সরবরাহে আগ্রহী ৯ প্রতিষ্ঠান দামে আপত্তি শিল্পমালিকদের

লুৎফর রহমান কাকন
০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
সরবরাহে আগ্রহী ৯ প্রতিষ্ঠান দামে আপত্তি শিল্পমালিকদের

দেশের মূল ভূখণ্ডে গ্যাসের সংকট চলছে। তবে দ্বীপজেলা ভোলার গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে যথেষ্ট মজুদ রয়েছে। মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে পাইপলাইন না থাকায় সেই গ্যাস কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ফলে সরকার পাইপলাইন নির্মাণ ও ভোলা থেকে এলএনজি করে গ্যাস এনে দেশের শিল্পাঞ্চলগুলোতে সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে। এ বিষয়ে শিল্পমালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছে। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ৯টি প্রতিষ্ঠান ভোলা থেকে এলএনজি করে গ্যাস এনে শিল্পকারখানায় সরবরাহ করতে আগ্রহী। তবে যে দামে সরবরাহ করতে চায়, তাতে আপত্তি রয়েছে শিল্পমালিকদের। তারা কম দামে এলএনজি করে এনে গ্যাসের সরবরাহ চায়।

পেট্রোবাংলার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীদের মতামত নিতে তাঁদের সঙ্গে বসেছিলাম। ভোলা থেকে এলএনজি করে গ্যাস এনে সেটা রিগ্যাসিফিকেশন করে কারখানায় সরবরাহ করতে প্রাথমিক খরচ নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সেখানে দামের ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের আপত্তি রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রতি ঘনমিটার ৪৭ থেকে ৫০ টাকার মতো খরচ পড়বে। তবে ৩৫ থেকে ৪০ টাকার বেশি দাম দিতে আগ্রহী নন ব্যবসায়ীরা।’

তিনি আরও জানান, পেট্রোবাংলা থেকে ১৬০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন ও মাইনস) প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, আগ্রহী ৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চারটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এগুলো হচ্ছে গ্যাজপ্রম, সিসিডিসি, সিএমসিসহম এবং একটি সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। তবে ভোলা থেকে এলএনজি আকারে গ্যাস আনতে কী পরিমাণ খরচ পড়বে তার অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ এখনও জমা দেয়নি কোম্পানিগুলো। সিএনজি আকারে আনতে এখন যেমন খরচ হচ্ছে, প্রায় কাছাকাছি খরচ হতে পারে।’

ভোলা থেকে সিএনজি আকারে গ্যাস এনে শিল্পকারখানায় সরবরাহ করছে দেশীয় কোম্পানি ইন্ট্রাকো। প্রতি ঘনফুটের খরচ ৪৭ টাকা।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ভোলার উদ্বৃত্ত গ্যাস এলএনজি আকারে আনার কথা জানায়। ২০২৬ সালের শুরুতে আনার জন্য রোডম্যাপ চূড়ান্ত করা হয়। এ জন্য কয়েক দফায় ফিল্ড ভিজিটসহ অগ্রাধিকার দিয়ে নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হয়। তবে কাজের গতি ধীর।

এলএনজি আকারে আনতে গেলে কমপক্ষে ১৫ বছরের জন্য চুক্তি করতে হবে সরবরাহকারীর সঙ্গে। তবে এভাবে আনার মধ্যে নানা ঝুঁকি রয়েছে। ফলে সরকার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে পাইপলাইন স্থাপনের ব্যাপারে কাজ করছে। বরিশাল-আমিরবাজার পাইপলাইন স্থাপনের জন্য গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ (জিটিসিএল) স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এরই মধ্যে চুক্তি করেছে।

ভোলা থেকে সিএনজি আকারে ৫ মিলিয়ন গ্যাস সরবরাহের একটি চুক্তি রয়েছে। এতে প্রতি ঘনমিটারে পরিবহন খরচ ৩০.৬০ টাকাসহ গ্যাসের দাম দাঁড়াচ্ছে ৪৭.৬০ টাকা। যা পাইপলাইনে সরবরাহ করা গ্যাসের তুলনায় দেড়গুণের মতো। ৫ মিলিয়নের চুক্তি থাকলেও গড়ে ২ মিলিয়নও জোগান দিতে ব্যর্থ হয়েছে দেশীয় কোম্পানি ইন্ট্রাকো। এলএনজি বেশি পরিমাণে আনা গেলেও প্রথমে ভোলায় এলএনজি করতে হবে, এর পর নারায়ণগঞ্জে (প্রস্তাবিত) এনে রিগ্যাসিফিকেশন করতে হবে।

এসব বিবেচনা করে পাইপলাইনের দিকে ঝুঁকে পড়ে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ। আগের সরকারের পরিকল্পিত ভোলা-বরিশাল-খুলনার রুট পরিবর্তন করে ভোলা-বরিশাল-ঢাকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। সংশোধিত রুটের প্রাক-সমীক্ষা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। ভোলা-বরিশাল সমীক্ষা আগে থেকে করা থাকলেও নতুন করে বরিশাল-ঢাকার প্রাক-সমীক্ষার জন্য সম্প্রতি ঠিকাদার চূড়ান্ত করা হয়েছে।

এদিকে মজুদ কমে আসায় প্রতিদিনই কমছে দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলোর উৎপাদন। এক সময় দৈনিক ২৮শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন হলেও গত ৩ অক্টোবর এক হাজার ৭৪৪ মিলিয়নে নেমে এসেছে। এর মধ্যে বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ড থেকেই জোগান এসেছে অর্ধেকের বেশি। আর সেখানেই সবচেয়ে বড় ধস দেখা যাচ্ছে। ফিল্ডটিতে ৩ অক্টোবর উৎপাদন হয়েছে ৮৬৯ মিলিয়ন ঘনফুট। এখন গ্যাস সংকট দ্রুত সমাধানে সরকারের সামনে দুটি পথ খোলা আছে- ভোলা থেকে সিএনজি বা এলএনজি করে আনা; অথবা বিদেশ থেকে বেশি করে এলএনজি আমদানি করা। তবে বেশি করে আমদানির পর্যাপ্ত অবকাঠামো নেই। আর দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের মধ্যে রয়েছে ভোলা-বরিশাল-ঢাকা পাইপলাইন বাস্তবায়ন, এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, তেল-গ্যাস অনুসন্ধান জোরদার করা।

ভোলায় ২টি গ্যাসফিল্ড আবিষ্কৃত হয়েছে। ৯টি কূপ খনন করা হয়েছে, যেগুলোর দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ১৯০ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু উত্তোলন করা হয়েছে ৭২ দশমিক ৬ মিলিয়ন ঘনফুট (৩ অক্টোবর)। অন্যদিকে পাইপলাইন না থাকায় জাতীয় গ্রিডে দেওয়া যাচ্ছে না। ভোলায় আরও ১৫টি কূপ খননের জন্য কাজ করছে পেট্রোবাংলা। পাইপলাইন বাস্তবায়ন ও প্রস্তাবিত কূপগুলো খনন শেষ করলে সেখান থেকে ৩০০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।