োজন।’ ট্রাম্পকে ‘বন্ধু’ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন মারিয়া। শেষে মারিয়া জানান, তার এই পুরস্কার তিনি ভেনেজুয়েলার জনগণ এবং ট্রাম্পকে উৎসর্গ করছেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
আরও পড়ুন:
রোগীর পেটে জীবন্ত মাছি!
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ইতিহাস আছে মাচাদোর। তিনি ২০১২ সালে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন, কিন্তু বিরোধীদলীয় প্রাইমারিতে হেনরিক ক্যাপ্রিলেস-এর কাছে পরাজিত হন। ২০১৪ সালে ভেনেজুয়েলা বিক্ষোভের সময়, মাচাদো নিকোলাস মাদুরো সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সংগঠনে অগ্রণী ব্যক্তিত্বদের একজন ছিলেন। ২০১৯ সালে, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট সংকট-এর মধ্যেই, তিনি ঘোষণা করেন- যদি বিতর্কিত অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হুয়ান গুয়াইদো সফলভাবে একটি নির্বাচনের আহ্বান করেন, তাহলে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হবেন। গুয়াইদো শেষ পর্যন্ত তার প্রচেষ্টায় সফল হননি।
প্রভাবশালী নারী
২০১৮ সালে ভেনেজুয়েলার রাজনীতিবিদ মারিয়া কোরিনা মাচাদোকে বিবিসি তাদের ১০০ জন প্রভাবশালী নারীর একজন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। এ ছাড়া ২০২৫ সালে টাইম ম্যাগাজিন তাকে বিশ্বের ১০০ সর্বাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির একজন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।এতে করে তিনি তার দেশের মানুষের হৃদয়েও বিশেষ স্থান দখল করেন।
সুমাতে প্রতিষ্ঠা
ভেনেজুয়েলার স্বেচ্ছাসেবী বেসামরিক সংস্থা সুমাতে-এর প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ২০০১ সালে একটি হোটেলের লবিতে মাচাদো ও আলেহান্দ্রো প্লাজ-এর একটি আকস্মিক সাক্ষাতের ফলশ্রুতিতে, যেখানে তারা ভেনেজুয়েলার যে ভাগ্য নির্ধারিত হচ্ছিল সে বিষয়ে তাদের উদ্বেগ ভাগ করে নেন। মাচাদো বলেছিলেন, ‘কিছু একটা মিলে গেল। আমার এত অশান্তিকর অনুভূতি হয়েছিল যে, আমি বাড়িতে বসে দেশকে বিভক্ত হয়ে পড়তে এবং ভেঙে পড়তে দেখতে পারছিলাম না... আমাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়া চালু রাখতে হয়েছিল কিন্তু গতিপথ পরিবর্তন করতে হয়েছিল, যাতে ভেনেজুয়েলার জনগণকে নিজেদের গণনা করার সুযোগ দেওয়া যায়, উত্তেজনা বাড়ার আগেই তা প্রশমিত করা যায়। এটি ছিল বুলেটের বদলে ব্যালট পছন্দ।’
সুমাতে উগো চাভেসের ২০০৪ ভেনেজুয়েলা স্মরণিকা গণভোট-এর জন্য একটি প্রচারণা চালায়। গণভোটের পর, সুমাতের সদস্যদের, মাচাদোসহ, ভেনেজুয়েলার দণ্ডবিধির ধারা ১৩২-এর অধীনে রাষ্ট্রদ্রোহ ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। নোবেল পুরস্কার ঘোষণার সময় কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মাচাদোর প্রতিষ্ঠিত সুমাতে এবং তিনি নিজে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ২০ বছর ধরে লড়াই জারি রেখেছেন। দেশটির স্বাধীন বিচারব্যবস্থা, মানবাধিকার এবং জনপ্রতিনিধিত্বের জন্য কথা বলে যাচ্ছেন।
ষড়যন্ত্রের ১৫ বছর
তিনি ভেন্তে ভেনেজুয়েলার পক্ষ থেকে ২০২৩ সালের ইউনিটারি প্ল্যাটফর্মের প্রাইমারি নির্বাচনে প্রাক-প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু সে বছরের ৩০ জুন ভেনেজুয়েলার নিয়ন্ত্রক মহাপরিদর্শক তাকে পনেরো বছরের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করেন। তার এই অযোগ্যতা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ভেনেজুয়েলার সুপ্রিম কোর্ট দ্বারা নিশ্চিত করা হয়। প্রাইমারি নির্বাচনে জয়লাভের পর, মাচাদোকে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিরোধীদলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ২০২৪ সালের ২২ মার্চ তাকে প্রতিস্থাপন করা হয় করিনা ইয়োরিসকে দিয়ে। ইয়োরিসকেও প্রার্থী হিসেবে নিবন্ধন করতে বাধা দেওয়া হয় এবং তাকে সাময়িকভাবে প্রতিস্থাপন করা হয় এডমুন্ডো গনজালেস উরুতিয়াকে দিয়ে।
বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধকারী
নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলেও মাচাদো দেশটির বিভক্ত বিরোধীদলগুলোকে একত্র করতে সক্ষম হন। তিনি নিজের পরিবর্তে প্রার্থী এডমুন্ডো গনজালেসের পক্ষে প্রচারণা চালান। ভোটের প্রাথমিক ফলাফল গনজালেসের জয়ের ইঙ্গিত দিলেও সরকার নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন কমিশন পরে মাদুরোকে বিজয়ী ঘোষণা করে।
যে কারণে লৌহমানবী
মারিয়া কোরিনা মাচাদোকে ভেনেজুয়েলার ‘লৌহমানবী’ (ওৎড়হ খধফু) বলা হয় মূলত তার অদম্য সাহস, দৃঢ় সংকল্প, এবং দীর্ঘকাল ধরে কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য অক্লান্ত লড়াইয়ের কারণে। তার এই উপাধি পাওয়ার মূল কারণগুলো হলো :
কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে অবিচল লড়াই
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
তিনি ভেনেজুয়েলার সাবেক প্রেসিডেন্ট হুগো চাভেজ এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে এক নির্ভীক ও উচ্চকিত কণ্ঠস্বর।
গণতন্ত্রের প্রতি দৃঢ়তা
তার রাজনৈতিক জীবন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, সুষ্ঠু নির্বাচন এবং দেশের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষার দাবিতে নিবেদিত। তিনি বারবার দমন-পীড়ন, গ্রেপ্তার, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার হওয়া সত্ত্বেও নিজ অবস্থান থেকে সরে আসেননি।
নেতৃত্ব ও সংকল্প
সংকটজর্জরিত ভেনেজুয়েলায় তিনি বিরোধী শক্তিকে একত্রিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন এবং লাখ লাখ মানুষকে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামে অনুপ্রাণিত করেছেন। তার এই দৃঢ়তা ও হার না মানা মানসিকতার জন্য তাকে ‘লৌহমানবী’ বলা হয়, যে উপাধি একসময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারকেও দেওয়া হয়েছিল।
ঝুঁকি সত্ত্বেও দেশে অবস্থান
জীবননাশের হুমকি ও গ্রেপ্তারের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তিনি আত্মগোপনে থেকে দেশেই অবস্থান করছেন এবং সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন, যা তার অদম্য সাহসের পরিচয়।
যে কারণে নোবেল পেলেন
নোবেল কমিটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ভেনেজুয়েলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে নিরলস প্রচেষ্টা এবং ন্যায্য ও শান্তিপূর্ণভাবে স্বৈরশাসনের উৎখাত করে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগ্রামের জন্য মাচাদোকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এক বছর ধরে আত্মগোপনে আছেন মাচাদো। তার জীবন গুরুতর হুমকির মুখে থাকা সত্ত্বেও তিনি দেশেই আছেন, যা লাখ লাখ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি দেশের বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করেছেন। ভেনেজুয়েলায় সামরিকীকরণের বিরুদ্ধে তিনি সব সময় সোচ্চার ছিলেন। শান্তিপূর্ণভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সব সময় ছিলেন অটল। স্বৈরশাসকরা যখন ক্ষমতা দখল করে, তখন যারা স্বাধীনতা রক্ষায় সাহসী ভূমিকা রাখেন, তাদের চিহ্নিত করা এবং তাদের উদ্দীপনা ও প্রতিরোধকে স্বীকৃতি দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে নোবেল কমিটি। তাই মাচাদোকে এই সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে।
শেষ প্রকাশ্যে আসা
আত্মগোপনে থেকেও মাচাদো ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং দেশ ছাড়তে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
বিবিসির তথ্য মতে, এ বছরের জানুয়ারিতে তিনি এক বিক্ষোভে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য প্রকাশ্যে আসেন। পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হলেও অল্প সময়ের মধ্যেই ছেড়ে দেওয়া হয়।
আত্মগোপনের কারণ
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
২০২৩ সালে বিরোধীদলীয় প্রাইমারি নির্বাচনে ৯২ শতাংশ ভোটে বিশাল জয় পেয়েছিলেন মাচাদো। তার সমাবেশগুলোতেও বিপুল লোকসমাগম হয়েছিল। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ভেনেজুয়েলায় অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু মাচাদোর ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। ফলে মাচাদো বিরোধীদলীয় প্রার্থী হিসেবে এডমুন্ডো গঞ্জালেসকে সমর্থন দেন এবং তার পক্ষে প্রচার চালিয়েছিলেন। তবে ২০২৪ সালে ভেনেজুয়েলার নির্বাচনের ফল নিয়ে নিয়ে ব্যাপক বিরোধ দেখা দেয়। জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে বর্তমান প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে। দেশটির নির্বাচন কর্তৃপক্ষ প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকেই জয়ী ঘোষণা করে। তবে বিরোধীরা এই ফল প্রত্যাখ্যান করে। ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলে তারা দাবি করে, নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থী এডমুন্ডো গঞ্জালেস জয়ী হয়েছেন। ভোটের ফল প্রকাশের পর তা বাতিলের দাবিতে ভেনেজুয়েলাজুড়ে বিক্ষোভ হয়। প্রেসিডেন্ট মাদুরো কঠোর হাতে বিক্ষোভ দমন করেন। এতে ২০ জনের বেশি বিক্ষোভকারী নিহত হয়। সরকারের দমন-পীড়নের মুখে বিরোধী নেতা গঞ্জালেস আত্মগোপনে থাকার পর দেশ ছাড়েন। জীবনের ঝুঁকি থাকায় আত্মগোপনে যেতে হয় মারিয়া কোরিনা মাচাদোকেও। তবু তাকে দমানো যায়নি। মাদুরোর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বিক্ষোভ চললেও মাচাদো নির্যাতন, নিষেধাজ্ঞা ও হুমকির মুখেও তার লড়াই থামাননি।
নোবেল পরবর্তী প্রতিক্রিয়া
‘ওহ ঈশ্বর- আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।... আমি আপনাদের অনেক ধন্যবাদ জানাই। আমার আশা, আপনারা বুঝবেন এটি একটি আন্দোলন, এটি পুরো সমাজের অর্জন। আমি শুধু একজন মানুষ। আমি কোনোভাবেই এর যোগ্য নই।’ নোবেল পুরস্কার লাভের পর মারিয়া কোরিনা মাচাদো এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
যত সমালোচনা
মায়ের কাছে সমালোচিত
মাচাদো যে কেবল প্রশংসিতই হয়েছেন সব সময় তা কিন্তু নয়। কখনও কখনও তিনি আত্মকেন্দ্রিক বা অহংকারী হিসেবেও সমালোচিত হয়েছেন। এমনকি তার মা-ও তার এই বৈশিষ্ট্যের সমালোচনা করেছেন।
নিজ দেশে বিদেশি হস্তক্ষেপের আহ্বান
মাচাদো ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বিদেশি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছিলেন। নোবেল জয়ের পর তার অতীত এই পদক্ষেপ নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। ২০১৮ সালে ইসরায়েল ও আর্জেন্টিনার নেতাদের উদ্দেশে লেখা এক চিঠিতে নিজ দেশের ‘শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের’ জন্য সহায়তা চান তিনি। চিঠিটি অনলাইনে প্রকাশ করে মাচাদো লিখেছিলেন, ‘আজ আমি আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট মৌরিসিও মাক্রি এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে চিঠি পাঠাচ্ছি, যাতে তারা নিজেদের প্রভাব ও শক্তি ব্যবহার করে ভেনেজুয়েলার মাদক ও সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত অপরাধী শাসনব্যবস্থাকে গুঁড়িয়ে দিতে সহায়তা করেন।’
নোবেল পাওয়ার পর সমালোচনা
ভেনেজুয়েলার গণতন্ত্রপন্থি নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো চলতি বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার পর তা নিয়ে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, মাচাদো ইসরায়েলের সমর্থক এবং গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন।