কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির পথ দেখিয়ে পুরস্কার
ক্ষুদ্র পরিসরের কোয়ান্টাম বলবিদ্যা যে বাস্তবে বড় পরিসরেও প্রয়োগযোগ্য, এ প্রমাণ যাঁরা গবেষণা করে দেখিয়েছেন, এঁদের মধ্যে অন্যতম তিন মার্কিন বিজ্ঞানী এবার পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। কোয়ান্টাম বলবিদ্যার শতবর্ষে এ সম্মাননা পেলেন জন ক্লার্ক, মিশেল দ্যভোরে ও জন মার্টিনিস। গতকাল রয়াল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস এ ত্রয়ীর নাম ঘোষণা করে। এঁদের কাজ কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির পথ দেখিয়েছে।
একটা বল। ছুড়ে মারুন কোনো দেয়ালে। বলটা ঠিকরে ফিরে আসবে, দেয়ালের এ পাশেই। এটাই বাস্তব জীবনে আমরা দেখি। কিন্তু বিজ্ঞানীরা ‘আজি হতে শতবর্ষ আগে’ এমন বিদ্যার সন্ধান পেয়েছিলেন, যেখানে কল্পিত আণুবীক্ষণিক বলটা দেয়াল ভেদ করে ওপারে চলে যাবে। কোয়ান্টাম মেকানিকস বা কোয়ান্টাম বলবিদ্যায় এইটার নাম কোয়ান্টাম টানেলিং বা কোয়ান্টাম সুড়ঙ্গ। আজকের যত উন্নত প্রযুক্তি, যেমন ধরুন আপনার হাতের মোবাইল ফোনটা এবং এর মাধ্যমে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগÑ এসব সম্ভব হয়েছে এই কোয়ান্টাম বলবিদ্যার সুবাদে।
কিন্তু মুশকিল হলো, কোয়ান্টাম বলবিদ্যার আচরণগুলো কেবলই অত্যন্ত ক্ষুদ্র স্তরে, যেমন অণু ও উপ-পারমাণবিক কণা, সুপ্রতিষ্ঠিত। বৃহত্তর স্কেলে চিরায়ত পদার্থবিদ্যার তুলনায় এগুলো প্রায়শই অদ্ভুত ও স্বজ্ঞাবিরোধী বলে মনে করা হয়। তবে ১৯৮৫ সালের দিকে ক্লার্ক, দ্যভোরে ও মার্টিনিস পরমপরিবাহী (সুপারকন্ডাক্টর) দিয়ে তৈরি একটি বৈদ্যুতিক বর্তনীতে পরীক্ষা চালান এবং প্রমাণ করেন যে, নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে কোয়ান্টাম বলবিদ্যা দৈনন্দিন বস্তুগুলোকেও প্রভাবিত করতে পারে। চার দশক পরে সেই কাজের স্বীকৃতি পেলেন এই ত্রয়ী। তাদের গবেষণা ডিজিটাল প্রযুক্তির পরবর্তী প্রজন্মের বিকাশের পথ প্রশস্ত করেছে।
আরও পড়ুন:
রোগীর পেটে জীবন্ত মাছি!
নোবেল পুরস্কারের সংবাদ সম্মেলন চলাকালে টেলিফোনে ক্লার্ক বলেন, ‘আমার অনুভূতি হলোÑ আমি পুরোপুরি বিস্মিত। কোনোভাবেই আমার মনে হয়নি, এটি নোবেল পুরস্কারের ভিত্তি হতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘আমি আমার সেল ফোনে কথা বলছি। ধারণা করি, আপনারাও সেল ফোন ব্যবহার করেন। এই সেল ফোন কাজ করার পেছনে একটি মূল কারণ হলো আমাদের এসব কাজ।’
পুরস্কার ঘোষণার সময় নোবেল কমিটির চেয়ার ওলে এরিকসন বলেন, ‘এটি উদযাপন করার মতো বিষয়। শতবর্ষী কোয়ান্টাম মেকানিকস ক্রমাগত নতুন নতুন চমক দিচ্ছে। এটি অত্যন্ত দরকারিও। কারণ কোয়ান্টাম মেকানিকস হলো সব ডিজিটাল প্রযুক্তির ভিত্তি।’
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
কোয়ান্টাম প্রযুক্তি আমাদের চারপাশে বিদ্যমান; কম্পিউটার মাইক্রোচিপের ট্রানজিস্টর এর একটি সাধারণ উদাহরণ। রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এ বছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার কোয়ান্টাম ক্রিপ্টোগ্রাফি, কোয়ান্টাম কম্পিউটার এবং কোয়ান্টাম সেন্সরসহ পরবর্তী প্রজন্মের কোয়ান্টাম প্রযুক্তি বিকাশের সুযোগ এনে দিয়েছে।’
কোয়ান্টাম কম্পিউটার কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নীতিগুলো ব্যবহার করে জটিল গণনা সম্পাদন করে, যা ঐতিহ্যবাহী কম্পিউটারে লক্ষ লক্ষ বছর সময় নিতে পারে।
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
পুরস্কার বিজয়ীরা এক কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা অর্থ সমানভাবে ভাগ করে নেবেন। ১০ ডিসেম্বর স্টকহোমে আড়ম্বর অনুষ্ঠানে তাঁদের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।