রেখাকে ‘জোর করে চুমু’ দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে যা বললেন বিশ্বজিৎ

বিনোদন ডেস্ক
১১ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৫৯
শেয়ার :
রেখাকে ‘জোর করে চুমু’ দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে যা বললেন বিশ্বজিৎ

বলিউড সুপারস্টার বিশ্বজিৎ চ্যাটার্জির হাত ধরে সিনেমার জগতে পা রাখেন অভিনেত্রী রেখা। একসঙ্গে কয়েকটি সিনেমাতে কাজও করেন তারা। পরে অবশ্য পর্দায় রেখাকে জোর করে চুমু দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছেন বিশ্বজিৎ।

এ বলিউড অভিনেতা বলেন, ‘আমি তখন মাদ্রাজে, এখনকার চেন্নাইয়ে। দুই শিফটে শুটিং করছি। হঠাৎ একদিন রেখার মা পুষ্পাদবলী মেয়েকে নিয়ে এলেন। রেখা তখন ভানুরেখা গণেশন। ওর বাবা জেমিনি গণেশনের সঙ্গে ভালোই পরিচয় ছিল। মাত্র ১৫-১৬ বছরের মেয়েটিকে দেখে আমি অবাক! এত ছোট মেয়ে কী অভিনয় করবে?’

তিনি বলেন, ‘সেই মেয়েকে আমি নাকি পর্দায় অশ্লীল ভাবে, জোর করে চুম্বন করেছি! আপনারা বিশ্বাস করেন এ কথা? স্থিরচিত্র কোনো দিন খুঁটিয়ে দেখেছেন কেউ?’

বিশ্বজিৎ বলেন, ‘যাকে হাত ধরে বলিউডে আনলাম, সকলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম- তাকে নাকি আমিই বদনাম করেছি! আসল ঘটনা অন্য। সেটা অনেকেই জানেন না। দেবিকারানি প্রথম বড়পর্দায় চুম্বনদৃশ্য এনেছিলেন। তারপর দীর্ঘ চুম্বনদৃশ্য যদি কিছু হয়, সেটা আমার ছবি ‘‘দো শিকারি’’। ওই দৃশ্য জীবন্ত করতে পরিচালক যা করতে বলেছিলেন, সেটাই করেছি।’

তিনি বলেন, ‘জোর করে নায়িকাকে চুমু খেলে সে (রেখা) আমার কণ্ঠ জড়িয়ে অভিনয় করতে পারত! ওর অস্বস্তিই বরং সেই দৃশ্যে বেশি করে ধরা দিত। আমাদের ওই চুম্বনদৃশ্য এতটাই জীবন্ত যে একটি বিদেশি পত্রিকার মলাটে সেই ছবি ছাপা হয়েছিল। ব্যস, চারিদিকে তা-ই নিয়ে শোরগোল পড়ে গেল।’

বিশ্বজিৎ বলেন, ‘কীভাবে রেখার সঙ্গে পরিচয়, এবার সে কথা বলি। প্রথম আলাপেই রেখার মা পুষ্পাবলীর বারংবার অনুরোধ, ‘“রেখা পারবে। একবার আপনি সুযোগ দিন। দরকারে পরখ করে নিন।”’ বারবার অনুরোধ শুনে ভাবলাম, দেখাই যাক।’

তিনি বলেন, ‘শুটিংশেষে রেখাকে নিয়ে ওর মা এলেন। মেয়েটি (রেখা) হিন্দি জানে না। ইংরেজিতে কথা বলছে। ওকে ছোট একটা সংলাপ দিয়ে বললাম, পড়ে শোনাও। ও পড়ল। বেশ গোটা গোটা উচ্চারণ। ওই সংলাপই অভিনয় করে দেখাল। সেটাও নিখুঁত। বললাম, গ্লিসারিন ছাড়া কাঁদতে পারবে? বলল, “‘এক মিনিট দিন।”’ ঠিক এক মিনিট পরে আমার দিকে তাকাতেই দেখি চোখের কোলে জল টলমল করছে! বুঝলাম, খাঁটি রত্ন পেয়েছি।’

বিশ্বজিৎ বলেন, ‘সেই রাতেই প্রযোজককে ফোন করলাম। জানালাম, দুর্দান্ত এক অভিনেত্রীকে পেয়েছি। বয়স শুনে বাকিদের মতো প্রযোজকও দ্বিধান্বিত, ‘‘এত ছোট মেয়ে অভিনয় পারবে? আদৌ মানাবে?’’ আশ্বস্ত করে জানিয়েছিলাম, বয়সের আন্দাজে ভারিক্কি চেহারা। কোনো সমস্যা হবে না। বাকি খুঁত ঢেকে দেবে রেখার অভিনয়।’

তিনি বলেন, ‘আগের দিন রাতে কথা হলো। পরের দিন মাকে নিয়ে বলিউডে পা রাখল ভানুরেখা। শুরুতেই ওকে বললাম, ভানুরেখা নাম তো চলবে না। নাম ছোট করে ‘‘রেখা’’ করতে হবে। ওর তাতে আপত্তি নেই। শুরু হলো শুটিং। সেখানেই গোলযোগ! শুটিংয়ের মাঝে হঠাৎ করে মেয়ে পালিয়ে যায়! কাউকে না বলে নিরুদ্দেশ। সেটে ‘‘খোঁজ’’, ‘‘খোঁজ’’ রব। সবাই এসে আমায় বলেন, “‘আপনার নায়িকা নিখোঁজ!’” আমি এই বিষয়ে ততটা গুরুত্ব দিইনি। কারণ, ওই সমস্যা সামলে নিলে বাকিটা রেখা অতুলনীয়। ওর কাজ নিয়ে কথা বলার রাস্তা রাখত না।’

এ বলিউড অভিনেতা লেখেন, ‘এভাবেই ওর সঙ্গে কাজ করলাম চারটি ছবিতে — ‘দো শিকারি‘’, ‘‘দো আঁখে’’, ‘‘মেহমান’’, ‘‘কহতে হ্যায় মুঝকো রাজা’’। রেখা তখন ভীষণ ভারিক্কি, ঘোর শ্যামবর্ণ। প্রথম ছবির শুটিং চলছে। ফোন করলেন প্রযোজক মোহন সায়গল, “‘তুমি নাকি দক্ষিণ ভারত থেকে নতুন নায়িকা এনেছ?’” সঙ্গে সঙ্গে ওঁকে বলেছিলাম, ‘‘আপনার আগামী ছবির জন্য সই করিয়ে নিন। খুব ভালো অভিনেত্রী।’’ তারই ছবি ‘‘শাওন ভাদো’’ ছবিতে রেখার আত্মপ্রকাশ।’

তিনি বলেন, ‘একইভাবে আমার কথায় ভরসা করে পরিচালক হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায় ‘‘খুবসুরত’’ ছবিতে নায়িকা করেছিলেন রেখাকে। ওই ছবিই ওকে ‘‘অভিনেত্রী’’র তকমা দিয়েছিল। বাকি ইতিহাস গড়েছে রেখা স্বয়ং। নিজেকে ঘষেমেজে এমন জায়গায় তুলে নিয়ে গিয়েছে যে, নিজেই বলিউডে জীবন্ত উদাহরণ।’