মাদকাসক্ত যুবকের দায়ের কোপে ৮ বছরের শিশু নিহত
পটুয়াখালীর দশমিনায় সবুজ (৩০) নামের এক মাদকাসক্ত যুবকের দা ও লাঠির আঘাতে মা-ছেলেসহ একই বাড়ির অন্তত ৪ জন গুরুতর আহত এবং ৮ বছরের এক শিশু নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার বাঁশবাড়িযা ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড চরহোসনাবাদ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় এদিন রাতেই ঘাতক সবুজকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
জানা গেছে, সবুজ ওই গ্রামের একই বাড়ির আবু মৃধার ছেলে। তিনি একজন মাদকাসক্ত।
এ ঘটনায় এলাকা জুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কোনো প্রকার পূর্ব শত্রুতা ছাড়াই আচমকাভাবে সবুজ বাড়ির বাসিন্দাদের ওপর অতর্কিতভাবে দা ও লাঠি দিয়ে হামলা চালান। তার হামলায় নারী ও শিশুসহ অন্তত ৫ জন আহত হন। তাদের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে এলে সবুজ পালানোর চেষ্টা করেন। পালাতে না পেরে তিনি বাড়ির পাশের একটি উঁচু গাছের চড়ায় আশ্রয় নেন।
আহতদের স্থানীয়রা তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার করে দশমিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এ সময় কিছু গ্রামবাসী ওই গাছটির চতুর্দিকে ঘিরে রাখেন যাতে সবুজ পালাতে না পারে। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে সবুজকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গাছের চড়ায় অবস্থান নেওয়া সবুজ পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তার হাতে থাকা লোহার কোনো বস্তু দিয়ে পুলিশ সদস্যদের দিকে আঘাত করার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা যৌথভাবে গাছ কেটে তাকে নামানোর চেষ্টা করলে ওই গাছের চড়া থেকে লাফ দিয়ে পাশের আরেকটি চাম্বল গাছের চড়ার ডাল ধরে সেখানে বসে থাকেন। এভাবে তিনি গাছের চড়া থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে একে একে ৪টি গাছ পরিবর্তন করে ভূমি থেকে প্রায় ৭০ ফুট উচ্চতায় আরেকটি চাম্বল গাছের চড়ায় অবস্থান নেন। এভাবে টানা ৫ ঘণ্টা শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের পর বিশেষ কৌশলে রাত সোয়া ১০টার দিকে স্থানীয় লোকজন ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের সহযোগিতায় সবুজকে নিরাপদে গাছের চড়া থেকে নামিয়ে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এদিকে ঘটনায় গুরুতর আহতদের মধ্যে জামাল বেপারীর শিশু পুত্র সাফায়েতকে (৮) বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর রাত ৮ টার দিকে সে মারা যায় বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
এছাড়া অন্যান্য আহতরা হলেন বাহাদুর মুন্সির স্ত্রী মরিয়ম (২৮) ও তাদের শিশু ছেলে মুহিত হাসান (৮), সাইদুলের স্ত্রী নাসিমা (৩২) এবং পঞ্চম আলীর ছেলে বাবুল (৪৭)। তারা সবাই ওই গ্রামের একই বাড়ির বাসিন্দা।
দশমিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রাহুল বিন হালিম আমাদের সময়কে জানান, গুরুতর আহত দুই শিশু সাফায়েত ও মুহিত হাসান এবং মুহিতের মা মরিয়মের অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক থাকায় তাদের বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অপর আহত দুইজন নাসিমা ও বাবুল বর্তমানে দশমিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকের এই বক্তব্য গ্রহণের পরপরই মুঠোফোনে আমাদের সময়কে সাফায়েতের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন তার পিতা জামাল বেপারী।
দশমিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল আলীম আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে থেকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়দের সহায়তায় দীর্ঘ অভিযান শেষে ঘাতক সবুজকে কৌশলে গাছের চড়া থেকে নামিয়ে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। এ ব্যাপারে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’