শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে ট্রাইব্যুনালে আসিফ মাহমুদ
গত বছর জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে রাজধানীর চানখারপুলে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ পৌঁছেছেন। ট্রাইব্যুনালে আজ ১০ম দিনের মতো সাক্ষ্যগ্রহণ করা হচ্ছে।
এর আগে, এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দি দেন তিনি। সেখানে আসিফ উল্লেখ করেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে সমন্বয়কদের কাছ থেকে জোরপূর্বক ভিডিও বার্তা নিয়েছিল ডিবি। তখন তাদের বলা হয়েছিল সেটা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেখানো হবে। তবে পরবর্তীতে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে দেয় ডিবি।
সেই জবানবন্দিতে আসিফ আরও জানান, গত বছরের ১৯ জুলাই যখন ইন্টারনেট বন্ধ করে রাখা হয়েছিল, তখন তার ফোনের জিপিএস ট্র্যাক করে তাকে তুলে নেয় ডিজিএফআই সদস্যরা। গুম করার পর চোখ বাঁধা ছিল তার, সে অবস্থায় ৫ দিন কাটিয়েছেন তিনি। সেই ৫ দিন কোথায় রাখা হয়েছিল তাকে, সেটা জানতেন না তিনি। ৫ আগস্টের পর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আয়নাঘর পরিদর্শনকালে গুম অবস্থায় থাকা ঘর বলে শনাক্ত করতে পারেন তিনি। জবানবন্দিতে উঠে এসেছে সে বিষয়টিও।
এর আগে, ৫ অক্টোবর নবম দিনের মতো সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। ওই দিন জবানবন্দি দিয়েছেন একজন। ২৫ সেপ্টেম্বর অষ্টম দিনের মতো সাক্ষ্য দেন তিনজন সাক্ষী। এর মধ্যে একজন পুলিশ সদস্যও ছিলেন। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে তাদের জেরা করেন স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
গত ১৪ আগস্ট সপ্তম দিনে সাক্ষ্য দিয়েছেন তিনজন। এর মধ্যে দুজন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্য ছিলেন। তারা হলেন কনস্টেবল অজয় কুমার ও কনস্টেবল আবদুর রহমান।
১১ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠ কার্যদিবসে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সাক্ষ্য দেন রাজধানীর নিউমার্কেটের দোকানের কর্মচারী মো. টিপু সুলতান ও নৌবাহিনীতে মালামাল সরবরাহকারী মো. মনিরুজ্জামান।
৭ সেপ্টেম্বর পঞ্চম দিনের মতো জবানবন্দি দেন তিনজন। এর মধ্যে একজন শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের মা সানজিদা খান দীপ্তি। বাকি দুজন হলেন- আনাসকে গুলি করতে দেখা প্রত্যক্ষদর্শী রাব্বি হোসেন ও ব্যবসায়ী আবদুল গফুর।
২১ আগস্ট চতুর্থ দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। ওই দিন ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন শহিদ রাকিব হোসেন হাওলাদারের বাবা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ও বড় ভাই রাহাত হাওলাদার। তারা দুজনই হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন। ১৩ আগস্ট তৃতীয় দিনে সাক্ষ্য দেন শহিদ ইয়াকুবের মা রহিমা আক্তার, তার প্রতিবেশী চাচা শহিদ আহমেদ ও শহীদ মো. ইসমামুল হকের ভাই মহিবুল হক।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
১২ আগস্ট দ্বিতীয় দিনে জবানবন্দি দিয়েছেন দুজন। এর মধ্যে একজন কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আঞ্জুয়ারা ইয়াসমিন ও আরেকজন শেখ মাহদী হাসান জুনায়েদের বাবা শেখ জামাল হাসান।
১১ আগস্ট চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের সূচনা বক্তব্য শেষে মামলার প্রথম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন শহীদ আনাসের বাবা শাহরিয়ার খান পলাশ।
এ মামলার গ্রেপ্তার চার আসামি হলেন শাহবাগ থানার সাবেক ওসি (অপারেশন) মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন মিয়া, মো. ইমাজ হোসেন ইমন ও মো. নাসিরুল ইসলাম।
পলাতক আসামিরা হলেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম ও রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল।
গত ১৪ জুলাই চানখারপুলের মামলাটির পলাতক চার আসামিসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট চানখারপুল এলাকায় শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে গুলি চালায় পুলিশ। এতে বহু হতাহতের ঘটনার পাশাপাশি শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া শাহরিক নিহত হন।