এক দিনেই বিলীন ২০ বসতবাড়ি-মসজিদ

রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:২৪
শেয়ার :
এক দিনেই বিলীন ২০ বসতবাড়ি-মসজিদ

অতিবৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পানির তোড়ে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নে এক দিনেই বিলীন হয়েছে ১৬টি বসতবাড়িসহ ৪টি মসজিদ। নদীর তীরবর্তী ৪টি গ্রামে পানি প্রবেশ করায় ৭ শতাধিক পরিবারের প্রায় ৩ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

তীব্র স্রোতের কবলে প্রায় ৫ একর ফসলি জমি নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। এ ছাড়া ভাঙনের মুখে রয়েছে স্থানীয় জাতের আগাম পাকা ধানক্ষেত।

আজ মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, গত তিন দিন ধরে উজানের ভারি ও অতি ভারি বৃষ্টিপাতের প্রভাব এবং তিস্তা ব্যারেজের কপাট খুলে দেওয়ায় তীব্র স্রোতের তোড়ে তিস্তার পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। আকষ্মিকভাবে একসাথে পানি প্রবাহের ফলে জেলার রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের খিতাবখাঁ, চরনাখেন্দা, সরিষাবাড়ি ও গতিয়াসামের মাঝেরচরে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পাশাপাশি গতিয়াসামের মাঝেরচর গ্রামে শুরু হয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। গত তিন দিনে এই গ্রামের প্রায় ৫ একর ফসলি জমিন নদীগর্ভে চলে গেছে। হুমকিতে রয়েছে দুই শতাধিক বাড়ি ও শতশত বিঘা ফসলি জমি।

মাঝেরচর গ্রামের খোরশেদ আলী বলেন, ‘হঠাৎ মাঝরাতে পানি বাড়ায় লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। নদী তীরবর্তী বাড়িগুলো রক্ষায় লোকজন বাড়ি থেকে বের হয়ে ভাঙন কবলিতদের উদ্ধারে নামেন। তবে চারদিকে পানি প্লাবিত হওয়ায় ভাঙন কবলিত বাড়িঘর রাখা খুব কষ্টকর হচ্ছে। ফলে যেখানে উঁচু জমি পাওয়া যাচ্ছে, সেখানেই ঘরবাড়ি রাখছে মানুষ। এ ছাড়া যাদের সামর্থ্য রয়েছে তারা নৌকা ভাড়া করে গ্রাম ছেড়ে অন্য গ্রামে চলে যাচ্ছে।’

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রান্না চড়িয়েছেন মাঝেরচর গ্রামের আছরুদ্দির স্ত্রী রোজিনা। চাল পরিস্কার করে হাঁড়িতে বসিয়ে লাউশাক রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘রাত তিনটা থেকে পানি বাড়ছে। রান্নাবান্না করতে পারি নাই। ভর দুপুরে রান্না বসাইছি। এখন আমাদের চতুর্দিকে কষ্ট। পানির কষ্ট। খাবারের কষ্ট। গ্রামে কোনো আশ্রয়কেন্দ্র নাই। ফলে কোথাও যাবার জায়গা নাই।’

পাশেই চার-পাঁচটি বাড়ির পরেই সাবিনাদের বাড়ি। তাদের শোবার ঘরে পানি প্রবেশ করেছে। দুই সন্তান আর মাকে নিয়ে বিছানায় অবস্থান নিয়েছেন তারা।

সাবিনা জানান, রাত থেকে পানি বাড়ার ফলে ঘরের ভিতর পানি ঢুকেছে। ফলে রান্নার কষ্ট হচ্ছে। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী ও বাচ্চাদের নিয়ে খুব বিপদে আছেন তারা।

এই গ্রামের ওসমানের ছেলে সহিজল বলেন, ‘গতকাল সোমবার থেকে বন্যার মধ্যে অবস্থান করছি। বন্যার পানিতে সব ডুবে গেছে। মানুষের দুর্গতি শুরু হয়েছে। চেয়ারম্যান-মেম্বার কোনো খোঁজখবর নিচ্ছে না।’

রাজারহাটের ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এই ইউনিয়নের ৪টি গ্রামের প্রায় ৭ শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে রয়েছে। একদিকে পানি বাড়ায় বন্যা, অপরদিকে ভাঙনের ফলে ১৬টি বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। এতে পরিবারগুলো অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।’

তিনি জানান, খিতাব খাঁ গ্রামে ২০০, চর নাখেন্দা গ্রামে ২০০’ সরিষাবাড়িতে ৫০ এবং চর গতিয়াসাম মাঝের চরে ২৫০টি বাড়িসহ প্রায় ৭ শতাধিক বাড়ি পানিবন্দী হয়ে পরেছে। এ ছাড়াও একদিনে মাঝেরচরে ভেঙেছে ১৬টি বাড়ি। বাড়িগুলি হচ্ছে, ওসমানের ছেলে সহিজল, সালমানের ছেলে সালাম, হায়দার মুন্সির ছেলে মোস্তাক, তাসলিমের ছেলে বোরহান, নুরুলের ছেলে মোকাদ্দেশ ও কুদ্দুছ, ভুট্টুর ছেলে খোরশেদ, হামিদারের ছেলে অহিজল, শুটকোর ছেলে জয়নাল তেলি, মহুবরের ছেলে জহুরুল, জহুরুলের ছেলে তাইজুল, হাবিলের ছেলে আলমগীর, আনছার তেলির ছেলে অবিরুদ্দিসহ আরও ৩টি পরিবার। এ ছাড়াও এই চরের ৪টি মসজিদ নদীগর্ভে চলে গেছে।

এ বিষয়ে রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আল ইমরান বলেন, ‘সম্প্রতি তিস্তায় পানি প্রবাহ বাড়ায় চর এলাকার বসতিগুলো পানি প্রবেশ করছে। সেখানে আমাদের পর্যাপ্ত নৌকার প্রস্তুতি রয়েছে। এ ছাড়াও ৮ শতাধিক ত্রাণের প্যাকেট মজুদ রয়েছে। যেকোনো সময় পরিস্থিতির অবনতি হলে আমরা সহায়তা করতে পারব। আমরা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি এবং ভাঙনের বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবগত করছি।’