বছিলায় সরকারি জমি দখল করে দোতলা মার্কেট
জায়গার অভাবে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ঢাকা পশ্চিম (মোহাম্মদপুর) চলছে ভাড়ার ভিত্তিতে। অথচ চাইলেই কয়েকশ গজ দূরে সরকারি জায়গায় ভবন নির্মাণ করে অফিসটি পরিচালনা করা যেত। তাতে সরকারের কয়েকশ কোটি টাকার রাজস্ব বাঁচত। শুধুমাত্র নজরদারির অভাবে মোহাম্মদপুরের বছিলায় সরকারি সম্পত্তি বেহাত হয়ে গেছে। শ্রীখণ্ড মৌজার সিএস/এসএ ৩৬ এবং আরএস-৪৭ সর্বশেষ বিএস-৪০৮ নম্বর দাগের ৮ কাঠা জায়গা দখল করে দোতলা মার্কেট নির্মাণ করে ভাড়া আদায় করছেন মো. বাবু নামে স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। জায়গাটির বর্তমান বাজারমূল্য প্রতি কাঠা ১ কোটি ৩০ লাখ হিসাবে ১০ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এলাকায় মো. বাবুর রয়েছে দোর্দণ্ড প্রতাপ। তাঁর পিতার নাম মো. শাহজাহান (এলাকায় শারজাহান নামে পরিচিত)। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩নং ওয়ার্ডের আওতাধীন বছিলা ব্রিজ সংলগ্ন বছিলা পুরনো সড়কের পাশে সরকারি জায়গা দখল করে আধা-পাকা দোতলা মার্কেট নির্মাণ করেছেন বাবু। ঠিকানা দেওয়া হয়েছে ১২৫, বছিলা। বাবার নামে করা ‘শারজাহান মার্কেটে’ ব্যাংক, বীমার অফিসসহ রয়েছে ২০টির মতো দোকান। প্রতিটি দোকানের ভাড়া কমপক্ষে ১০ হাজার। সে হিসাবে প্রতি মাসে ২০টি দোকান থেকেই ২ লাখ টাকা ভাড়া আদায় করেন বাবু।
স্থানীয়রা জানান, ২০০০ সালে দিনদুপুরে ওই এলাকায় একজনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ রয়েছে বাবুর বিরুদ্ধে। যে কারণে এলাকার সবাই তাঁকে সমীহ করে চলে। ভয়ে তাঁর বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ দেয় না। বিগত সরকারের সময়ে তিনি আওয়ামী লীগের পরিচয়ে প্রভাব বিস্তার করলেও ৫ আগস্ট-পরবর্তী ভোল পাল্টেছেন। বর্তমানে তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে পরিচয় দেন। তবে তাঁর দলীয় কোনো পদ-পদবির কথা জানা যায়নি।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
জানা গেছে, বাবুর দখলকৃত জায়গাটির মালিক ঢাকা জেলা অফিস। অথচ ওই অফিস কর্তৃপক্ষ জানে না জায়গাটি বেহাত হয়েছে। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) লালবাগ রাজস্ব সার্কেল মো. শরিফুল হক আমাদের সময়কে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা খতিয়ে দেখব এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
সরকারি জায়গা দখল করে এভাবে ব্যক্তি মালিকানায় মার্কেট নির্মাণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবেশকর্মী সৈয়দ সাইফুল ইসলাম। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, সরকার জায়গা পায় না। মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের কাছে একটা ভাড়া বাড়িতে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস চলছে। এতে প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকা ভাড়া গুনতে হচ্ছে। অথচ মাত্র কয়েকশ গজ দূরে সরকারের নিজস্ব জায়গা রয়েছে। সেখানে অফিসটি করা হলে অনেক টাকা সাশ্রয় হতো। কিন্তু যাদের দেখার কথা, সেই জেলা প্রশাসন এসবের খোঁজ রাখে না। এভাবে অনেক খাস জমি বেহাত হয়েছে। সরকারি জায়গা থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে খোলা মাঠ করলেও এলাকার তরুণ-যুবারা খেলাধুলা করতে পারতেন।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
বছিলা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মতিন আমাদের সময়কে বলেন, এই মার্কেট থেকে প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা করে ভাড়া আদায় করেন বাবু ও তাঁর লোকজন। মার্কেটটি সম্পূর্ণ অবৈধ। সরকারি জায়গা দখল করে একটা পক্ষ বাণিজ্য করে যাচ্ছে। অথচ দেখার যেন কেউ নেই।
শুধু এই মার্কেটই না, বছিলা প্রধান সড়ক ও পুরনো সড়কের মাঝখানে লম্বা টিলার মতো একটা মার্কেট গড়ে তুলেছেন বাবু। সেখানে অস্থায়ী টং দোকান দিয়ে প্রতিদিন ২০০ টাকা করে চাঁদা তোলা হয় বাবুর নামে। এখানে প্রায় ৫০টির মতো অস্থায়ী দোকান রয়েছে। ২০২১ সালে সড়ক ও জনপথের পক্ষ থেকে একবার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আবার দোকান তুলে চলে বাণিজ্য। এই মার্কেট থেকে মাসে ৩ লাখ টাকা তোলেন বাবু।
সরকারি জায়গা দখল করে মার্কেট করার বিষয়ে জানতে চাইলে মো. বাবু আমাদের সময়কে বলেন, ‘এই জায়গা আমার দাদা খাইত, দাদার দাদা খাইত; বংশপরম্পরায় আমাদের ছিল। কিছুদিন আগে বাবা মারা গেছেন। আমরা কাগজপত্র নাড়াচাড়া করি নাই। খাস খতিয়ানে নাম বাদ গেছে। এ নিয়ে কোর্টে মামলা-মোকদ্দমা চলছে। দুষ্ট শ্রেণির লোকজন খোঁচাখুঁচি করাতে ঝামেলা হয়েছে। এই জায়গার চতুরমুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।