তিস্তাপাড়ে বন্যা, লালমনিরহাটে লাখো মানুষ পানিবন্দী

লালমনিরহাট প্রতিনিধি
০৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:৪৭
শেয়ার :
তিস্তাপাড়ে বন্যা, লালমনিরহাটে লাখো মানুষ পানিবন্দী

তিনদিনের ভারী বর্ষণ আর উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল রবিবার রাতে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। রাতভর পানি বৃদ্ধিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে তিস্তাপাড়ে। ব্যারাজ রক্ষায় ফ্লাড বাইপাস কেটে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণে আনে লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড। ফলে ভয়াবহ বন্যায় পানিবন্দী হয়ে পড়েন লালমনিরহাটের লাখো মানুষ।

আজ সোমবার সকাল ৯টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ১২ মিটার, যা বিপৎসীমার (৫২ দশমিক ১৫ মিটার) ৩ সেন্টিমিটার নিচে।

স্থানীয়রা জানান, টানা বৃষ্টিতে নদীর পানি বাড়তে থাকায় রাতভর তিস্তাপাড়ে রেড অ্যালার্ট জারি করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ফ্লাড বাইপাস খোলার পর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে, প্লাবিত হয় ঘরবাড়ি ও ফসলের জমি। ফলে লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যার কবলে পড়ে।

লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলা—পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার বহু চর ও নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। বিশেষ করে হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, সানিয়াজান, সিঙ্গামারি, কালীগঞ্জের ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারীর মহিষখোচা, বাহাদুরপাড়া ও সদর উপজেলার ফলিমারী, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুরসহ বহু ইউনিয়নে ঘরবাড়ি, রাস্তা-ঘাট ও ফসলের মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে।

পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে লাখো মানুষ। টিউবওয়েল ও টয়লেট ডুবে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নারীরা। গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খামারিরা—অনেকে উঁচু স্থানে বা তাবুর নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। মাচা তুলে চলছে রান্না।

আদিতমারীর সোলেদি স্পার বাঁধ–২ এলাকায় পানি নিচ দিয়ে সুরঙ্গ হয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, এতে বাঁধ ধসে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। দোয়ানী–গড্ডিমারী সড়ক প্লাবিত হয়ে নতুন এলাকাগুলোও পানির নিচে চলে গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা সালাম মিয়া বলেন, ‘বাড়ির উঠানে কোমর পানি। রাতে ঘুমাতে পারিনি, শিশুকে কোলে নিয়ে রাত কাটাতে হয়েছে।’

গোবর্দ্ধনের শরিফুল ইসলাম জানান, পানি হুহু করে আসছে। ধানক্ষেত, পুকুর সব ডুবে গেছে।

ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টের ইনচার্জ নুরুল ইসলাম জানান, রাত ১২টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল, সকাল ৯টায় তা নিচে নেমেছে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনিল কুমার বলেন, ‘উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টির কারণে পানি হঠাৎ বেড়েছিল। এখন তা ধীরে ধীরে নামছে, তবে নিচু এলাকায় পানি থাকতে সময় লাগবে।’

জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার জানান, পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় বন্যার ঝুঁকি রয়েছে। প্রশাসন জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত