জরুরি মেরামতের আশায় রেল
সাধারণ মানুষের সহজ ও সাশ্রয়ী যাতায়াতে রেলের বিকল্প নেই। কিন্তু সময়মতো ট্রেন না চলা কিংবা পথে বিকল হয়ে যাওয়ার খবর আসে প্রতিনিয়ত। তাই রেলপথ ও ইঞ্জিন মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণ খাতে জরুরি ভিত্তিতে অতিরিক্ত বরাদ্দের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে অর্থ বিভাগে। উদ্দেশ্যÑ পুরনো ইঞ্জিন মেরামত ও রেলপথ রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে ট্রেন চলাচল আরও সচল করা। এ ক্ষেত্রে তিনটি কোডের মাধ্যমে ৫৯৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, রেলওয়ের লোকোমোটিভ মেরামতের খরচ বহন করা হয় রেলইঞ্জিন কোডের অর্থ দিয়ে। এ খাতে বরাদ্দ মাত্র ৮৬ কোটি টাকা। অথচ অধিকাংশ লোকোমোটিভ পুরনো ও জরাজীর্ন। স্থানীয় বাজারে এগুলোর যন্ত্রাংশ পাওয়া যায় না। এ ছাড়া বেশকিছু দুর্ঘটনাকবলিত লোকোমোটিভ রয়েছে। নতুন লোকোমোটিভ সংগ্রহ করতে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেগুলো বহরে যোগ হতে লাগবে কমপক্ষে ৩ বছর। এ সময়কালে ট্রেন চলাচল অব্যাহত রাখতে বিদ্যমান লোকোমোটিভ মেরামত জরুরি। বরাদ্দকৃত অর্থে তা সম্ভব নয় বিধায় বিশেষ বরাদ্দের জন্য চিঠি দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া বাজেটের অভাবে গত অর্থবছরের বিল বকেয়া রয়েছে। তাই চলতি অর্থবছরে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি এমজি ৩০০০ সিরিজের ৯টি, ২৯০০ সিরিজের ৩টি, ২৬০০/২৭০০ সিরিজের ২টি এবং ২৩০০/২৪০০ সিরিজের দুটিসহ মোট ১৬টি এমজি লোকোমোটিভ এবং বিজি ৬৬০০ সিরিজের পাঁচটিসহ মোট ২১টি লোকোমোটিভ মেরামত করতে চায় রেলওয়ে। ইঞ্জিনের বিভিন্ন লাইট ও হেভি শিডিউল, জিওএইচ, দুর্ঘটনাকবলিত ইঞ্জিনের
স্পেশাল রিপেয়ার, বিভিন্ন কম্পোনেন্ট ওভারহলিং, রেল বহরে নতুন যুক্ত হওয়া ৬৬০০ সিরিজ ও ৩০০০ সিরিজের লোকোমোটিভের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে ১৪২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
রেলের গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি দিক হচ্ছে স্টোর পারচেজ। মূলত সরঞ্জাম বিভাগ বৈদেশিক উৎস থেকে লোকোমোটিভের মালামাল সংগ্রহ করে। এ জন্য এলসি স্থাপন, সিডি-ভ্যাট প্রদান ইত্যাদি ব্যয়সহ রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন ধরনের লুব অয়েল সংগ্রহের ব্যয় হয়ে থাকে এ কোড থেকে। গত অর্থবছরে অপ্রতুল বরাদ্দের কারণে ১৪৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। চলতি অর্থবছরে আগের তুলনায় বরং বাজেট কমিয়ে ২৪০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে, যা অপ্রতুল বলে মনে করছে সংস্থাটি।
সেবার মান বাড়াতে মাঠপর্যায়ে পরিদর্শন করে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয় মন্ত্রণালয়ে। রেলপথের নিরাপত্তার স্বার্থে জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ করার অভিমত এসেছে সেখানে। তাই রেলপথ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ১৯৭ কোটি টাকা এবং সম্পদ সংগ্রহ ব্যবস্থাপনা ও রেলপথের পৃথক কোডে ১০৫ কোটি টাকাসহ মোট ৩০২ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে ৫৯৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ দরকার জানিয়ে অর্থ বিভাগকে বিশেষ চিঠি দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আফজাল হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, ট্রেনের সেবা বাড়ানো আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তাই লোকোমোটিভ মেরামত ও রেলপথ সংস্কারে আরও বরাদ্দ জরুরি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ট্রেন পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ জরুরি। যথাসময়ে দরপত্র আহ্বান, মালমাল সংগ্রহ ও মেরামত কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ট্রেনের জন্য দরকারি এইএসডি অয়েলের বাজেট আগের তুলনায় কমে গেছে। বাজেট ঘাটতির কারণে তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে বকেয়া বিল পরিশোধের তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। সরঞ্জাম বিভাগ থেকে বিভিন্ন কারখানায় যথাসময়ে মালামাল না পাওয়ার অভিযোগ আছে। রেলে লোকোমোটিভ ও কোচ সংকট বহু দিনের। বিদ্যমান ইঞ্জিন-বগির বেশিরভাগই মেয়াদোত্তীর্ণ। অপ্রতুল মেরামতের ব্যবস্থা। কারখানায় একদিকে দক্ষ জনবলের অভাব অন্যদিকে বরাদ্দের ঘাটতি। নেই পর্যাপ্ত যন্ত্রাংশ। বহুদিন ধরেই চলছে এমন দুরবস্থা। অথচ আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে রেলের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ কোটি টাকার বেশি খরচ করা হয়েছে। তাই নতুন ইঞ্জিন রেল বহরে যুক্ত হওয়ার আগে এ মুহূর্তে ২১টি লোকোমোটিভ মেরামত করা খুব প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। বর্তমানে অধিকাংশ আন্তঃনগর ট্রেন ১০ থেকে ১৪টি কোচ দিয়ে পরিচালনা করা হয়। এর ফলে ইঞ্জিন ও লোকবলের সদ্ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এ জন্য প্রতিটি আন্তঃনগর ট্রেনে ১৮ থেকে ২০টি বগি নিয়ে চলাচল নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এতে জ্বালানি খরচ না বাড়িয়েও আয় বাড়ানো সম্ভব।