লন্ডনে ফিলিস্তিনপন্থী সমাবেশে হাজারো মানুষের ঢল

এস ইসলাম, লন্ডন থেকে
১২ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:২৭
শেয়ার :
লন্ডনে ফিলিস্তিনপন্থী সমাবেশে হাজারো মানুষের ঢল

ফিলিস্তিনপন্থী হাজারো জনতা গতকাল শনিবার সেন্ট্রাল লন্ডনে সমবেত হয়। গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার একদিন পর এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

‘প্যালেস্টাইন কোয়ালিশন’-এর উদ্যোগে আয়োজিত এই বিক্ষোভটি বিকেলে ভিক্টোরিয়া এমব্যাঙ্কমেন্ট থেকে শুরু হয়ে হোয়াইট হল পর্যন্ত অগ্রসর হয়। সেখানে একটি সমাবেশের আয়োজন করা হয়, যেখানে বক্তারা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যুদ্ধবিরতিকে ‘ইতিবাচক হলেও অনিশ্চিত’ বলে মন্তব্য করেন।

র‌্যালিতে অংশ নেওয়া হাজারো মানুষ ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে নিয়ে ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজ অতিক্রম করেন। পাশাপাশি অল্পসংখ্যক পাল্টা বিক্ষোভকারী ইসরায়েলি পতাকা ও ‘জিম্মিদের মুক্তির দাবি’ লেখা পোস্টার নিয়ে উপস্থিত ছিলেন।

মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, জনশৃঙ্খলা আইন ভঙ্গসহ বিভিন্ন অপরাধে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, একদল পাল্টা বিক্ষোভকারী অনুমোদিত এলাকা ভেঙে মূল মিছিলে প্রবেশের চেষ্টা করলে সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়। তবে কর্মকর্তারা দ্রুত হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের হাতে ‘স্টপ আর্মিং ইসরায়েল’ ও ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করতে দেখা যায়। অনেকেই কেফিয়েহ স্কার্ফ ও অন্যান্য প্রতীকী সামগ্রী ক্রয় করেন এবং পুরো এলাকা ফিলিস্তিনপন্থী স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে। 

প্যালেস্টাইন সলিডারিটি ক্যাম্পেইনের পরিচালক বেন জামাল বলেন, ‘আমরা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন কখনো বন্ধ করব না। এই যুদ্ধবিরতি কেবল অস্থায়ী, কারণ এটি সংঘাতের মূল কারণগুলোর কোনো সমাধান দেয়নি।’

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গৃহীত যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ কার্যকর হলেও পরবর্তী ধাপগুলো নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে। এতে গাজা প্রশাসন, ইসরায়েলি বাহিনীর প্রত্যাহার এবং হামাসের নিরস্ত্রীকরণ- এসব জটিল ইস্যুতে সমঝোতা কঠিন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টার্মার সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, সরকার ধারাবাহিক প্রতিবাদ সমাবেশ ও সমাবেশে উচ্চারিত কিছু স্লোগান নিয়ন্ত্রণে নতুন বিধি-নিষেধ প্রণয়নের বিষয়টি বিবেচনা করছে। গত সপ্তাহে ম্যানচেস্টারের এক সিনাগগে সন্ত্রাসী হামলায় দুই ইহুদি নাগরিক নিহত হওয়ার পর তিনি ফিলিস্তিনপন্থী সমাবেশ স্থগিত রাখার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

তবে প্রতিবাদ থেমে থাকেনি। গত সপ্তাহেও ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’ নামের একটি গোষ্ঠীর সমর্থনে কেন্দ্রীয় লন্ডনে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রায় ৫০০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলার পর থেকে গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সেই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি নাগরিক নিহত ও ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। পরবর্তী সময়ে হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৬৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে প্রায় ১৮ হাজার শিশু।