ফরিদপুরে বিদ্যালয়ের জমি প্রভাবশালীদের দখলে!
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নে অবস্থিত চিতারবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক একর জমি দখলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। স্থানীয় বাজার বণিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজন অবৈধভাবে বিদ্যালয়ের অধিকাংশ জায়গায় জবরদখল করে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।
অবৈধ দখলকারীদের উচ্ছেদ করে বিদ্যালয়ের সম্পত্তি দখলমুক্ত করে ছাত্র-ছাত্রীদের খেলাধুলা করার জন্য সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আবেদন করা হলেও গত সাত বছরে কোনো সুরাহা হয়নি। উপরন্তু বিদ্যালয়ের জায়গা উদ্ধার করতে গিয়ে প্রধান শিক্ষক অবৈধ দখলদারদের রোষানলে পড়েছেন।
জানা যায়, চিতারবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিজস্ব জমির পরিমাণ এক একর ২৫ শতাংশ। কিন্তু বিদ্যালয়ের দখলে থাকা জমির পরিমাণ মাত্র ২৫ শতাংশ। বিদ্যালয়ের অধিকাংশ জমি বাজারের মধ্যে অবস্থিত। অবৈধ দখলদাররা বিদ্যালয়ের সম্পত্তিকে নিজস্ব মালিকানা হিসেবে দাবি করে বিভিন্ন সময়ে অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে ব্যবসা-বাণিজ্য করে আসছেন।
বিদ্যালয়ের জমি অবৈধভাবে যারা দখল করে রেখেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি হীরামন পারভীনের স্বামী শাকিল মোল্যা। তিনি চিতারবাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। বণিক সমিতির সভাপতি ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিনও বেশ কিছু জায়গা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন। এ ছাড়া আবুল খায়ের, মো. আলমগীরসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী বিদ্যালয়ের জমি দখল করে দোকানঘর তৈরি করেছেন।
২০১৮ সালের ১৩ এপ্রিল বোয়ালমারী উপজেলার তৎকালীন ইউএনও জাকির হোসেন বিদ্যালয়ের জমি পরিমাপ করে ১০২ শতাংশ জমির দখল বিদ্যালয়কে বুঝিয়ে দেন। জমি পরিমাপের সময় বিদ্যালয়ের পাশের কোনো জমির মালিকই আপত্তি জানাননি। কিন্তু অবৈধ দখলদাররা পরে তাদের দখল ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান।
বিদ্যালয়ের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে রাখার বিষয়ে জানতে চিতারবাজার বণিক সমিতির সভাপতি জালাল উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক শাকিল মোল্যার সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও দুজনেই এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি।
দাদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হামিদুল হক বকুল বলেন, ‘আমার বাবা সামসুল হক বিশ্বাস পুরো জমিই একজনের কাছ থেকে কিনে বিদ্যালয়কে দান করেছিলেন। কিন্তু সেই জমির অধিকাংশই এখন শতাধিক ব্যক্তির দখলে, যা দুর্ভাগ্যজনক। আমরা চাই বিদ্যালয়ের এক একরের মতো জায়গা বিভিন্ন জন দখল করে রেখেছেন, তা প্রশাসন উদ্ধার করুক।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চিতারবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিভিন্ন মানুষের বেদখলে থাকা বিদ্যালয়ের জায়গা উদ্ধারে কোনো অগ্রগতি নেই। উপরন্তু কিছু টিনের ঘর এখন পাকা হয়েছে, পোক্ত হয়েছে।’
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু আহাদ মিয়া বলেন, ‘বিদ্যালয়ের জায়গা উদ্ধারের জন্য আমাদের যেসব দপ্তরে কাগজপত্র দেওয়ার দরকার সব জায়গায় দিয়েছি, কিন্তু তারপরে আর কোনো অগগ্রতি নেই। যে কয়বার উদ্যোগ নিয়েছি প্রশাসন থেকে প্রথমে খুব আগ্রহ দেখায়, কয়েকদিন পরে যা তাই হয়ে যায়। মাঝখান থেকে বিপদে পড়ি আমি আর হেডমাস্টার।’
এ ব্যাপারে দাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বলেন, ‘বিদ্যালয়ের জায়গা উদ্ধারে আমার আন্তরিকতা আছে, কিন্তু পেরে উঠছি না। প্রায়ই আমি উপজেলা মাসিক সমন্বয় মিটিংয়ে বিষয়টি তুলি, কিন্তু প্রশাসনের কোনো তৎপরতা নেই।’
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হাসান চৌধুরী বলেন, ‘এসিল্যান্ড কিছুদিন আগে জায়গাগুলো দেখে এসেছেন। এগুলো নিয়ে একটু ঝামেলা আছে। প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে বসে এটা কীভাবে সমাধান করা যায় সেটা বের করতে হবে।‘