স্ক্যাবিসের প্রাদুর্ভাব, হাসপাতালে মিলছে না পর্যাপ্ত ওষুধ

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৬:০৫
শেয়ার :
স্ক্যাবিসের প্রাদুর্ভাব, হাসপাতালে মিলছে না পর্যাপ্ত ওষুধ

চুয়াডাঙ্গা জেলায় ছোঁয়াচে চর্মরোগ স্ক্যাবিসের প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন জেলার সদর হাসপাতালে ভিড় বাড়ছে আক্রান্ত রোগীদের। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সব বয়সীরাই এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এক পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে পুরো পরিবারেই ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রমণ।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে গতকাল বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের পুরোনো ভবনের দ্বিতীয় তলার বারান্দাজুড়ে রোগীর উপচেপড়া ভিড়। চিকিৎসকদের কক্ষের সামনে লম্বা লাইন। প্রতিদিন গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ জন রোগী স্ক্যাবিস বা খোস-পাঁচড়াজনিত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে হাসপাতালে এ রোগে আক্রান্তদের জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ নেই। কেবল হিস্টাসিন ট্যাবলেট সীমিত পরিমাণে মজুত আছে। ফলে অধিকাংশ রোগীকেই বাইরে থেকে লোশন, ক্রিমসহ অন্যান্য ওষুধ কিনতে হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা পারভীনা খাতুন বলেন, ‘হঠাৎ করে হাতে চুলকানি শুরু হয়, এরপর সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। গায়ে ছোট ছোট লাল ফুসকুড়ি ওঠে, চুলকানি অসহ্য হয়ে যায়। পরে শরীরে ব্যথাও শুরু হয়। বাধ্য হয়ে হাসপাতালে এসেছি। ডাক্তার কিছু ওষুধ দিয়েছেন, বাকিগুলো বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে।’

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. লাইলা শামীমা শারমিন বলেন, ‘স্ক্যাবিস মূলত ছোঁয়াচে চর্মরোগ। এটি এক ব্যক্তির শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। যদি সঠিক চিকিৎসা নেওয়া হয়, তবে রোগটি প্রতিরোধযোগ্য। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শুধু আক্রান্ত ব্যক্তি নয়, তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও একসঙ্গে চিকিৎসা নিতে হবে। না হলে সংক্রমণ ফিরে আসবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণ মানুষ এই রোগকে খোস-পাঁচড়া বলে জানে। আগে মূলত গরমের সময় এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যেত, কিন্তু এখন সারা বছরই হচ্ছে। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে কিডনি জটিলতার ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে। তাই আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হতে হবে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে এবং দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, স্ক্যাবিস সংক্রমণের শুরুতে হাতের আঙুলের ফাঁকে বা পায়ের চামড়ায় তীব্র চুলকানি দেখা দেয়। পরে তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং লাল ফুসকুড়ি হয়। আক্রান্ত স্থানে চুলকানি থেকে ক্ষত হলে সেখানে দ্বিতীয় সংক্রমণ ঘটতে পারে। এ রোগ থেকে বাঁচতে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা, নিয়মিত হাত ধোয়া, পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, স্ক্যাবিস ভয়াবহ নয়, তবে অবহেলা করলে তা পরিবার ও সমাজজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ ও সচেতনতা বাড়ানোই এখন সবচেয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা।