তেলের গুণে রূপ
রূপচর্চায় তেল একটি অতি উপকারী উপকরণ। মাথার চুল থেকে পায়ের ত্বক পরচর্যায় তেলের কোনো জুড়ি নেই। তাই সুন্দর, মসৃণ, লাবণ্যময় ত্বক এবং ঘন, কালো স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল পেতে নানা রকম তেলের ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা রীতা।
সেই প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ ত্বক ও চুলের পরিচর্যায় তেলের ব্যবহার করে আসছে। বাড়ির বয়স্কদের গোসলের আগে গায়ে, মাথায় তেল মাখতে আমরাও দেখেছি। হালের বিউটি টিপসেও পাওয়া যায় আগের রাতে অথবা গোসলের ঘণ্টা দুয়েক আগে চুলে তেল রেখে শ্যাম্পু করার পরামর্শ পাওয়া যায়।
তেল হচ্ছে সবচেয়ে প্রাচীন ক্লিনজার। এখনো মানুষ ত্বকের মেকআপ তুলতে তেল ব্যবহার করে। শুষ্ক ও নির্জীব ত্বকে তেল অত্যন্ত উপকারী। তাই আধুনিক রূপচর্চায়ও তেলের কদর বেড়েই চলেছে। বললেন, রাহিমা সুলতানা রীতা।
তিনি বলেন, ‘আগে তো তেল বলতে আমরা বুঝতাম নারকেল তেল, সরিষার তেল ও অলিভ অয়েল। কিন্তু বর্তমানে রূপচর্চায় যোগ হয়েছে আরও অনেক রকমের তেল। এমনকি আয়ুর্বেদ গবেষণায় এমন অনেক তেল আবিষ্কৃত হয়েছে যা শরীরের ব্যথা উপশমকারী। যেমন- কালিজিরার তেল, সরবিন্দ তেল, তিলের তেল।’
এ ছাড়া রূপ ও চুল পরিচর্যায় বর্তমান সময়ে যেসব তেলের ব্যবহার হচ্ছে, সেগুলো হলো- নারকেল তেল, অলিভ অয়েল, অ্যাসেনশিয়াল অয়েল, ক্যাস্টর অয়েল, জোজোবা অয়েল, আমন্ড অয়েল, ল্যাভেন্ডার অয়েল ইত্যাদি। তবে শুধু তেল সংগ্রহ করলেই হবে না। জানতে হবে তেলের সঠিক ব্যবহারও। অর্থাৎ কোন তেল কোন কাজে ব্যবহার করতে হবে সেটা জেনে-বুঝে তার পর ব্যবহার করতে হবে। তবেই পাবেন তেলের গুণাগুণ।
এবার চলুন জেনে নিই ত্বকের পরিচর্যায় তেলের ব্যবহার সম্পর্কে-
তৈলাক্ত ত্বক
আপনার ত্বক যদি হয় তৈলাক্ত প্রকৃতির, তা হলে তো তেলের ব্যবহার করতে হবে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। কারণ তৈলাক্ত ত্বক এমনিতেই ব্রণ ও অ্যাকনেপ্রবণ। তার ওপর যদি তেল লাগান তাহলে অ্যাকনে আরও বেড়ে যাবে। তাই হালকা কোনো তেল হবে আপনার ত্বকের জন্য যথার্থ। যেমন- জোকোবা অয়েল, নারকেল তেল বা ল্যাভেন্ডার অয়েল। তাও মাত্র কয়েক ফোঁটাই যথেষ্ট। তৈলাক্ত ত্বকে তেলের সঙ্গে পানি মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বক তেল চিটচিটে হবে না।
শুষ্ক ত্বক
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
আপনার ত্বক শুষ্ক বা খসখসে হলেই যে একগাদা তেল মাখলে সব সমস্যার সমাধান হবে, তা কিন্তু নয়। তাই আপনার ত্বকের পরিচর্যায় উপযোগী তেল বেছে নিন। আপনার ত্বকের জন্য উপযুক্ত তেল হচ্ছে- স্যান্ডালউড, আমন্ড, রোজ, অলিভ, ক্যাস্টর ইত্যাদি।
স্বাভাবিক ত্বক
আপনার ত্বক যদি হয় স্বাভাবিক প্রকৃতির তা হলে সব ধরনের তেলই আপনার ব্যবহার উপযোগী। তবে সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত হবে জেসমিন, আমন্ড, ল্যাভেন্ডার ইত্যাদি। তবে মিশ্র প্রকৃতির ত্বকে দুই ধরনের তেল ব্যবহার করতে পারেন।
কীভাবে ব্যবহার করবেন
রূপচর্চায় তেল ব্যবহার করার কিছু নিয়মনীতিও কিন্তু আছে। তেল লাগালে ত্বক তেল চিটচিটে হয়ে যায় বলে অনেকেই তেল লাগাতে চান না। আবার তেল লাগিয়ে বাইরে বের হলে ত্বকে ধুলো-ময়লা আটকায় বেশি। তাই বাইরে থেকে ফিরে সন্ধ্যা বা রাতে তেল ব্যবহার বেশি নিরাপদ। ফ্রেশ হয়ে বা গোসলের পর ময়েশ্চারাইজারের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা তেল মিশিয়ে সারা শরীরেই লাগাতে পারেন। ত্বক বেশি শুষ্ক হলে তেল আরও একটু বেশিও নিতে পারেন। এ ছাড়া-
* শুষ্ক ত্বকে মসৃণতা আনতে ১ চা চামচ মধুর সঙ্গে কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল মিশিয়ে লাগিয়ে নিন। ২০-২৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
* ত্বক স্ক্রাবিং করতে অলিভ অয়েলের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে কয়েক মিনিট ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন।
আরও পড়ুন:
জ্বালানি তেল চুরিতে দুশ্চিন্তায় সরকার
* ত্বক ডিপ ক্লিন করতে নারকেল তেলের সঙ্গে সামান্য বেকিং সোডা মিশিয়ে মুখে, হাতে, গলায় আলতোভাবে ম্যাসাজ করে কয়েক মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
* ত্বকের অ্যাকনে দূর করতে নারকেল তেলের সঙ্গে এক চিমটি হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে লাগান। ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
* চোখের পাপড়ি ঘন করতে প্রতিদিন ক্যাস্টর অয়েল লাগান।
* পায়ের ত্বক খসখসে হয়ে গেলে অলিভ অয়েলের সঙ্গে মধু মিশিয়ে লাগান। আধা ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলুন।
* নিয়মিত তেল ম্যাসাজ করলে রঙ উজ্জ্বল হয়। নারকেল তেলের সঙ্গে নিমপাতা ও রসুন ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে জয়েন্টে ম্যাসাজ করলে জয়েন্টের ব্যথা সেরে যায়।
* কালিজিরার তের ত্বকের মেসতার দাগ সারাতে সাহায্য করে। এই তেল ত্বকের বলিরেখাও দূর করে।
* যাদের সাইনাসের সমস্যা আছে, তারা সরবিন্দ অয়েল নাকের দুইপাশে দুই ফোঁটা লাগাবেন। এতে ভেতর থেকে কফ বের হয়ে পরিস্কার হয়ে যাবে। মাথা ব্যথাও কমে যাবে।
চুলের যত্নে তেল
আরও পড়ুন:
জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন
চুলের যত্নে তেলের ব্যবহার নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। শীত, গ্রীষ্ম সব ঋতুতেই চুলে তেল লাগাতেই অভ্যস্ত আমরা। কিন্তু বাইরে ধুলো-বালি ও পলিউশন বাড়ায় তেলের ব্যবহার আজকাল কমেছে। বরং রাতে চুলে তেল লাগিয়ে সকালে শ্যাম্পু করতেই এখন অভ্যস্ত আমরা। তবে চুলে পুষ্টি জোগাতে, চুল পড়া রোধ করতে এবং চুলের অন্যান্য সমস্যা সমাধানে তেল অন্য উপায়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন-
* পাকা কলা চটকে তার সঙ্গে আমন্ড অয়েল মিশিয়ে পুরো চুলে লাগিয়ে রাখুন দুই ঘণ্টা। এরপর শ্যাম্পু করে ফেলুন। এতে চুল পুষ্টি পাবে।
* চুল ঘন করতে নারকেল তেলের সঙ্গে পেঁয়াজের রস মিশিয়ে লাগান। ঘণ্টাখানেক পর শ্যাম্পু করে ফেলুন।
* চুলের রুক্ষতা কমাতে অলিভ অয়েল, নারকেল তেলের সঙ্গে ১টা ডিম ভালো করে মিশিয়ে নিন। তার পর পুরো চুলে মিশ্রণটা লাগিয়ে দুই ঘণ্টা রেখে চুল শ্যাম্পু করে নিন।
* চুলে বেশি খুশকি হলে নারকেল তেল হালকা গরম করে তার সঙ্গে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে স্ক্যাল্পে লাগান। ১০ মিনিট পর চিকন দাঁতের চিরুনি দিয়ে মাথা আঁচড়ে নিন। এর পর গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে নিংড়ে তোয়ালে মাথায় জড়িয়ে রাখুন। এর পর শ্যাম্পু করে ফেলুন। সপ্তাহে একবার করলে বেশ উপকার পাবেন।
* নিয়মিত চুলে তেল ম্যাসাজ করলে স্ক্যাল্পে রক্ত চলাচল বাড়ে। এত চুল হয় স্বাস্থ্যোজ্জ্বল এবং চুল পড়া রোধ হয়। তিলের তেলও চুল পড়া কমায়।