গুইমারায় নিহতদের স্মরণে শাহবাগে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন

অনলাইন ডেস্ক
০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১৩:৩২
শেয়ার :
গুইমারায় নিহতদের স্মরণে শাহবাগে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন

খাগড়াছড়ির গুইমারায় গুলিবর্ষণে নিহতদের স্মরণে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় এ কর্মসূচির আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন। এ সময় নিহতদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন, যিনি এ সময় সংগঠনের পক্ষ থেকে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।

ঘোষণাপত্রে জাকির হোসেন বলেন, ‘খাগড়াছড়িতে একজন মারমা কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষণে তিনজন নিহত এবং অন্তত ৩০ জন আদিবাসী আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে-আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রধান উপদেষ্টার দ্রুত হস্তক্ষেপ দাবি করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার স্থায়ী সমাধান পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্যেই নিহিত। এজন্য সব রাজনৈতিক পক্ষ ও নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণে একটি জাতীয় সংলাপ জরুরি।’

ঘোষণাপত্রে আরও দাবি করা হয়, সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের নিরপেক্ষ তদন্তে নাগরিক প্রতিনিধি যুক্ত করে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন, নিহত পরিবারের জন্য অন্তত ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা, পাহাড়ে সামরিকীকরণ নীতি পরিহার করে সিভিল প্রশাসনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সমাধান এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সময়সূচিভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা। 

অধ্যাপক মাহমুদুল সুমন বলেন, ‘নাগরিক হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের ধর্ষণের মতো একটি নিকৃষ্ট অপরাধের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার অধিকার আছে। আর এ ধরনের আন্দোলনকে বিচ্ছিন্নতাবাদী তকমা দিয়ে দেখার কোনো সুযোগ নেই। এ আয়োজনে পাহাড়ি মানুষের অধিকারের জন্য যে দাবিগুলো উত্থাপন করা হয়েছে তার সঙ্গে আমি সংহতি জানাচ্ছি।’ 

ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘গুইমারায় যারা নিহত হয়েছেন তাদেরকে আমরা আর ফিরে পাব না। কিন্তু পাহাড়ের আদিবাসীদের যে ন্যায্যতার লড়াই যে লড়াইয়ে তারা স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা অনতিবিলম্বে এ ঘটনার তদন্ত দাবি করি এবং পাহাড়ে সমস্যা সমাধানে সরকারের আশু পদক্ষেপ দাবি করছি।’ 

অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. খায়রুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র আদিবাসীদের সঙ্গে অস্বীকারের রাজনীতিই করে যাচ্ছে। সেই ১৯৭১ সালের পর থেকে আদিবাসীদের ওপর গণহত্যা সংঘটিত হচ্ছে। এসবের কোনো বিচার নেই। আমরা পাহাড়ের আদিবাসীদের সংকট নিরসনে অনতিবিলম্বে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।’ 

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- এএলআরডি নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. মুশতাক হোসেন, বাসদের কেন্দ্রীয় সদস্য খালেকুজ্জামান লিপন, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দীন শুভ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা। 

এতে আরও সংহতি জানায়- সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়ন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, বাংলা ছাত্র লীগ (বিসিএল), আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, কাপেং ফাউন্ডেশন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, কাপেং ফাউন্ডেশন।