নিরাপদ হোক শিশুর জীবন
আজ বিশ্ব শিশু অধিকার দিবস। অথচ পৃথিবীর নানা প্রান্তে শিশুরা আজও নিরাপদ নয়। কেউ ক্ষুধায় কাতর, কেউ অবহেলায় বড় হচ্ছে, কেউবা যুদ্ধের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। গাজায় অবিরাম ইসরায়েলি হামলায় প্রতিদিন মরছে অসংখ্য শিশুÑ যাদের জীবন এখন ধ্বংসস্তূপের ধুলায় চাপা। তাদের কান্না যেন গোটা মানবতার প্রতি এক বিশাল প্রশ্ন। যুদ্ধ আর সহিংসতার বলি হচ্ছে নিষ্পাপ শিশুরা। গাজায় ইসরায়েল গত দুই বছরে হত্যা করেছে ৬৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে; এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা ২০ হাজারের উপর। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধেরও বলি হচ্ছে শিশুরা। অনেক ইউক্রেনি শিশুকে অপহরণের অভিযোগ রয়েছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। ধর্ষণ, গুম, অপহরণ, হত্যা আর নির্যাতনের এমন প্রেক্ষাপটে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিশু অধিকার দিবস।
বাংলাদেশে প্রতিবছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার বিশ্ব শিশু দিবস পালন করা হয় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে। শিশুর অধিকার, সুরক্ষা এবং শিশুর উন্নয়ন ও বিকাশে সবাইকে উদ্যোগী ও সচেতন করতে গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত সাত দিনব্যাপী শিশু অধিকার সপ্তাহ পালন করা হয়। এ বছর শিশু দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘শিশুর কথা বলব আজ, শিশুর জন্য করব কাজ।’
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে আজ দেশব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমির উদ্যোগে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস. মুরশিদ। সভাপতিত্ব করবেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন ইউনিসেফের প্রতিনিধি ও শিশু প্রতিনিধিরা। এ বছর শিশু দিবসে গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ শিশুদের পরিবারকে সম্মাননা জানানো হবে। অনুষ্ঠানে তাদের অনুভূতি জানাবেন সন্তানহারা বাবা-মায়েরা।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
১৮৫৭ সালে শিশু দিবসের সুচনা হয়েছিল যক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস রাজ্যের চেলসিয়ার ইউনিভার্সাল চার্চের যাজকের উদ্যোগে। তিনি জুন মাসের দ্বিতীয় রবিবার শিশুদের যত্নের জন্য দিনটি বিশেষভাবে নির্ধারণ করেছিলেন। তিনি দিবসটির নাম দিয়েছিলেন রোজ ডে বা গোলাপের দিন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে দিবস পালনের কৃতিত্ব তুরস্কের। ১৯২০ সাল থেকে তুরস্ক ২৩ এপ্রিল শিশু দিবস পালন করত। এরপর আন্তর্জাতিক শিশু দিবস পালনের ঘোষণা আসে ১৯২৫ সালে জেনেভায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব সম্মেলনে। ১৯৪৯ সালের ৪ নভেম্বর রাশিয়ার মস্কোতে অনুষ্ঠিত উইমেন্স ইন্টারন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফেডারেশনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ১ জুনকে বিশ্ব শিশু দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৫০ সাল থেকে
অনেকগুলো কমিউনিস্ট ও সাম্যবাদী দেশে ১ জুন থেকে শিশু দিবস পালন শুরু হয়ে যায়। ১৯৫৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভারত ও উরুগুয়ের উদ্যোগে একটি প্রস্তাব পাস হয়, যাতে সব দেশকে শিশু দিবস পালনে উৎসাহিত করা হয়। ১৯৫৯ সালের ২০ নভেম্বর জাতিসংঘের শিশু অধিকার ঘোষণা গৃহীত হয়। ২০ নভেম্বর থেকে বিশ্ব শিশু দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই থেকে বিশ্ব শিশু দিবস পালন করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
বাংলাদেশে কোমলমতি শিশুরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়। অনেক ক্ষেত্রে শিশু অবহেলা বা নির্যাতনের শিকার হয় ঘর থেকেই। লেখাপড়া, পুষ্টিকর খাবার, শিষ্টাচার, সুস্থ বিনোদনের ঘাটতি দেখা দিলে শিশুর বিকাশে বাধা পড়ে। ছোট ছোট কারণে শিশুকে প্রহার করা, অতিরিক্ত বকাবকি করা, এমনকি পারিবারিক শত্রুতার জেরে শিশুহত্যা, অপহরণ ও ধর্ষণের মতো নৃশংস ঘটনা অহরহ ঘটছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও শিশুরা নানা রকম বুলিং এবং শারীরিক ও অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া যুদ্ধের কারণে শিশুদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়, তাদের শারীরিক ও মানসিক বিপর্যয় ঘটে, এর নেতিবাচক প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হয়ে থাকে।
আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ। তাই শিশুর জন্য সুন্দর পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে এবং শিশুর অধিকার সমুন্নত রাখতে শিশুদের প্রতি যত্নবান হতে হবে। শিশুর অধিকার সনদের আলোকে শিশুদের জন্য এবং শিশুদের নিয়ে বিশ্বব্যাপী ইউনিসেফ বিশ্ব শিশু দিবস পালন করে। এই দিনে ইউনিসেফ শিশুদের সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলো সমাধানে সমর্থন আদায় করে, শিশু অধিকার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ায় এবং প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ করে। এ কথা অনস্বীকার্য, শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশে নিরাপদ ও আনন্দময় করতে হবে শিশুর বেড়ে ওঠা। তবেই আগামী দিনে দেশ গঠনে তারা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবে।