ভারত সফরে স্টারমারের বার্তা: ভিসা নীতিতে পরিবর্তন নয়, গুরুত্ব বাণিজ্যে
ভারতের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি কার্যকর হলেও যুক্তরাজ্যের ভিসা নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসছে না—এমনটাই স্পষ্ট করে জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার।
গত বুধবার দুই দিনের সফরে তিনি ভারত পৌঁছান, সঙ্গে রয়েছেন ১২০ জনেরও বেশি ব্রিটিশ ব্যবসায়ী, সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।
ভারত সফরে যাওয়ার আগে স্টারমার সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এখন এমন এক পর্যায়ে রয়েছি যেখানে বাণিজ্য চুক্তির সুবিধা বাস্তবে রূপ দিতে হবে। এই চুক্তির সঙ্গে ভিসা সংক্রান্ত কোনো নতুন উদ্যোগ বা ছাড় নেই।
বাণিজ্যই মূল লক্ষ্য
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এই সফর মূলত যুক্তরাজ্য ও ভারতের মধ্যে বিনিয়োগ, শিল্প ও শিক্ষা ক্ষেত্রে নতুন সহযোগিতার সুযোগ তৈরির উদ্দেশ্যে। তিনি বলেন, এখানে আমাদের লক্ষ্য ব্যবসা থেকে ব্যবসায়িক যোগাযোগ বাড়ানো, বিনিয়োগ আনা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা—ভিসা সহজীকরণ নয়।
বসন্তকালে স্বাক্ষরিত এই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ফলে ভারতের বাজারে ব্রিটিশ পণ্যের ওপর শুল্ক অনেক কমবে এবং দুই দেশের বার্ষিক বাণিজ্য প্রায় ২৫.৫ বিলিয়ন পাউন্ড পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। সরকারের হিসাব অনুযায়ী, এর ফলে ২০৪০ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যের জিডিপিতে প্রায় ০.১৩% ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
আরও পড়ুন:
রোগীর পেটে জীবন্ত মাছি!
স্টারমারের সফরসঙ্গী রয়েছেন রোলস-রয়েস, ব্রিটিশ টেলিকম, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ, ডায়াজিওসহ বেশ কয়েকটি শীর্ষ ব্রিটিশ কোম্পানির প্রধান নির্বাহী।
ভিসা ইস্যুতে কঠোর অবস্থান
যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ী মহল ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ যেখানে দক্ষ কর্মী ও শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা সহজ করার আহ্বান জানাচ্ছে, স্টারমার সেখানে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন— ‘না, এটি আমাদের পরিকল্পনার অংশ নয়।’
তিনি বলেন, ‘এই চুক্তি ভিসা ভিত্তিক নয়, বরং অর্থনীতি, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির ওপর নির্ভর করছে।’
মোদির সঙ্গে বৈঠক ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
স্টারমার মুম্বাইতেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করবেন।
যদিও সফরটি বাণিজ্যকেন্দ্রিক, তবে ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক জ্বালানি নিরাপত্তা বিষয়েও আলোচনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্টারমারকে মানবাধিকার সংগঠনগুলো আহ্বান জানিয়েছে, ভারতের কারাগারে আটক স্কটিশ-ভারতীয় শিখ কর্মী জগতর সিং জোহালের মুক্তির বিষয়টি মোদির সঙ্গে আলোচনায় তোলার জন্য।
এদিকে, স্টারমার ভারতে পৌঁছানোর সময় মোদি সামাজিক মাধ্যমে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। সাংবাদিকরা এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে স্টারমার সংক্ষিপ্তভাবে জবাব দেন, ‘আমি পুতিনকে কোনো শুভেচ্ছা পাঠাইনি, পাঠাবও না।’
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন সম্ভাবনা
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, স্টারমারের এই সফর ভারত-ব্রিটেন সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। দুই দেশের মধ্যে প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা, শিক্ষা ও সংস্কৃতি খাতে সহযোগিতা বাড়লে দীর্ঘমেয়াদে এটি উভয় দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
স্টারমার বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভবিষ্যৎমুখী। এই চুক্তি শুধু অর্থনৈতিক নয়, এটি দুই দেশের জনগণের মধ্যকার সম্পর্ক আরও দৃঢ় করবে।’