‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হারালো’
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সর্বস্তরের মানুষ। আজ শনিবার জাতীয় কবিতা পরিষদ উদ্যোগে অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।
এ সময় অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের স্মৃতিচারণ করে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজ তাদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষককে হারালো।’
এর আগে অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হয় সকাল ১১টায়।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যক্তিবর্গরা উপস্থিত ছিলেন শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম স্যারের স্মৃতিচারণ করে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমি স্যারের খুব কাছেই থাকতাম। স্যারকে যখনই দেখতাম, তিনি এমন এক মিষ্টি হাসি দিতেন, মনজুড়ানো এক হাসি। আমার কাছে সবসময় মনে হতো, কারও আত্মা যদি পরিষ্কার না হয়, হৃদয় যদি খুব বিশুদ্ধ না হয় তাহলে এমন হাসি দেওয়া সম্ভব নয়।’
আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ছিলেন অত্যন্ত নির্লোভ একজন মানুষ। তার নিজস্ব রাজনৈতিক বিশ্বাস ছিল, আর আমাদের মাঝে মতের পার্থক্যও হতো। কোনো কোনো বিষয়ে আমরা দ্বিমত করতাম, কিন্তু তাতে সম্পর্কের কোনো দূরত্ব তৈরি হতো না। তিনি নিজের বিশ্বাসে অটল ছিলেন, কখনও কোনো লোভে নয় নিজের বিবেকের তাগিদেই কাজ করতেন।’
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামকে একজন মহান লেখক ও অসাধারণ চিত্রসমালোচক মন্তব্য করে আসিফ নজরুল বলেন, ‘তার আরেকটি বিশেষ গুণ ছিল নতুন লেখকদের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা। বাংলাদেশে আমি খুব কম মানুষকেই দেখেছি, যারা জীবিত অন্য লেখকদের এভাবে প্রশংসা করেছেন।’
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘একজন শিক্ষক, একজন লেখক, একজন বিশ্লেষক আমাদের মধ্য থেকে চলে গেছেন। আমার সঙ্গে তার সম্পর্কটা কিছুটা পেশাকেন্দ্রিক হলেও, বেশিটাই ছিল ব্যক্তিগত। স্যার এমন একজন মানুষ ছিলেন , যাকে সবাই সম্মান করতেন—তার জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও সততার জন্য।’
অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের স্মৃতিচারণ করে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘তিনি পরিবেশ বিষয়ক বেশ কিছু ইস্যুতে আমার সঙ্গে একসাথে কাজ করেছেন। অনেক বিবৃতিতে আমরা যৌথভাবে স্বাক্ষর করেছি, আবার এমনও হয়েছে কিছু বিবৃতিতে তিনি আমার সঙ্গে স্বাক্ষর করতে চাননি। এর কারণ কোনো ব্যক্তিগত বিরোধ ছিল না, তার নিজস্ব এক নীতিগত অবস্থান ছিল, বিশ্বাসের জায়গা থেকে নেওয়া সিদ্ধান্ত।’
রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজ তাদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষককে হারালো। ছাত্র সমাজ হারালো এক প্রজ্ঞাবান, নিবেদিতপ্রাণ, শ্রেষ্ঠ শিক্ষককে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়াগুলোতেও দেখা গেছে সবাই আশা করছিলেন কোনো এক মিরাকল ঘটবে, তিনি আবার ফিরে আসবেন।’
এর আগে গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি স্ত্রী, এক পুত্রসহ অসংখ্য স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।