মা-বাবা, পরিবার নিয়ে দেখার মতো সিনেমা ‘সাবা’
মেহজাবীন চৌধুরী। টিভি নাটক, ওয়েব সিরিজের জনপ্রিয় অভিনেত্রী। অভিনয় করেছেন সিনেমায়। ২৬ সেপ্টেম্বর মুক্তি পায় তার প্রথম অভিনীত সিনেমা ‘সাবা’। এই সিনেমা ও বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- ফয়সাল আহমেদ
সাবা আপনার প্রথম অভিনীত সিনেমা হলেও মুক্তির দিক থেকে দ্বিতীয়। গত বছর মুক্তি পাওয়া শঙ্খ দাশগুপ্তর ‘প্রিয় মালতী’র জন্যও প্রশংসিত ও পুরস্কৃত হয়েছিলেন। এই যে প্রশংসা ও পুরস্কার, এটা কি নতুন কাজ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে?
ভালো কাজ হচ্ছে এক ধরনের ক্ষুধা। আপনার ক্ষুধা লাগল- আপনি কি যা ইচ্ছা, যত ইচ্ছা খেতে পারবেন? পারবেন না, আর পারলেও সেটা ঠিক না। তেমনি আমার কাজ করার ইচ্ছা আছে, এর মানে কিন্তু এই না, যে কাজ সামনে আসবে সেই কাজই করা লগবে। যদি সেটা আমি করি দর্শক আমার ওপর বিরক্ত হয়ে যাবেন। আমি কখনই দর্শকের বিরক্তির কারণ হতে চাইনি। আগামীতেও চাইব না। এর আগে ‘প্রিয় মালতী’র জন্য প্রশংসা পেয়েছিলাম, ‘সাবা’র জন্য এখন পাচ্ছি। দুটি সিনেমা কাছাকাছি সময়ে করা। যদিও একটির সঙ্গে আরেকটির কোনো মিল নেই। আমি কখনই কাছাকাছি গল্পের সিনেমায় অভিনয় করব না। আমি কখনই এমন কোনো চরিত্র বেছে নিতে চাই না, যার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত জীবনের কোনো মিল আছে। কারণ যদি চরিত্রের সঙ্গে আমার মিল থেকে যায়, তাহলে পর্দায় মানুষ আমাকে দেখবে, সেই চরিত্রকে নয়। আমি চাই দর্শক কেবল চরিত্রটিকেই দেখুন। তাই ভবিষ্যতেও আমি এমন চরিত্রেই কাজ করতে চাই, যেগুলোর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত জীবনের কোনো সাদৃশ্য নেই। আর এ কারণে প্রশংসা বা পুরস্কর কোনোটাই আমার গল্প বাছাইয়ে বাধা হবে না বরং ভালো কাজ করতে অনুপ্রেরণা জোগাবে।
সিনেমা করার পর একটা প্রশ্ন মনে হয় খুব মিস করছেন- সিনেমা কেন করছেন না?
আরও পড়ুন:
ওটিটি প্ল্যাটফরম আমার জন্য বেশ লাকি
হুম। এখন আর এমন প্রশ্ন কেউ করছে না। অবশ্য সিনেমা করার আগে প্রশ্নটা স্বাভাবিকই ছিল। বিনোদনের নানা মাধ্যমে কাজ করছি প্রায় ১৬ বছর। শুধু সিনেমাটা করা হচ্ছিল না। যেখানেই যেতাম, প্রশ্নের মুখোমুখি হতাম, কেন আমি সিনেমা করছি না? না করতে করতেও কিন্তু দুটি সিনেমা করে ফেলেছি। তবে আমি সিনেমা করার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ভেবেছিলাম, মনের মতো করেই প্রথম সিনেমাটি করতে চাই; যে সিনেমা নিজের কাছেও স্মৃতি হয়ে থাকবে, দর্শকও সারাজীবন মনে রাখবেন; যে ছবির মান, গল্পের গভীরতা, সবই যেন দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
প্রেক্ষাগৃহে আসার পর কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
আমি কিন্তু ছবিটি মুক্তির আগে একটি কথাই বলেছি- এটি একটি বিশেষ সিনেমা, আপনার মাকে সঙ্গে নিয়ে আসুন, এ গল্প তার জন্যও। এটা এমন একটা গল্প, যেটা মা-বাবা, পরিবার নিয়ে দেখার মতো সিনেমা। আমি সাজেস্ট করব, মা, বাবাকে সঙ্গে নিয়ে হলে গিয়ে দেখুন। অভিজ্ঞতাটা অনেক গভীর হবে। গল্পটি শোনার সময়ই এক ধরনের টান অনুভব করেছিলাম। এর আবেগ ও গভীরতা আমাকে আকৃষ্ট করেছিল, আর সে জন্যই কাজটি করার সিদ্ধান্ত নিই। এই ছবির ক্ষেত্রে সবচেয়ে কঠিন ছিল সাবা এবং তার মায়ের সম্পর্কটিকে বাস্তবভাবে ফুটিয়ে তোলা। কারণ তাদের সম্পর্কটা একদম সাধারণ মা-মেয়ের মতো নয়, বরং অনেক গভীর, জটিল এবং আবেগপূর্ণ। ছবিটির গল্প শোনার পর থেকে নিজেই বুঝতে পারছিলাম, এটাই হবে আমার প্রথম ছবি। সেভাবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। দীর্ঘ অপেক্ষার পর প্রথম ছবি হিসেবে এটি করার সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল না, সেটির প্রমাণ এখন পাচ্ছি।
আরও পড়ুন:
ফের জুটি হলেন মম-শ্যামল
আন্তর্জাতিক উৎসবগুলোতে ‘সাবা’ প্রদর্শনের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
এখন যখন আমার দেশে আমার সিনেমা হলে আমার লোকরা বসে সিনেমাটি দেখে প্রশংসা করছেন, এই অনুভূতি কিন্তু একদম নিজের। আবার ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষ যখন ছবির শেষে চোখের পানি আর করতালিতে সাড়া দিয়েছেন, তখন মনে হয়েছিল আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। সেই মুহূর্তটা আমি কোনো দিন ভুলব না। আমার জীবনের সেরা স্মৃতি হয়ে থাকবে। আসলে আবেগের তো কোনো ভাষা নেই। সিনেমায় অভিনয় করে সত্যিই মনে হয়েছে সিনেমা সব সীমান্ত ভেঙে মানুষকে এক করে দেয়।
বাস্তব জীবনের মেহজাবীন এক দৃঢ় কণ্ঠস্বর। এর আগে কৃত্রিম প্রযুক্তির অপব্যবহার ও ডিপফেইকের মতো বিষয় নিয়ে সচেতনতা তৈরি করেছিলেন। এবার সরাসরি সামাজিক মাধ্যমের অশালীন মন্তব্যের বিরুদ্ধে উচ্চারণ করলেন।
আরও পড়ুন:
মারা গেলেন পরীমনির নানা
অন্যায়ের প্রতিবাদ প্রতিটি মানুষের যার যার জায়গা থেকেই করা উচিত। ভালোকে ভালো, মন্দকে মন্দ বলার শিক্ষাটা আমাদের পরিবার থেকেই শিশুদের শিখিয়ে দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। অনেকেই মনে করেন, কারও পোস্টে বাজে মন্তব্য করা, স্ল্যাং ব্যবহার করা, অথবা ভুয়া প্রোফাইল দিয়ে কথা বলা মনেই সে বেশ সাহসিকতার কাজ করে ফেলছে। বরং এটা তার নিচ মানসিকতাকে প্রকাশ করে। আরেকজনের কাজ আপনার ভালো না-ই লাগতে পারে। আপনি এগিয়ে যান। তবে সেটা যদি অন্যায় কাজ হয় তাহলে প্রতিবাদ করুন। সেই প্রতিবাদটাও করা উচিত মার্জিত শব্দে।