যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে হত্যা, স্বামীসহ ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড

বরগুনা প্রতিনিধি
০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১৮:৫৭
শেয়ার :
যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে হত্যা, স্বামীসহ ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড

বরগুনায় স্ত্রীকে যৌতুকের দাবিতে বিদ্যুতের শক দিয়ে হত্যার দায়ে স্বামী, সতিন ও মেয়ের স্বামীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেন বিচারক। রায় দেওয়ার সময় আসামিরা সবাই আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

আজ মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল আদালতের বিচারক জেলা জজ বেগম লায়লাতুল ফেরদৌস এ রায় দেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন জেলার পাথরঘাটা উপজেলার রায়হানপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মৃত মাজেদ তালুকদারের ছেলে কবির তালুকদার (৫৯), তার দ্বিতীয় স্ত্রী এলাচী বেগম (৫০) ও জামাতা একই সঙ্গে এলাচী বেগমের ছেলে সুজন (৪০)। তিনি একই গ্রামের মোস্তফার ছেলে। মামলার বাদী ছিলেন দণ্ডপ্রাপ্ত প্রধান আসামি ও নিহত মহিমা বেগমের ছেলে হেলাল তালুকদার।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, বাদী হেলাল তালুকদারের মা ভিকটিম মহিমা বেগমকে বাবা কবির তালুকদার ৩০ বছর আগে বিয়ে করে। পরে যৌতুকের দাবিতে প্রায়ই তার মাকে নির্যাতন করত। এ ছাড়াও তার ছোট বোনের শাশুড়ি (বেয়াইন) আসামি এলাচী বেগমের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। বাদীর বোন রেখা বেগম তার বাবা ও তার শাশুড়িকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলায় এবং এর প্রতিবাদ করায় এলাচী বেগম ও জামাতা সুজন তার ওপর নির্যাতন চালানো শুরু করে।

পরে রেখা আত্মহত্যা করেন। রেখার মৃত্যুর ৩ থেকে ৪ বছর পর কবির তালুকদার তার মায়ের অমতে বোনের শাশুড়ি এলাচিকে বিয়ে করেন। তাদের বিয়ে না মানায় ভিকটিম মহিমাকে যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকে এবং নির্যাতন চালাতে থাকে।

একপর্যায়ে বাদীর মা আত্মহত্যা করার জন্য বিষপান করে। পরবর্তীতে চিকিসায় বেঁচে গেলেও পরবর্তীতে আসামিরা তাকে হত্যার জন্য পরিকল্পনা করতে থাকে। ৩নং আসামি বিদ্যুতের মিস্ত্রি। তিনি প্রস্তাব দেন শক দিয়ে হত্যার। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন ২০১৯ সালের ২৫ অক্টোবর (শুক্রবার) সকালে আসামি কবির ছেলে হেলালকে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে দেয়।

বাদী মামলায় উল্লেখ করেন, তিনি শ্বশুরবাড়ি চলে যাওয়ার পর ওই দিন দুপুর ১২টা থেকে ১টার মধ্যে তার মাকে তার বাবার বাড়ির সম্পতি বিক্রি করার জন্য চাপ দিতে থাকে। এতে তার মা রাজী না হওয়ায় বাবা কবির, এলাচী ও সুজনের সহয়তায় মহিমাকে ডান হাতের ৩টি আঙুলে, পিঠে ও বুকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যা করে।

মামলার রায় শুনে বাদী হেলাল তালুকদার বলেন, ‘রায়ে আমি আদালতের প্রতি সন্তুষ্ট। আমার মায়ের হত্যাকারীদের ফাঁসি হওয়ায় আমি আইনকে শ্রদ্ধা জানাই।’

মামলা পরিচালনাকারী রাস্ট্র পক্ষের আইনজীবী নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর হোসনেয়ারা শিপু জানান, আমি রায়ে বিজ্ঞ আদালতের প্রতি সন্তুষ্ট। এই রায়ের মাধ্যমে সমাজে অপরাধ কমে আসবে।’

মামলায় প্রধান আসামি কবির তালুকদারের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট তরিকুল ইসলাম তরু ফরাজী। আসাসি এলাচি বেগন ও সুজনের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট ইমরান হোসেন।