আনন্দ অশ্রু, বাঁধভাঙা উল্লাস ও অবিশ্বাস যুদ্ধক্লান্ত উপত্যকায় আশার রোদ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১০ অক্টোবর ২০২৫, ০১:০৪
শেয়ার :
আনন্দ অশ্রু, বাঁধভাঙা উল্লাস ও অবিশ্বাস যুদ্ধক্লান্ত উপত্যকায় আশার রোদ

এক অবিশ্বাস্য শান্তি পরিকল্পনায় ইসরায়েল ও হামাস উভয় পক্ষই সম্মত হওয়ায় বৃহস্পতিবার রাতে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার আকাশে উল্লাসসূচক গুলির শব্দ শোনা যায়। ফিলিস্তিনিরা আনন্দের অশ্রু নিয়ে এ খবর গ্রহণ করেছে। দুই বছরের ভয়াবহ সংঘাতের পর এই খবর গাজাবাসীর কাছে অপ্রত্যাশিত স্বস্তি নিয়ে এসেছে। তবু তাঁদের মনে একই সঙ্গে আনন্দ ও অবিশ্বাস।

আল মাওয়াসি উপকূলীয় এলাকায় মানুষজন দলবদ্ধভাবে ‘আল্লাহু আকবর’ (আল্লাহ মহান) ধ্বনি দিয়ে উল্লাস করেছেন ও বাতাসে আনন্দের গুলি ছুড়েছেন। গাজা নগরীর একটি আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আহমেদ শেহাইবার ফোনে কেঁদে ওঠেন এবং উল্লাস প্রকাশ করে বলেন, ‘এ এক বড় দিন, অপার আনন্দ।’ খান ইউনিসের বাসিন্দা আয়মান সাবেরও খবরটি বিশ্বাস করতে পারেননি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০-দফা শান্তি পরিকল্পনাটি প্রাথমিকভাবে অসম্ভব মনে হলেও, অবশেষে মিশরীয় অবকাশযাপন-শহর শারম আল শেইখে পরোক্ষ আলোচনার পর ‘প্রাথমিক ধাপে’ ইসরায়েল ও হামাস এতে সম্মতি জানায়।

এই চুক্তি এমন এক ভূখ-ের মানুষের জন্য আশা নিয়ে এসেছে, যেখানে ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক সামরিক অভিযানে ৬৭ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে বহু শিশু ও নারী রয়েছে। ত্রাণ অবরোধের ফলে তীব্র ক্ষুধা ও অনাহার দেখা দিয়েছে। ফিলিস্তিনি অঞ্চল কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ মানবিক সংকট।

মধ্য গাজার ফিলিস্তিনি ত্রাণ সমন্বয়কারী ইয়াদ আমাউই দ্য গার্ডিয়ানকে মিশ্র অনুভূতির কথা জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি। আবার করিও না। আনন্দ ও দুঃখ এবং স্মৃতি- সবকিছু মিলেমিশে একাকার।’ আমাউই আশা করেন, চুক্তিটি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হবে, যাতে মানুষ ধ্বংসস্তূপের মধ্যে জীবন ও আশা জাগিয়ে তুলতে পারে। এই চুক্তি সংঘাত নিরসনের পূর্বের সব প্রচেষ্টার তুলনায় দুই পক্ষকে কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। তবে চুক্তির বাস্তবায়নে ইসরায়েলের বাধা তৈরির ভয়ও তাঁর মনে রয়েছে।

তবে নেতানিয়াহু সুযোগসন্ধানী। তিনি এমন কিছু করার চেষ্টা করবেন, যেন তাঁর সরকারকে নিয়ে এগিয়ে যেতে পারেন। অবশ্য এমনও হতে পারে, তিনি আগাম নির্বাচনের ডাক দিতে পারেন। কিন্তু যে হারে তার জনপ্রিয়তা কমেছে, এতে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের অবসানও ঘনিয়ে আসছে বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন। কেউ কেউ বলছেন, কিছুদিনের মধ্যে তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর পদও খোয়াতে হতে পারে। গাজা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০২৩ সালের ২১ নভেম্বর নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। হেগভিত্তিক এই আদালতের এখতিয়ার ইসরায়েল অস্বীকার করে আসছে এবং গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগকে মিথ্যা দাবি করে আসছে।