শরীয়তপুরে সাংবাদিককে বিএনপি নেতার হুমকি
শরীয়তপুরে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের জেলা প্রতিনিধি আশিকুর রহমান হৃদয়কে মোবাইল ফোনে হুমকি দিয়েছেন মতিউর রহমান সাগর নামে এক বিএনপি নেতা।
গত মঙ্গলবার রাতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের জেরে তিনি ওই সাংবাদিককে মামলায় জড়ানোর ও দেখে নেওয়ার হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযুক্ত মতিউর রহমান সাগর নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার।
এদিকে মতিউর রহমান সাগরের হুমকিতে বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সাংবাদিক আশিকুর রহমান হৃদয়। এ ঘটনায় গতকাল বুধবার রাতে ভেদরগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন সাংবাদিক হৃদয়।
অন্যদিকে বিএনপি নেতা সাগরও নড়িয়া থানায় হৃদয়ের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, মঙ্গলবার অনলাইন নিউজ পোর্টাল বার্তা বাজারে প্রকাশিত ‘চাল বিতরণে অনিয়ম, বিএনপি নেতার রোষানলে ইউএনও’ শিরোনামের প্রতিবেদনে নড়িয়া উপজেলার ঘড়িষার ইউনিয়নের নোয়াদ্দ বাংলাবাজার এলাকার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য প্রকাশিত হয়।
সংবাদটি প্রকাশের পর রাতে মতিউর রহমান সাংবাদিক আশিকুর রহমানের হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে বলেন, ‘নড়িয়াতে যদি আমার হাত দিয়ে বিএনপির রাজনৈতিক কোনো মামলা হয়, আপনি প্রত্যেকটা মামলায় আসামি হবেন। আপনি আওয়ামী লীগ করেন আবার আমার বিরুদ্ধে নিউজ করেন। নড়িয়াতে কোনো মামলা হলে প্রস্তুত থাকেন, প্রত্যেকটা মামলায় আপনি আসামি হবেন। দেখব, আপনাকে কে বাঁচায়।’
ফোনালাপে বিএনপি নেতা ওই সাংবাদিককে রাজনৈতিকভাবে আক্রমণাত্মক মন্তব্য ও অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
নড়িয়া উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাগর ট্রেড ইন্টানন্যাশনালের মালিক মতিউর রহমান সাগর খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারশিপে নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল কাইয়ুম খান গত ২১ আগস্ট ব্যাখ্যা চেয়ে ডিলারকে নোটিশ দেন। পরবর্তীতে ২৭ আগস্ট স্থানীয় সুবিধাভোগীদের বক্তব্য গ্রহণ করেন, যেখানে ৫ জন লিখিতভাবে জানান, তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া হয়েছে। এরপর ২৮ আগস্ট ইউএনও সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে বিক্রয় কেন্দ্রে ৩৫৫ কেজি চাল কম পান। এ কারণে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে আর্থিক জরিমানা করেন তিনি। এমনকি ৩১ আগস্টও তার গুদামে অনিয়মের প্রমাণ পান। ঘটনাটি তদন্ত করে জেলা প্রশাসক ও খাদ্য অধিদপ্তরে প্রতিবেদন পাঠানো হলে, ২৪ সেপ্টেম্বর খাদ্য অধিদপ্তর মতিউর রহমান সাগরের ডিলারশিপ বাতিল করা হয়। ডিলার শিপ বাতিলের পর ৬ অক্টোবর বিভাগীয় কমিশনারের কাছে ইউএনওর বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগ দাখিল করেন বিএনপি নেতা মতিউর রহমান সাগর। যেখানে ইউএনওকে ৫ লাখ টাকা ঘুষ চাওয়া ও ২ লাখ টাকা গ্রহণের অভিযোগ করেন।
আরও জানা যায়, এসব বিষয় নজরে এলে জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুর রহমান কিরণের নির্দেশে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম কাসেমের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিতে নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি মুন্সি শামসুল আলম দাদন, সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমেদ রয়েল ও সিনিয়র সহ-সভাপতি মাস্টার শাহিন হাওলাদারকে সদস্য করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল কাইয়ুম খান বলেন, ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণে অনিয়মের প্রমাণ পেয়ে প্রতিবেদন পাঠানোর পরই খাদ্য অধিদপ্তর ডিলারশিপ বাতিল করেছে। ঘুষের যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা আমার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পৌঁছায়নি।’
সাংবাদিক আশিকুর রহমান বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে শরীয়তপুরে সাংবাদিকতা করছি। সরকারি খাদ্য কর্মসূচিতে অনিয়মের খবর প্রকাশ করার কারণে আমাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, নড়িয়াতে বিএনপির যেকোনো মামলায় আমাকে আসামি করা হবে। আমি আতঙ্কিত এবং সহকর্মীদের সঙ্গে পরামর্শ করছি।’
তিনি বলেন, ‘মতিউর রহমান সাগরের প্রতিষ্ঠানের ডিলারশিপ বাতিল করেছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় আমাকে হুমকি ধামকি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি থানায় সাধারণ ডায়রি করেছি। এখন দেখা যাক পুলিশ প্রশাসন কি উদ্যোগ নেয়। আমি প্রশাসনের কাছে আমার নিরাপত্তা চাই।’
নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান সাগর বলেন, ‘আমি কাউকে হুমকি দিইনি বা গালিগালাজ করিনি। আশিকুর রহমান আগে ছাত্রলীগ করতেন। এখন সাংবাদিক সেজে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ করেছেন। আমি তাকে শুধু বলেছি, এসব মিথ্যা লেখা বন্ধ করতে। আমি নড়িয়া থানায় একটি অভিযোগ করেছি।’
নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমেদ রয়েল মাঝি জানান, বিষয়টি নজরে এলে জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুর রহমান কিরণের নির্দেশে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম কাসেমকে। এছাড়া তদন্ত কমিটিতে নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি মুন্সি শামসুল আলম দাদন, সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমেদ রয়েল ও সিনিয়র সহ-সভাপতি মাস্টার শাহিন হাওলাদারকে সদস্য করা হয়েছে। মতিউর রহমান সাগরের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভেদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল হাসান জানান, হুমকির বিষয়ে জিডি করা হয়েছে। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে নড়িয়া থানার ওসি আসলাম উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’